শুরুর কথা
বর্তমান সময়ে সমাজের প্রায় সর্বক্ষেত্রে মহিলাদের উজ্জ্বল উপস্থিতি। চার দেওয়ালের গণ্ডি ছাড়িয়ে আজ সমাজের সর্বক্ষেত্রে পুরুষদের সঙ্গে সমানতালে পাল্লা দিচ্ছেন মহিলারা। খেলার মাঠও তার ব্যতিক্রম নয়। খেলার কথা বললে অবশ্যই করে এসে যায় কুস্তির কথা। কুস্তি ভারতের একটি প্রাচীন এবং জনপ্রিয় খেলা। পুরুষাধিপত্যের এই খেলায় বর্তমানে মহিলাদের সাফল্য তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো। রাজ্য, দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে দেশকে গর্বিত করে চলেছেন তাঁরা। ভারতে মহিলা কুস্তিগিরদের কথা বললেই ‘ফোগট সিস্টার্স’দের কথা বলতেই হয়। একই পরিবারের ছয় বোন, ছয় কুস্তিগির। দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কুস্তির বিজয়কেতন উড়িয়ে অনন্য নজির স্থাপনের পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়নের পথ মজবুত করেছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন-ব্রাত্য করে রাখা যায়নি তাঁকে
কুস্তিতে ভারতীয় মহিলা
প্রসঙ্গত বলার, কুস্তিতে ভারতীয় মহিলার অংশগ্রহণের ইতিহাস প্রায় শতবর্ষ-প্রাচীন। ভারতের প্রথম মহিলা কুস্তিগির হামিদা বানু। রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে হয়েও কুস্তিতে আসায় তাঁকে অনেক কটাক্ষ, অপমান, লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে। সব উপেক্ষা করে তিনি নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে গেছেন। অনেক বাঘা-বাঘা পুরুষ প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করেছেন তিনি। তার জন্য প্রশংসার জায়গায় কখনও গালিগালাজ শুনতে হয়ছে, কখনও আবার তার ওপর আক্রমণ হয়েছে। নারী হওয়ায়, অনেক ক্ষেত্রে পুরুষ প্রতিযোগী তাঁর সঙ্গে লড়াই করতে অস্বীকার করেছেন। এতসব প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও ১৯৩০-৫০, দীর্ঘ দুই দশক ধরে কুস্তিতে নিজের কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন।
মহাবীর সিং ফোগট
হামিদা বানুর মতো ফোগট-বোনেদের পথচলাও মসৃণ ছিল না। হামিদা বানুর এগিয়ে যাওয়ার পেছনে ছিল তাঁর পালোয়ান পিতার অনুপ্রেরণা ও তালিম। ঠিক তেমনি করে ফোগট-বোনেদের কুস্তির জয়যাত্রার পেছনে যাঁর মুখ্য অবদান তিনি তিনি হলেন দ্রোণাচার্য মহাবীর সিং ফোগট। তাঁর পিতা মান সিং ছিলেন নামকরা পালোয়ান। মহাবীর সিংও ছিলেন দক্ষ কুস্তিগির। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তাঁর সাফল্যের স্বপ্ন অধরা থেকে যায়। ২০০০ সালের একটি ঘটনা তাঁর সেই অধরা স্বপ্ন পূরণে আশার আলো দেখায়। সেই বছর অলিম্পিকে ভারোত্তোলনে ব্রোঞ্জ পদক জেতেন কর্ণম মালেশ্বরী। কর্ণমের সাফল্য মহাবীরের ভাবনাচিন্তাকে তীব্রভাবে নাড়িয়ে দেয়। তিনি ভাবেন কর্ণম যদি পারে, তাহলে তাঁর মেয়েরাও পারবে না কেন? তাঁর গুরু চাংগদি রামও তাঁকে অনুপ্রাণিত করেন মেয়েদের কুস্তি শেখানোর ব্যাপারে। মহাবীর সিংও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন মেয়েদের কুস্তিগির বানানোর ব্যাপারে।
