প্রতিবেদন : রেল যেন দিনে দিনে মৃত্যুফাঁদ হয়ে উঠছে। ট্রেনে জীবন্ত উঠলেও, যাত্রী জীবন্ত নামবে কি না রেলের সৌজন্যে সেই বিষয়ে কোনও নিশ্চয়তা নেই বর্তমানে। একের পর এক দুর্ঘটনা প্রশ্ন তুলছে রেলমন্ত্রকের কর্মদক্ষতা নিয়ে। কিন্তু তাতে রেল কর্তৃপক্ষের মাথাব্যথা নেই। তাঁরা চলছে তাঁদের ঢিমেতালের গতিতেই। গাফিলতিকে তারা এতটাই আত্মস্থ করে নিয়েছে যে নিজেদের শোধরানোর কোনও সদিচ্ছাই দেখা যায় না। রবিবার আবারও সেই প্রমাণ মিলল। এদিন সকাল ১১টা নগাদ ঘটনাটি ঘটেছে বিহারের বক্সারে। নয়াদিল্লি থেকে বিহারগামী মগধ এক্সপ্রেসে চলন্ত অবস্থায় কাপলিং ছিঁড়ে ট্রেনের বগিগুলি আলাদা হয়ে যায়। মুহূর্তেই আতঙ্ক ছড়ায় যাত্রীদের মধ্যে। শুরু হয়ে যায় হুলস্থুল কাণ্ড। গত ২৯ জুলাই ঠিক একই রকম ঘটনা ঘটেছিল বিহারে। দ্বারভাঙা থেকে নয়াদিল্লিগামী সম্পর্কক্রান্তি এক্সপ্রেসের কাপলিং ছিঁড়ে আলাদা হয়ে যায় বেশ কয়েকটি বগি। আবার ১৭ জুন থেকে ৩১ জুলাইয়ের মাঝে মাত্র দেড় মাসের মধ্যে দু’বার রেল দুর্ঘটনা হয় রাঙাপানিতে। প্রথমে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা, এরপর মালগাড়ির লাইনচ্যুত হওয়া। দুর্ঘটনার তালিকা প্রকাশ করতে গেলে হয়তো রেলের ১২ বগির থেকেও বেশি দীর্ঘায়িত হবে। রেল ব্যবস্থাও তহবিলের অভাব, দুর্নীতি এবং অদক্ষতার কারণে ভুগছে। ফলে এর উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ অথৈ জলে। ভারতে ঘন ঘন রেল দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হল ভারতীয় রেলওয়ের পরিকাঠামোর ঘাটতি, যার মধ্যে রয়েছে ট্র্যাক, সেতু, ওভারহেড তার এবং রোলিং স্টক। দুর্বল রক্ষণাবেক্ষণ, বার্ধক্য, জীর্ণতা, ভাঙচুর বা প্রাকৃতিক ত্রুটি। রেলের কর্মচারীদের মধ্যে প্রশিক্ষণ ও দক্ষতার অভাবে রেল পরিষেবা মুখ থুবড়ে পড়েছে। মানববিহীন লেভেল ক্রসিং রেল দুর্ঘটনার সবচেয়ে বড় কারণ। এটির জন্য যানবাহন বা পথচারীরা কাছে আসা ট্রেন দেখতে পায় না বা ট্রেন আসার সঙ্গে সঙ্গে ট্র্যাক অতিক্রম করার চেষ্টা করতে পারে না। এগুলি সেই জায়গা যেখানে রেলওয়ে ট্র্যাকগুলি কোনও বাধা বা ট্রাফিক নিয়ম ছাড়াই একে অপরকে অতিক্রম করে। দেখা গিয়েছে, ২০১৮-১৯ সালে ভারতে সমস্ত রেল দুর্ঘটনার মধ্যে, ১৬ শতাংশ স্বয়ংক্রিয় লেভেল ক্রসিংয়ে ঘটেছে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে রেল পরিষেবা বিশ বাঁও জলে।