প্রতিবেদন : আলোর সন্ধানে গিয়ে অপমানিত ‘আলো’ই! আলো রায়চৌধুরী— ২০০৩ সালে রিলিজ ‘আলো’ ছবির নায়িকা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। এক বিচার চাইতে গিয়ে আর এক অবিচার। যে নাগরিক সমাজ রাস্তায় নেমে আলোর সন্ধান করছেন, তাদের প্রতিবাদকে ধুলোয় মিশিয়ে দিলেন কিছু সুযোগসন্ধানী, প্রচারলোভী তাদের অন্যায় আচরণে। কারা করলেন? তারাই, যাদের লক্ষ্য হল, আন্দোলনের আবেগকে হাতিয়ার করে অরাজকতা ছড়ানো এবং রাজনৈতিক ডিভিডেন্ড তোলা। বুধরবার কলকাতার রাস্তায় প্রতিবাদে সেটাই আরও পরিষ্কার হয়ে গেল।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
ঘটনা এক : শ্যামবাজার পাঁচমাথা মোড়। আরজি করের মৃত পড়ুয়ার বিচারের দাবিতে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ-জমায়েত। সেখানে কয়েকজন যুবক স্লোগান দিচ্ছে। তার তালে তালে তৃণমূল কংগ্রেসের পতাকায় আগুন দিয়ে বিকৃত উল্লাস। এরা কারা?
ঘটনা দুই : শ্যামবাজারেই প্রতিবাদে শামিল হতে এসেছিলেন অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। তাঁকে শুধু ‘গো ব্যাক’ স্লোগানই দেওয়া হয়েছে তাই নয়, কার্যত ধাক্কা দিতে দিতে গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়, কেন এই আচরণ? কারা করল এই কাজ?
ঘটনা তিন : ডাক্তারদের কর্মবিরতি চলছে আরজি করে, সেখানে বর্ষীয়সী অভিনেত্রী এলেন, আসতেই ‘চোর চোর’ স্লোগান। কারা এর পিছনে? কাদের মদতে বিচার চাওয়া আন্দোলনের মধ্যে ধান্দাবাজ রাজনীতিতে পদচারণা!
ঘটনা চার : বুধবার রাতে একটি ভিডিও ঘুরেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। শুধু এই ভিডিওটি নয়, বিগত কয়েকদিন ধরেই খবর আসছিল মানুষ ক্ষোভপ্রকাশ করছেন। দুপুর থেকে রাত অবধি রাস্তা আটকে প্রতিবাদ অনেকেই মানছিলেন না। নাকাল হচ্ছিলেন নিত্যযাত্রীরা। ব্যবসা লাটে। ক্ষোভ বাড়ছিল ব্যবসায়ীদের।
আরও পড়ুন-সিকিমের গভীর খাদে গড়িয়ে পড়ল গাড়ি, প্রাণ হারালেন ৪ সেনা জওয়ান
আরজি করে ডাক্তারি পড়ুয়ার ভয়ঙ্করতম মৃত্যু নিয়ে প্রতিবাদ হচ্ছে, হওয়া তাই স্বাভাবিক। তৃণমূল কংগ্রেসও মনে করে যারা এই পাশবিক ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের শুধু চিহ্নিত করুক সিবিআই আর সুপ্রিম কোর্ট দ্রুত তাদের শাস্তি দিক। কিন্তু আন্দোলনের নামে যারা ভোটে হেরে যাবার পর খরকুটোর মতো এই আন্দোলন থেকে ইভিভোট তুলতে ব্যর্থ তাদের চরিত্র একটার পর একটা ঘটনার মধ্য দিয়ে ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এরাই বুধবার রাতে উল্লাস আর হর্ষধ্বনির মধ্য দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের পতাকায় আগুন লাগিয়ে নেচেছে। এরা কিছুতেই নাগরিক সমাজ নয়। নাগরিক সমাজ এই ঘটনা সমর্থন করে না। আবেগকে হাতিয়ার করে এরা আসলে রাজনৈতিক ফায়দা তোলায় ব্যস্ত। এদের চিহ্নিত করুন এরা আসলে বেদনাদায়ক ঘটনাকে হাতিয়ার করে অরাজকতা ছড়াতে চায়, অশান্তি করতে চায়।