প্রসঙ্গত বলার, ফোগট সিস্টার্স হলেন ছয় কুস্তিগির বোন। গীতা, ববিতা, ঋতু, সঙ্গীতা, প্রিয়াংকা ও বিনেশ। এঁদের মধ্যে প্রথম চারজন মহাবীরের মেয়ে। শেষ দু’জন তাঁর ভাই রাজপালের কন্যা। মেয়েদের কমবয়সে রাজপাল মারা গেলে মহাবীর সিং তাঁদেরও নিজের মেয়ের মতো কুস্তির তালিম দেন।
মহাবীরের এই সিদ্ধান্ত সহজ ছিল না। বিলালি গ্রাম ছিল রক্ষণশীল। সেই সমাজের মেয়েরা শর্টস পরে, চুল ছোট করে জনসমক্ষে কুস্তি লড়বে এমনটা ছিল অকল্পনীয়। প্রথম বাধা আসে পরিবারের পক্ষ থেকে। মহাবীরের স্ত্রী দয়া কাউর চাননি মেয়েরা কুস্তি শিখুক। মহাবীর তাঁর কথার প্রতিবাদ করে বলেন, ‘একজন মহিলা যদি ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন তাহলে একজন কুস্তিগির হতে পারবে না কেন?’ গ্রামের মানুষদের থেকেও বাধা আসে। অনেক সমালোচনা, কটাক্ষের মুখে পড়তে হয় তাঁকে। কিন্তু দৃঢ়চেতা মহাবীর নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। তারই ফলশ্রুতিতে ভারতীয় কুস্তির ইতিহাসে তৈরি হয়েছে এক উজ্জ্বল আলোক অধ্যায়।
আরও পড়ুন-সঞ্জয় রাইয়ের ফাঁসির দাবিতে পথে নামল বাংলা পক্ষ
গীতা ফোগট
ফোগট বোনেদের মধ্যে সবার বড় হলেন গীতা ফোগট। ১৯৮৮ সালের ১৫ ডিসেম্বর জন্ম। বাবার কঠোর তালিমে তিনি নিজেকে একটু একটু করে গড়ে তোলেন। দেশের মাটিতে সাফল্যের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও তিনি নিজের কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। কমনওয়েলথ কুস্তি চ্যাম্পিয়নশিপে যথাক্রমে দুটি স্বর্ণপদক ও একটি রৌপ্যপদক রয়েছে তাঁর। ২০১০ সালে কমনওয়েলথ গেমসে স্বর্ণপদক জিতে প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে এই কৃতিত্বের অধিকারী হন। পাশাপাশি প্রথম ভারতীয় মহিলা কুস্তিগির হিসেবে তিনি অলিম্পিকে অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। ওই বছরই বিশ্ব কুস্তি চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ পদক পান তিনি। এশিয়ান কুস্তি চ্যাম্পিয়নশিপেও দুটি ব্রোঞ্জ পদক রয়েছে তাঁর। ২০১২ সালে ভারত সরকার তাঁকে অর্জুন পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করেন।
ববিতা ফোগট
ববিতার জন্ম ১৯৮৯ সালের ২০ নভেম্বর। দিদির মতো তিনিও ছিলেন কুস্তিতে সমান পারদর্শী। দেশের হয়ে অসংখ্য পদক তিনি জিতেছেন। কমনওয়েলথ রেসলিং চ্যাম্পিয়নশিপে দুটি স্বর্ণপদক রয়েছে তাঁর। ২০১০ ও ২০১৪-এর কমনওয়েলথ গেমসে তিনি যথাক্রমে রৌপ্য ও স্বর্ণপদক জেতেন। বিশ্ব কুস্তি চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ পদকের পাশাপাশি এশিয়ান গেমসেও ব্রোঞ্জ পদক জেতেন তিনি। ২০১৬ সালের রিও অলিম্পিকে সুযোগ পেলেও প্রথম রাউন্ডে পরাজিত হয়ে তিনি বিদায় নেন।
ঋতু ফোগট
মহাবীরের তৃতীয় কন্যা ঋতুর জন্ম ১৯৯৪-এর ২ মে। দিদিদের মতো তিনিও দেশ-বিদেশে অনেক সাফল্যের নজির গড়েছেন। ২০১৬ সালের কমনওয়েলথ রেসলিং চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণপদক জেতেন তিনি। পরের বছর এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে লাভ করেন ব্রোঞ্জপদক। ওই বছরই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে রৌপ্যপদক জেতেন তিনি। কুস্তির পাশাপাশি তিনি মিক্সড মার্শাল আর্টসেও দক্ষ ছিলেন। এই ক্ষেত্রে সাতটি পদক রয়েছে তাঁর।
সঙ্গীতা ফোগট
