চিরঞ্জিত সাহা: সূচের পিছনে ছিদ্র খুঁজতে গিয়ে চালুনি দেখল যে সে নিজেই ছিদ্রে ভরা! এ-যেন ‘অতি রাজনৈতিক’ ব্যক্তিত্বকে অরাজনৈতিক সাজানোর হাস্যকর প্রয়াস। মিথ্যের নামাবলি গায়ে চড়ালেই কি ধর্ষক সাধু হয়ে যায়! মুরলী সেন স্ট্রিটে দিয়ে বাতি ধর্ষক বলে আমি সতী…
ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী সাতাশে অগাস্ট নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে তথাকথিত এক অরাজনৈতিক মঞ্চ আর এই মঞ্চের অন্যতম তিন আহ্বায়কত্রয় প্রবীর দাস, সায়ন লাহিড়ী এবং শুভঙ্কর হালদার। দাবি অনুযায়ী, রাজনীতি থেকে বহু যোজন দূরে থাকা আপামর অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তারা; অনেকটা ওই কয়েক বছর আগে ভাইরাল হওয়া খর্বকায় বিজেপি নেতার মতো, ‘দাদা আমি সাতে পাঁচে থাকি না…’। কিন্তু ইতিহাসের দেয়ালে কান পাততেই পুরো ‘চিন তপাক দমদম’। কেঁচো খুঁড়তে সাক্ষাৎ যেন কেউটের কামড়। শুভঙ্কর হালদারের জীবন আবহাওয়া অফিসের হাওয়া-মোরগ। এত পাল্টির পরেও নিজের পিতৃপ্রদত্ত নামটা যে মনে রাখেন কোন মায়াতন্ত্রে, সেটাই সবথেকে বড় রহস্য…
আরও পড়ুন-অশান্তি রুখতে নিরাপত্তার ঘেরাটোপে নবান্ন, যান-নিয়ন্ত্রণে বিজ্ঞপ্তি জারি ট্রাফিক পুলিশের
প্রেস ক্লাবে নিজেকে ‘অরাজনৈতিক’ বলে পরিচয় দেওয়া শুভঙ্কর হালদার আদতে নীতিহীন এক রাজনৈতিক উচ্ছিষ্ট। সালটা ২০০৮। ‘অরাজনৈতিক’ শুভঙ্কর তখন নবদ্বীপ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের একনিষ্ঠ কর্মী। ২০১১ সালের গঠিত নবদ্বীপ বিদ্যাসাগর কলেজের স্টুডেন্টস কমিটির গুরুত্বপূর্ণ কার্যকারী সদস্য ছিলেন এই ডাকসাইটে ছাত্রনেতা। দীর্ঘ দু-বছর দায়িত্বে থাকার পরই সামনে আসে শুভঙ্করের মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা মুখ। ২০১৪ সালের ১০ অক্টোবর এবং ২৬ অক্টোবর মাত্র ষোলো দিনের ব্যবধানে পরপর দুবার রাই চক্রবর্তীকে (নাম পরিবর্তিত) কিডন্যাপ করে গোপন ডেরায় তুলে নিয়ে গিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে শুভঙ্কর চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে। দায়ের হয় মামলা। নিজেদের নীতি-আদর্শ রক্ষার্থে পত্রপাঠ তাকে ছাত্র পরিষদের সমস্ত পদ থেকে বহিষ্কার করে তৃণমূল। পরর্বতীতে প্রতিহিংসাবশত ওই মেয়েটির বিরুদ্ধে মিথ্যে রাজনৈতিক চক্রান্তের অভিযোগ আনলেও আদতে তা ছিল ভিত্তিহীন। বেশ কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকার পর ২০১৮ সালে লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে মুকুল রায়ের হাত ধরে বিজেপিতে যোগদান। একবছরের মধ্যে এবিভিপি-র নবদ্বীপ শাখার সভাপতি পদে নিযুক্ত হয়ে শান্ত বিদ্যাসাগর কলেজ ভাঙচুর থেকে শুরু করে ভারপ্রাপ্ত আইসি সুবীর পালের গায়ে হাত তোলা— এরকম বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকা তৃণমূলের বিতাড়িত বিজেপির গুন্ডা শুভঙ্কর হালদারকে হঠাৎ ‘অরাজনৈতিক’ সাজিয়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে পাঠাচ্ছে বিজেপি। তৃণমূল যেখানে অপরাধীর বিচারের দাবিতে সোচ্চার, সেখানে অরাজনৈতিক ছাত্র আন্দোলনের আড়ালে ধর্ষকদের দিয়ে সাজানো গুন্ডাবাহিনী দিয়ে নবান্ন দখল করতে চেয়ে শান্ত রাজ্যকে অশান্ত করার যে ঘুঁটি সাজাচ্ছে বিজেপি, তা বুঝতে রকেট সায়েন্স নয়; কয়েকটা পুরোনো কেস ফাইলই যথেষ্ট।