ঘুরে আসুন কাভারত্তি দ্বীপ

লাক্ষাদ্বীপের কাভারত্তি। প্রধান আকর্ষণ বিশাল সমুদ্র সৈকত, স্বচ্ছ জল এবং রঙিন মাছ। পাশাপাশি আছে বেশকিছু দর্শনীয় স্থান। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। ঐতিহাসিক গুরুত্বও রয়েছে এই দ্বীপের। সারা বছর বহু পর্যটক ভিড় জমান। সপরিবারে ঘুরে আসতে পারেন। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

স্বপ্নের মতো দ্বীপ। লাক্ষাদ্বীপের কাভারত্তি (Kavaratti-Lakshadweep)। এখানকার প্রধান আকর্ষণ বিশাল সমুদ্র সৈকত, স্বচ্ছ জল এবং রঙিন মাছ। এই সমুদ্র সৈকত তুলনায় শান্ত। তাই বহু মানুষ সাঁতার কাটেন। সাদা বালির তীরে বসে সময় কাটান অনেকেই। সামুদ্রিক অ্যাকোয়ারিয়ামের আকর্ষণ রয়েছে। এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এককথায় অসাধারণ। জায়গাটা ইতিহাস প্রসিদ্ধ। সারা বছর বহু পর্যটক বেড়াতে যান। কেউ বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে, কেউ সপরিবারে। কয়েকদিনের জন্য ঘুরে আসতে পারেন। কাভারত্তি দ্বীপে আছে বেশকিছু দর্শনীয় স্থান। সেগুলোও ঘুরে দেখা যায়। কী কী দর্শনীয় স্থান আছে?

লেগুন
লেগুন একটি পরিষ্কার জলের সুবিশাল পুল। যা খুব একটা গভীর নয়। এখানে আছে বহু বিনোদন উপাদান। যে কোনও বয়সের মানুষ আনন্দ পেতে পারেন। আছে স্নোরকেলিংয়ের ব্যবস্থা। চারপাশে নানা ধরনের রঙিন মাছের সাঁতার কাটা দেখা যায়। করা যায় কায়াকিং। শান্ত জলের মধ্যে প্যাডেল করতে দারুণ লাগে। এই পুলে মাছের মতো সাঁতার কাটা যায়।

ডিস্যালিনেশন প্ল্যান্ট
এটি একটি জাদু কারখানার মতো। যা লবণাক্ত সমুদ্রের জলকে পানীয়যোগ্য মিষ্টি জলে পরিণত করে। ফলে এর গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ জলই জীবন। বিশেষ করে একটি দ্বীপে। কাভারত্তি দ্বীপে দেখার সেরা জায়গাগুলির মধ্যে এই জায়গাটি অন্যতম। এই সফর বিজ্ঞান সফরের মতো। দেখে শেখা যায়, কীভাবে ওখানকার কর্মীরা অভিনব মেশিন এবং জিনিসপত্র ব্যবহার করে জল-সমস্যা সমাধান করেন। আর পাঁচটা পর্যটন কেন্দ্রের থেকে অনেকটাই আলাদা।

উজরা মসজিদ
উজরা মসজিদ বা কাভারত্তি মসজিদ (Kavaratti-Lakshadweep) একটি বহু পুরানো মসজিদ। ১৬০০ সালে তৈরি। মসজিদের স্থাপত্য শৈলী এককথায় অসাধারণ। বিশেষত কাঠের কাজ দেখে চোখ ফেরানো যায় না। স্থানীয় ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা প্রার্থনার জন্য এই মসজিদে যান। ঐতিহাসিক এই মসজিদটি বহু সাধারণ মানুষ ঘুরে দেখেন।

ব্যানানা রিফ
এটা বিশাল কলা আকৃতির আন্ডারওয়াটার ওয়ান্ডারল্যান্ড। কাভারত্তি দ্বীপে দেখার সেরা জায়গাগুলির মধ্যে একটি। সবথেকে বড় কথা, ব্যানানা রিফে প্রত্যেকের আনন্দ পাওয়ার জন্য কিছু না কিছু উপাদান আছে। দেখা যায় বিভিন্ন ধরনের মাছ, প্রবাল এবং অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণী। তাদের সাঁতার দেখে চোখ এবং মন জুড়িয়ে যায়।