শ্যামবাজারে অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত কিংবা আরজি করে বর্ষীয়সী অভিনেত্রীর সঙ্গে যে ঘটনা ঘটানো হয়েছে তা কি সুস্থতার লক্ষণ? স্লোগান দিয়ে কুকথা কথা বলে, অপমান করে, কার্যত লাঞ্ছিত করা হয়েছে অভিনেত্রীকে। কী হয়েছিল বুধবার রাতে? শ্যামবাজারে বিচারের দাবিতে পথে নেমেছিলেন অতনু রায়। তিনি বলছেন, কেউ আমন্ত্রণ করেননি। ঋতুপর্ণা নিজের ইচ্ছাতেই এসেছিলেন। মোমবাতি জ্বালাচ্ছিলেন। হঠাৎ গো-ব্যাক। ঋতুপর্ণা সিদ্ধান্ত নেন ফিরে যাওয়ার। এরপর হঠাৎই তথাকথিত নাগরিক সমাজের একাংশ অভিনেত্রীকে নিগ্রহ করার চেষ্টা করতে থাকেন। মারমুখী হয়ে ওঠে। কয়েকজন শরীর দিয়ে তাঁকে বাঁচানর চেষ্টা করেন। আহত হন। কয়েকজনকে ঠেলে দেওয়া হয়। ঋতুপর্ণার গায়ের উপর তাঁরা পড়েন। চলতে থাকে চোরাগোপ্তা মার। লক্ষ্য ঋতুপর্ণা। মার খেলেন যারা, তারা অভিনেত্রীকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন। একজনকে মার খাওয়ার পর হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। অভিনেত্রীকে কোনওরকমে ঠেলে ঢোকানোর পর গাড়ির কাচের উপর মহিলাদের হামলা। যারা ঋতুপর্ণাকে আড়াল করে গাড়িতে তুলে দিলেন তাদেরকে শুরু হয় শাসানি, হুমকি এবং শারীরিক নির্যাতনের নজিরবিহীন অসভ্যতা। স্পষ্ট হয়ে যায় রাজনৈতিক মদতে বিচার চাওয়ার আড়ালে গুন্ডামি।
আরও পড়ুন-যোগীরাজ্যে ফের এনকাউন্টারে মৃত্যু
একই কথা প্রযোজ্য বর্ষীয়সী অভিনেত্রীর ক্ষেত্রেও। এটা নিশ্চিতভাবে নাগরিক সমাজের কাজ নয়, দুই জনই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে গিয়েছিলেন। সকলে আসতে পারেন এই আন্দোলনে। তাহলে এই আচরণের আড়ালে এরা কারা? নাগরিক সমাজ হতে পারে না। এরা আন্দোলনকে ঢাল করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে নেমেছে, মুখ আর মুখোশ বুঝে নিতে হবে নাগরিক সমাজকে।
কোচবিহারে পাথরভাঙায় প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে রাস্তায় কথা লেখা হল। স্বভাবতই প্রতিবাদ হয়েছে প্রতিবাদ হবে। একইসঙ্গে গড়িয়া, রুবি, কিংবা শ্যামবাজারের কেউ কেউ অন্যায্য আচরণের অরাজকতা ছড়াতে চেয়েছে। আবার বলছি এরা নাগরিক সমাজ নয়, জনতার ভোটে হেরে গিয়ে একটি বেদনাদায়ক মৃত্যুকে সামনে রেখে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে যেতে নেমেছে।
দলের তরফে তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের অনুরোধ করে বলা হয়েছে, ঘটনার উপর নজর রাখুন, সচেতন থাকুন, কিন্তু কোনও প্ররোচনায় প্ররোচিত হবেন না।