জমজমাট কলকাতার রবীন্দ্র সদন-নন্দন-বাংলা আকাদেমি প্রাঙ্গণ। চলছে পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ড আয়োজিত ‘শারদ বই পার্বণ’। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগিতায়। বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভিড় জমাচ্ছেন বইপ্রেমীরা। শীতের বইমেলা বড় বইমেলা। আন্তর্জাতিক মানের। তবে পুজোর মুখে এই ছোট বইমেলা ঘিরেও যথেষ্ট আগ্রহ, উৎসাহ। পাঠকের জন্য রকমারি বই নিয়ে হাজির নামীদামি প্রকাশকরা। রয়েছে প্রায় ৭০টি স্টল। গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটকের বই যেমন আছে, তেমন আছে কবিতা, ছড়া, ভ্রমণ, রান্না ইত্যাদি বিষয়ের বই। বাংলার পাশাপাশি পাওয়া যাচ্ছে ইংরেজি বই। ত্রিপুরা, বাংলাদেশের বইও রয়েছে। বড় বইমেলায় বইপিছু ১০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়। এখানে বই-প্রতি ছাড় দেওয়া হচ্ছে ২০ থেকে ৮০ শতাংশ! সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছেন না কেউই।
আরও পড়ুন-এগিয়েও কাপ অধরা মোহনবাগানের, যুবভারতীতে নর্থইস্ট রূপকথা
৩০ অগাস্ট, শুক্রবার, ঝমঝম সন্ধ্যায় হয়েছে উদ্বোধন। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, সাহিত্যিক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। বৃষ্টি থাবা বাড়ালেও সফল হবে এই আয়োজন, আশাবাদী তাঁরা। মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘নিঃসঙ্গতা দূর করতে সাহায্য করে বই। আমি চাই মুঠোফোন থেকে বইয়ের প্রতি মানুষের আকর্ষণ আরও বৃদ্ধি পাক। বই ভালবাসি এবং বই পড়ি।’
সাহিত্যিক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আমরা বইপ্রেমী। চোখ সবসময় চায় অক্ষর খুঁজতে। অক্ষরের টানে, বইয়ের টানে এখানে সমবেত হয়েছি। স্টলে স্টলে সুন্দরভাবে বই সাজানো রয়েছে। ঘুরে ঘুরে মনের মতো বই কিনুন। বই পড়ুন। বই পড়ান। বই আমাদের সঙ্গী। বই মনের পরিসর বাড়িয়ে দেয়। ভবিষ্যতের দিশা দেখায়। বইয়ের মতো বন্ধু কেউ নেই।’
পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘বই হল দুঃসময়ের আলো। বিশ্ব বই দিবসে বই পার্বণ শুরু হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে আমরা প্রকাশকরা পুজোর সময় বই পার্বণ আয়োজন করার ব্যাপারে উদ্যোগী হই। মূল উদ্দেশ্য হল পাঠকদের হাতে সস্তায় বই তুলে দেওয়া। এখানে আগের মুদ্রণ বা সংস্করণের বই থাকে। কিছু খুঁত ধরা বইও থাকে, যেগুলো বইমেলা ফেরত। বহু পাঠক এই বইগুলো কম দামে সংগ্রহ করেন। বৃষ্টিবাদল মাথায় নিয়ে প্রতি বছর শারদ বই পার্বণ সফল হয়। এবারেও সফল হবে।’
পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক সুধাংশুশেখর দে বললেন, ‘বেশ কয়েক বছর ধরেই পুজোর মুখে আমরা এই বই পার্বণের আয়োজন করছি। যথেষ্ট উদ্দীপনা রয়েছে পাঠকের মধ্যে। বিশেষ ছাড়ে বই পাওয়া যাচ্ছে। নতুন-পুরোনো নানারকমের বই। ভাল ভাল বই। সবাই আসুন। পছন্দমতো বই কিনুন।’
আনন্দ পাবলিশার্স, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স, দে’জ পাবলিশিং, পত্রভারতী, দেব সাহিত্য কুটীর, বিচিত্রপত্র, বিজল্প, দীপ প্রকাশন, সপ্তর্ষি প্রকাশন, করুণা প্রকাশনী, শিশু সাহিত্য সংসদ, পারুল প্রকাশনী, জয়ঢাক প্রকাশন, বাণীশিল্প, অনুষ্টুপ, পরম্পরা প্রকাশন ইত্যাদি স্টলে চোখে পড়ছে ভিড়। বিক্রি হচ্ছে ভালই। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্টল ঘিরেও রয়েছে উৎসাহ। পাওয়া যাচ্ছে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন আকাদেমি ও পর্ষদের বই। অনেকেই সংগ্রহ করছেন।
আরও পড়ুন-নর্থ চ্যানেল জয় সায়নীর
বড়দের হাত ধরে আসছে ছোটরাও। কিনছে ভূত, গোয়েন্দা, ছড়া। অটোগ্রাফ নয়, এখন ফটোগ্রাফের যুগ। অতি উৎসাহীরা বই কিনে সেলফি তুলছেন প্রিয় লেখকের সঙ্গে। প্রাঙ্গণে প্রকাশিত হচ্ছে বই, পত্রিকা। কেউ কেউ ঘুরে ঘুরেও বিক্রি করছেন। সবমিলিয়ে আনন্দঘন পরিবেশ।
পত্রলেখার গুণেন শীল জানালেন, আমাদের স্টলে বিক্রি ভালই হচ্ছে। অনেকেই দেখে যাচ্ছেন। পরে এসে কিনবেন। ঋত প্রকাশনের ঐত্রেয়ী সরকার জানালেন, আমাদের স্টলটা বেশ ভাল জায়গায় পড়েছে। প্রতি বছর মোটামুটি এই জায়গাতেই পড়ে। পাঠকরা আসছেন। বই দেখছেন। কিনছেন।
৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে ‘শারদ বই পার্বণ’। প্রতিদিন দুপুর ২টো থেকে রাত ৮টা। মেলায় উঠেছে নতুন স্লোগান— ‘নতুন জামা জুতোর পাশাপাশি পুজোয় চাই নতুন বই।’ আজ রবিবার। তৃতীয় দিন। আশা করা যায়, শুরু থেকেই বইপ্রেমীদের ঢেউ আছড়ে পড়বে।
ছবি : সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়