সানসেট পয়েন্ট
লাক্ষাদ্বীপের কাভারত্তির সানসেট পয়েন্ট পর্যটকদের কাছে চুম্বকের মতো। এটি দ্বীপের সেরা স্পটগুলির মধ্যে একটি। এখান থেকে আরব সাগরের উপর মুগ্ধকর সূর্যাস্ত দেখতে দারুণ লাগে। সূর্যের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে আকাশটি হয়ে ওঠে রঙিন। কখনও কমলা, কখনও গোলাপি, কখনও বেগুনি। তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনে হয় যেন কোনও বড় শিল্পীর পেইন্টিং দেখা হচ্ছে। অনেকেই মনের পাতায় বন্দি করেন, অনেকেই ক্যামেরায়। এই স্থানে অকারণ কোলাহল এড়িয়ে যেতে হবে। পরিবেশ রাখতে হবে শান্ত।

আরও পড়ুন- কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে বিজ্ঞানীদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত উন্নতমানের আলু উৎপাদনে নয়া প্রযুক্তি

অ্যান্ড্রট আইল্যান্ড
অ্যান্ড্রট আইল্যান্ড একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান। যেতে হয় ছোট নৌকায় চড়ে। একা নয়, দলবেঁধে গেলেই ভাল। বহু পুরোনো জিনিসপত্র দেখা যায় এই দ্বীপে। দেখা যায় সাধু উবায়দুল্লাহর সমাধি। অঞ্চলটির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভারি চমৎকার। চোখে পড়ে লম্বা লম্বা নারকেল গাছ। নারকেল বাগান ঘুরে দেখা যায়। আছে বসার জায়গা। চাইলে দু-দণ্ড বসে গল্পগুজব করতে পারেন।

পিট্টি পাখি অভয়ারণ্য
পিট্টি পাখি অভয়ারণ্য পাখিদের প্রজনন স্থল। মূল শহর থেকে কিছুটা দূরে। ছোট-বড় সব বয়সিদের দেখার মতো জায়গা। উড়ে বেড়ায় নানা ধরনের পাখি। কিচিরমিচির ডেকে চলে। বাদামি নড্ডি, কম ক্রেস্টেড টার্ন এবং সুটি টার্ন পাখি দেখার জন্য বহু মানুষ ভিড় জমান। চাইলে ছবি তোলা যায়।

ওয়াটার স্পোর্টস ইনস্টিটিউট
ওয়াটার স্পোর্টস ইনস্টিটিউট অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের স্বর্গরাজ্য। এখানে আছে বেশকিছু মজাদার জিনিস। স্কুবা ডাইভিং থেকে উইন্ডসার্ফিং পর্যন্ত সবকিছুই রয়েছে। সমুদ্রের গভীরে ডুব দিয়ে জলের নিচের বিস্ময়গুলি চাক্ষুষ করা যায়। উপভোগ করা যায় নিচের রঙিন সামুদ্রিক জীবন। পর্যটকেরা ভরপুর আনন্দ পেতে পারেন। অনুভব করতে পারেন রোমাঞ্চ।

মহাত্মা গান্ধী মেরিন
ন্যাশনাল পার্ক
মহাত্মা গান্ধী মেরিন ন্যাশনাল পার্ক অন্যতম দর্শনীয় স্থান। এটা একটা বিশেষ অঞ্চল, যেখানে সামুদ্রিক জীবন রক্ষা করা হয়। জায়গাটা কাভারত্তি থেকে বেশ কিছুটা দূরে। তবে এটা না দেখলে এখানকার অনেককিছু অদেখা থেকে যায়। এখানে দ্বীপ এবং প্রবাল প্রাচীর রয়েছে। স্নোরকেলিং এবং ডাইভিং করতে পারেন। দেখতে পাবেন নানা রঙের রঙিন মাছ, কচ্ছপ। এখানে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র রক্ষার ব্যাপারে বিশেষ নজর দেওয়া হয়।
এছাড়াও উপভোগ করা যায় গ্লাস বটম বোট রাইড, প্রবাল বাগান, কালপেনি দ্বীপ। সবমিলিয়ে কাভারত্তি (Kavaratti-Lakshadweep) ভ্রমণ মনের মধ্যে অফুরান আনন্দের জন্ম দেবে।

কীভাবে যাবেন?
ট্রেনে এর্নাকুলাম জংশন। সেখান থেকে ট্যাক্সিতে উইলিংডন আইল্যান্ড জেটিঘাট। তারপর জলপথে কাভারত্তিতে যাওয়া যায়।

কোথায় থাকবেন?
কাভারত্তিতে আছে বেশকিছু হোটেল, লজ, গেস্ট হাউস। বিভিন্ন রকমের ভাড়া। ফলে থাকা খাওয়ার কোনো অসুবিধা হবে না।

Latest article