প্রতিবেদন : কেন্দ্রে মোদি-শাহ জুটির সরকার তো তৈরি হয়েছে জোড়াতালি দিয়ে, কিন্তু ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বিজেপির মধ্যেকার বিদ্রোহের ছাইচাপা আগুন উসকে দিচ্ছে। সংখ্যার জোর কমতেই দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল, ক্ষোভ-বিক্ষোভ প্রকাশ্যে চলে আসছে। এমনই একটি গোষ্ঠী কোন্দলের খবর এসেছে দেশের রাজনীতিতে বিজেপির বিস্তারের প্রধান ক্ষেত্র রাম জন্মভূমি অযোধ্যা থেকেই। এই ঘটনায় প্রবল অস্বস্তিতে গেরুয়া শিবির।
এই দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে ফৈজাবাদের প্রাক্তন সাংসদ লাল্লু সিং-এর এক সভাত্যাগের ঘটনায়। উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা উপনির্বাচনের আগে দলের সদস্যপদ অভিযান শুরু করার জন্য আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলন ছেড়ে হঠাৎই চলে যান তিনি। তার আগে ক্ষোভ উগরে দেন এই কথা বলে যে, একজন ‘মাফিয়া’র সঙ্গে একই মঞ্চে থাকবেন না তিনি।
আরও পড়ুন-নেতৃত্বের অপপ্রচার, বিভ্রান্তি ছড়ানোর প্রতিবাদে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ৬৮ নেতা-কর্মী
উল্লেখ্য, সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে ফৈজাবাদেই ধরাশায়ী হয়েছে মোদির দল। রামমন্দিরের আবেগ তুলে রাজনীতি করার চেষ্টা প্রত্যাখ্যান করেছেন খোদ অযোধ্যাবাসীই। ফৈজাবাদ আসনে সমাজবাদী পার্টির অবধেশ প্রসাদের কাছে পরাজিত হন লাল্লু সিং। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের অযোধ্যা সফরের একদিন আগে সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল মিলকিপুর বিধানসভা আসনের ভোটপর্ব সামনে রেখে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই এই নির্বাচনী এলাকার দায়িত্ব নিয়েছেন, এমনকী কয়েকজন মন্ত্রীকে সেখানে ক্যাম্প করে প্রচার করতে বলা হয়েছে। এই উপলক্ষে ডাকা সভাতেই অযোধ্যার প্রভাবশালী বিজেপি নেতা শিবেন্দ্র সিংকে লাল্লু সিং ‘মাফিয়া’ হিসাবে উল্লেখ করেন। লাল্লু সিং-এর এই মন্তব্যে ক্ষিপ্ত শিবেন্দ্র সিং পাল্টা সরব হন।
অভিযোগ করেন, অতীতের অপরাধীদের সঙ্গে প্রাক্তন সাংসদের যোগাযোগ আছে। এখানেই শেষ করেননি শিবেন্দ্র সিং। বলেছেন, লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রাক্তন সাংসদ মন্তব্য করেছিলেন, কেন্দ্রে নতুন সরকার গঠনের পর ‘‘সংবিধান পরিবর্তন করা হবে।’’ তাঁর এই মন্তব্যই ফৈজাবাদ সংসদীয় আসনে দলের পরাজয়ের অন্যতম কারণ। এদিকে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে পাল্টা লাল্লু সিং বলেছেন, এইসব অভিযোগ হল আমাকে সাইডলাইনে বসিয়ে রাখার কৌশল। কিন্তু কে আমাকে সাইডলাইনে রাখবে? এটা শালীনতা এবং শৃঙ্খলার বিষয়। সময়ের আগেই সভায় পৌঁছে দেখলাম কিছু ভুল লোক বসে আছে। আমি অপরাধী ব্যাকগ্রাউন্ডের লোকদের সঙ্গে বসা উপযুক্ত মনে করিনি, তাই চুপচাপ চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি আরও বলেন, দলের জন্য শৃঙ্খলা ও শালীনতা অপরিহার্য। সুশৃঙ্খল কর্মী হিসেবে বছরের পর বছর ধরে দলের আদর্শে কাজ করে যাচ্ছি। এ-ব্যাপারে দলের জেলা শাখাকে সতর্ক থাকতে হবে। অন্যথায়, দলকে মূল্য দিতে হবে। দলের আরও ক্ষতি হওয়ার আগে এই ধরনের মতপার্থক্য মীমাংসা করতে হবে। অন্যদিকে বিজেপির ব্লক প্রধান অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সভাপতি শিবেন্দ্র সিং জানিয়েছেন, তিনি ছাত্রাবস্থা থেকেই বিজেপির সদস্য হিসেবে কাজ করছেন। প্রাক্তন সাংসদের কথাবার্তা অবান্তর।