মহাবীরের ছোট মেয়ে সঙ্গীতার জন্ম ১৯৯৮-এর ৫ মার্চ। বাকি বোনেদের মতো সফল না হলেও তিনিও ছিলেন একজন জাতীয় মানের কুস্তিগির। জাতীয় কুস্তি চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণপদক জেতেন তিনি। বুদাপেস্টে আয়োজিত হাঙ্গেরি র্যাঙ্কিং সিরিজ রেসলিং ইভেন্টে ব্রোঞ্জপদক জিতেছেন তিনি। বিখ্যাত কুস্তিগির বজরং পুনিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর।
প্রিয়াংকা ফোগট
মহাবীর সিং-এর ভাই রাজপালের জ্যেষ্ঠা কন্যা প্রিয়াংকার জন্ম ১৯৯৩-এর ১২ মে। তিনিও ছিলেন একজন দক্ষ কুস্তিগির।
তাঁর জীবনের অন্যতম সেরা কৃতিত্ব হল ২০১৪ সালে ব্যাংককে আয়োজিত এশিয়ান কুস্তি চ্যাম্পিয়নশিপে রৌপ্যপদক লাভ।
বিনেশ ফোগট
ফোগট-বোনেদের মধ্যে সাফল্যের নিরিখে গীতা, ববিতার পর যাঁর নাম আসে তিনি হলেন বিনেশ ফোগট। ১৯৯৪-এর ২৫ অগাস্ট বিনেশের জন্ম। তাঁর সাফল্যের খাতায় রয়েছে অনেক কৃতিত্ব। কমনওয়েলথ গেমসে তিনটি স্বর্ণপদক রয়েছে তাঁর। এশিয়ান গেমসে রয়েছে একটি সোনা ও ব্রোঞ্জ। এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে তাঁর ঝুলিতে রয়েছে আটটি পদক, একটি সোনা, তিনটি রুপো ও চারটি ব্রোঞ্জ। ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে তাঁর ঝুলিতে রয়েছে দুটি ব্রোঞ্জপদক। তিনি হলেন প্রথম ভারতীয় মহিলা যিনি কমনওয়েলথ ও এশিয়ান গেমস, দুটোতেই সোনার পদক পেয়েছেন।
আরও পড়ুন-হাওড়ার বাজারে টাস্ক ফোর্সের হানা
তিনটি অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। সম্প্রতি ২০২৪-এর অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় অসাধারণ লড়াই করে তিনি ফাইনালে উঠেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত একশো গ্রাম ওজন বেশি থাকায় তাঁকে ফাইনাল খেলার সুযোগ দেওয়া হয়নি এবং কোনও পদকও তিনি পাননি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ওজন বেশির কারণে প্রতিযোগিতা থেকে বাতিলের ঘটনা তাঁর জীবনে এটাই প্রথম নয়। ২০১৬ সালে ওয়ার্ল্ড রেসলিং অলিম্পিক কোয়ালিফিকেশনের প্রথম টুর্নামেন্টে ৪০০ গ্রাম ওজন বেশি হওয়ায় তিনি প্রতিযোগিতা থেকে বাতিল হন। তবে দ্বিতীয় কোয়ালিফিকেশন প্রতিযোগিতায় সফল হয়ে তিনি অলিম্পিকে খেলার ছাড়পত্র পান। সেবার কোয়ার্টার ফাইনালে হাঁটুতে চোট পেয়ে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন। ২০২১-এর টোকিও অলিম্পিকে তিনি সেই কোয়ার্টার ফাইনালে পরাজিত হন। কুস্তিতে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ২০১৬ সালে অর্জুন পুরস্কার পান এবং ২০২০ সালে পান মেজর ধ্যানচাঁদ খেলরত্ন পুরস্কার। স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রথম ভারতীয় হিসেবে তিনি ২০১৯ সালে Laureus Sports Award-এর জন্য মনোনীত হয়েছিলেন।
পথপ্রদর্শক
একথা অনস্বীকার্য যে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের কুস্তির মাপকাঠি প্রথম যিনি উঁচুতে তুলে ধরেছিলেন তিনি হলেন গীতা ফোগট। তাঁর পথ অনুসরণ করে তাঁর বোনেরাও কুস্তিতে অনেক সাফল্য এনেছেন। তাঁদের দেখানো পথে আরও অনেক মহিলা কুস্তিতে দেশকে গর্বিত করে চলেছেন। এঁদের মধ্যে অবশ্যই করে বলতে হয় সাক্ষী মালিকের কথা, প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে যিনি অলিম্পিক পদক জিতেছেন। উল্লেখ্য, সাক্ষীও ছিলেন হরিয়ানার এক গ্রামের মেয়ে। ফোগটদের পথ অনুসরণ করে আগামী সময়ে আরও অনেক মহিলা যে কুস্তিতে দেশকে গর্বিত করবেন একথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
