প্রতিবেদন : গোরক্ষার নামে আবার মধ্যযুগীয় নৃশংসতা হরিয়ানার ফরিদাবাদে। গাড়িতে করে প্রায় ৩০ কিমি তাড়া করে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আরিয়ান মিশ্রকে গুলি করে খুন করল গোরক্ষার ধ্বজাধারী দুষ্কৃতীরা। খুনিদের সন্দেহ হয়েছিল, আরিয়ানের গাড়িতে গোমাংস রয়েছে। দিনকয়েক আগেই হরিয়ানার গো-রক্ষকদের হাতে খুন হন বাসন্তীর শ্রমিক সাবির মল্লিক৷ গোমাংস ভক্ষণ করেছেন সাবির, শুধুমাত্র এই সন্দেহে তাঁকে পিটিয়ে খুন করে বিজেপি-শাসিত হরিয়ানার গো-রক্ষক বাহিনী৷ এই ঘটনার রেশ মেলানোর আগেই মঙ্গলবার সামনে এল একই সন্দেহে হরিয়ানায় আরও একটি খুনের ঘটনা। ২৩ অগাস্ট রাতের ঘটনা। তবে সামনে এসেছে মঙ্গলবার। দ্বাদশ শ্রেণির ওই ছাত্র আরিয়ান মিশ্রকে গোমাংস পাচারকারী সন্দেহে গুলি করে খুন করেছে গো-রক্ষকরা৷ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিন্দার ঝড় উঠেছে রাজ্য জুড়ে। সামনেই বিধানসভা ভোট৷ তার আগে একের পর এমন খুনের ঘটনায় চাপে পড়েছে হরিয়ানার বিজেপি সরকার৷ রাজ্যের বিরোধী দলগুলির তরফে ইতিমধ্যেই হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী নায়েব সিং সাইনির পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে৷
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
গো-রক্ষকদের হাতে তাঁর ছেলে খুন হওয়য়ার পরে কার্যত মুষড়ে পড়েছেন মধ্যবয়সি হরিয়ানানিবাসী শিবানন্দ মিশ্র৷ দোষীদের কড়া শাস্তি জানানোর দাবি তুলে শিবানন্দ বলেন, আমি কিছুই জানতাম না৷ হঠাৎই খবর পেলাম আমার ছেলেকে গুলি করে খুন করা হয়েছে৷ খবরটা শোনার পরেই আমার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেছে৷ কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না৷ কাউকে গোরু চোর সন্দেহে গুলি করে খুন করার অধিকার কি মোদি সরকার দিয়েছে? আমি জানতে চাই!
হরিয়ানা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৩ অগাস্ট রাতে প্রায় ৩০ কিমি ধাওয়া করে দিল্লি-আগ্রা হাইওয়েতে আরিয়ান মিশ্রকে গুলি করেছিল পাঁচ অভিযুক্ত অনিল কৌশিক, বরুণ কৃষ্ণ, আদেশ, বরুণ এবং সৌরভ৷ যে বন্দুকটি দিয়ে গুলি করা হয়েছিল আরিয়ানকে সেটির কোনও লাইসেন্স ছিল না বলেও দাবি করেছে পুলিশ৷ ঘটনার পরে সব অভিযুক্তকেই গ্রেফতার করেছে হরিয়ানা পুলিশ, চলছে তদন্ত, দাবি জানানো হয়েছে রাজ্য পুলিশ সূত্রে৷ ঘটনার সময়ে আরিয়ানের সঙ্গে থাকা দুই বন্ধু শেঙ্কি এবং হারসিতকেও জেরা করছে হরিয়ানা পুলিশ৷ সূত্রের দাবি, দিল্লি-আগ্রা হাইওয়েতে আরিয়ানদের গাড়ির পিছু নেওয়ার পরে অভিযুক্তরা দুবার তাদের গাড়ি থামানোর কথা বলে৷ কিন্তু আরিয়ানের দুই বন্ধু ভয় পেয়ে গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেয়৷ এই সময়ে নিজেদের গাড়ির গতি আরও বাড়িয়ে আরিয়ানদের গাড়িকে ধরে ফেলে পাঁচ অভিযুক্ত৷ তার পরে তারা খুব কাছ থেকে দুটি গুলি করে আরিয়ানকে৷ এর মধ্যে একটি গুলি আরিয়ানের বুকে ঢুকে যায়৷ গাড়িতে থাকা দুজন মহিলাকে দেখার পরে অভিযুক্তরা বুঝতে পারে তারা ভুল করেছে, আরিয়ান এবং তার বন্ধুরা আদৌ গোরু পাচারকারী নয়৷ কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে৷ নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে গেলে আরিয়ানকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিত্সকেরা৷