চলচ্চিত্রে ফোগট-বোনেরা
ফোগট-বোনেদের এই লড়াই এবং সাফল্য উঠে এসেছে চলচ্চিত্রেও। মূলত মহাবীর সিং ফোগট ও তাঁর দুই কন্যা গীতা ও ববিতার জীবনকে কেন্দ্র করে পরিচালক নীতীশ তেওয়ারি তৈরি করেন দঙ্গল ছবি। ২০১৬-এর ২ ডিসেম্বর ছবিটি মুক্তিলাভ করে। এই ছবিতে মহাবীর সিং-এর চরিত্রে অভিনয় করেন আমির খান। ছবিটি সারা দেশে ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয়। এই ছবির পর গীতা ও ববিতার খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন-হাওড়ার বাজারে টাস্ক ফোর্সের হানা
মাঠের বাইরে লড়াই
লড়াই দিয়ে যাঁদের জীবন শুরু, লড়াই যাঁদের চলার পথের মন্ত্র, অন্যায়ের বিরুদ্ধেও সেই ফোগট-বোনেদের দেখা যায় সোচ্চার হতে। ২০২৩-এর জানুয়ারি মাসে একঝাঁক কুস্তিগির ভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের বিরুদ্ধে দিল্লির যন্তরমন্তরে প্রতিবাদে শামিল হন। ফেডারেশনের সভাপতি ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে তাঁদের অভিযোগ ছিল যৌন হয়রানি, মানসিক নির্যাতন ইত্যাদি। এই আন্দোলনে প্রধান মুখ হয়ে উঠেছিলেন বিনেশ ফোগট।
শেষকথা
একটি সামান্য দেশলাই কাঠিও দাবানল সৃষ্টি করতে পারে। তেমনি করে একটি ব্যতিক্রমী, ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নীরবে বিপ্লব ঘটিয়ে দিতে পারে। সেরকম এক বিপ্লবের রূপকার মহাবীর সিং ফোগট। হরিয়ানার এক অখ্যাত গ্রাম বিলালি। যেখানে মেয়েদের পড়াশোনার তেমন সুযোগ ছিল না। লিঙ্গবৈষম্য, কন্যাভ্রূণ হত্যা, বাল্যবিবাহের মতো অভিশাপ গ্রাস করে রেখেছিল এখানকার মেয়েদের জীবন। কন্যাসন্তান নয়, বাবা-মায়েরা কামনা করেন পুত্রসন্তান। সেই সমাজের বুকে দাঁড়িয়ে গতানুগতিক ভাবনার বিপরীত স্রোতে হেঁটে মহাবীর সিং স্থির করেছিলেন মেয়েদের কুস্তিগির বানাবেন। অনেক প্রতিবন্ধকতা, উপেক্ষা, কটাক্ষের শিকার হতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু নিজের লক্ষ্য থেকে সরে আসেননি তিনি। তাঁকে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছে তাঁর মেয়েরা। বাবার কঠোর অনুশীলনে তাঁরা নিজেদের শরীরকে কেবল মজবুত করেননি, মনকেও দৃঢ় করেছেন। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তাঁদের প্রতিটি আঘাত ছিল যেন সামাজিক অভিশাপের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। মহাবীর সিং নীরবে যে বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন সেই বিপ্লবের বিজয়গাথা বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছেন তাঁর মেয়েরা। নিজেদের কীর্তিতে তাঁরা নারীদের অভিশাপ মুক্তির পথ দেখিয়েছেন, জ্বালিয়েছেন নারীমুক্তির আলো। সেই আলোর পথ ধরে অসংখ্য নারী কেবল কুস্তিতেই আসেননি, দেশ-বিদেশের মাটিতে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। সময়ের বহমান ধারায় বদলে যাবে অনেককিছু। কিন্তু ভারতের ক্রীড়া ইতিহাসের কুস্তির অধ্যায়ে সোনার অক্ষরে লেখা ফোগট-বোনেদের নাম অমলিন থেকে যাবে চিরকাল।