কোথায় গেল সিবিআই বিচার চাই, বিচার চাই

বন্ধু এসো হাতে হাত ধরো, একসঙ্গে হই তবে, বাংলার মানুষ আওয়াজ তুলছে, সিবিআই বিচার চাই, না হলে খেলা হবে। লিখছেন রাহুল চক্রবর্তী

Must read

আরজি কর-এর ঘটনা নিয়ে প্রথম থেকেই বেশ কিছু মানুষের মধ্যে যেন সব গেল গেল রব উঠেছে। আসলে তারা নিজেরাও হয়তো জানে না যে তারা কী চায়, কিংবা জেনেও না জানার ভান করে রয়েছে। একজন আপাদমস্তক বাঙালি এবং বাংলার শুভাকাঙ্ক্ষী ও আরজি কর-এর ঘটনায় অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাওয়ার দাবিতে অসুবিধার কিছু নেই, বরং প্রতিবাদীর ন্যায্য আবেগ আছে। কিন্তু বিচার চাওয়ার ভুয়ো মুখোশের আড়ালে শুধু বাংলাকে কালিমালিপ্ত করার জন্য ঘৃণ্য চক্রান্তর নোংরা রাজনীতিই নজরে আসছে এখন। সারা বাংলা শুধু নয়, গোটা দেশ জুড়ে আজ একটাই আওয়াজ উঠেছে, ধর্ষকের ফাঁসি চাই। বাংলার মানবদরদি মানবিক মুখ্যমন্ত্রী প্রথম দিন থেকেই ফাঁসির আবেদন জানিয়ে আসছেন। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে কিছুতেই বুঝে ওঠা যাচ্ছে না যে, আরজি করের ঘটনার সঙ্গে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের কী সম্পর্ক? বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো বন্ধ করার ডাক দেওয়ার অর্থই বা কী? আর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মস্তিষ্কপ্রসূত জনদরদি প্রকল্পগুলিরই বা এসবের সঙ্গে সম্পর্ক কোথায়? আসলে কোনওটাই কিছু নয়, ওই যে প্রথমেই বললাম ঘৃণ্য চক্রান্তের নোংরা রাজনীতিই চলছে এখন। মূল বিষয় এটাই। বর্তমানে যেখানে ঘটনার তদন্তের দায়ভার সিবিআই-এর উপর ন্যস্ত হয়েছে, মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে এই ঘটনার বিচার চলছে, সেখানে এইসব অযৌক্তিক দাবি কীভাবে সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে? বাঙালি এবং তৃণমূলের সৈনিক হিসেবে এসবের উত্তর বুঝে নেওয়ার ক্ষমতা সন্দেহাতীতভাবে আমাদের আছে।

আরও পড়ুন-অপ্রকাশিত

সেই ১৯৬৭ সালের ১ মার্চ থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত প্রথম এবং তার পরবর্তীতে ১৯৭০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯ মার্চ পর্যন্ত দ্বিতীয় যুক্তফ্রন্ট সরকার (বাংলা কংগ্রেস ও সিপিএম)-এর রাজত্বকাল ছিল। বাংলার প্রবীণ মানুষরা জানেন যে, ১৯৭০ সালের ১৭ মার্চ ঘটে যায় বর্ধমানের সাঁইবাড়ি হত্যাকাণ্ড। পরবর্তীতে ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসার পাঁচ বছরের মধ্যে ১৯৮২ সালের ৩০ এপ্রিল ঘটে যায় আরও এক ভয়ঙ্কর হত্যালীলা, বিজন সেতুর উপরে ১৭ জন আনন্দমার্গীকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়, যা শুধু বাংলা নয়, গোটা দেশের কাছে এক কলঙ্কময় ঘটনা। পরবর্তীতে ৯০-এর দশকের বানতলা গণধর্ষণ কাণ্ড, ১৯৯৩ সালে নদীয়ায় ফেলানি বসাকের মূক ও বধির কন্যার উপর যৌন নির্যাতন, ওই বছরেই ২১ জুলাই ধর্মতলায় নাগরিক অধিকারের স্বার্থে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের উপর গুলিবর্ষণ করে ১৩টি তরতাজা প্রাণের নিধন, ২০০৩ সালের ধানতলার গণধর্ষণ, এসবের সঙ্গে নেতাই, নানুর, সূঁচপুর, ছোট আঙারিয়া এবং সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম থেকে শুরু করে তাপসী মালিক হত্যাকাণ্ড— সবকিছুই সকলের জানা। আজ ২০২৪-এ দাঁড়িয়ে এই কথাগুলো বলার অন্যতম কারণ একটাই। আরজি কর-এর ঘটনা মর্মান্তিক ও ন্যক্কারজনক। কিন্তু যে বা যারা বিচারের নামে নোংরা রাজনীতি করছে শুধুমাত্র বাংলাকে কালিমালিপ্ত করার জন্য, তাদের পূর্বপুরুষের হাতে লেগে থাকা সেইসব রক্তের দাগ আজও যে শুকিয়ে যায়নি, সেকথা তাদের স্মরণ করিয়ে দেবার জন্যই কথাগুলো বলা। আরে কমরেড থুড়ি রামরেড (আসলে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের পর থেকে এই গুলিয়ে দেওয়ার আবহে যাহাই রাম, তাহাই বাম)! কালের নিয়মে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেলেও আপনাদের পূর্বপুরুষেরা হাতে লেগে থাকা রক্তের দাগ সেই জলে ধুয়ে যায়নি। পবিত্র হয়ে উঠতে পারেনি আপনাদের পূর্বসূরিদের হাতগুলো। আর তাই আজ আপনাদেরকে বাংলার আপামর জনগণ শূন্য থেকে মহাশূন্যে পাঠিয়ে দিয়েছে। একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে অর্থনৈতিক অবস্থা স্বচ্ছল হবার পরেও ৫১ টাকা পুজোর চাঁদা দিতে যে বা যারা আজ দেব, কাল দেব করে পুজো কমিটির সদস্য/সদস্যা-দের দিনের পর দিন ঘোরায়, তারাই আজ আরও বেশি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ট্যাটাস বা ক্যাপশন দিচ্ছে যে, দুর্গাপুজায় রাজ্য সরকারের অনুদান চাই না। আজ গোটা দেশের মধ্যে প্রথম রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ, যেখানে সরকারের পক্ষ থেকে বিধানসভায় ধর্ষক-বিরোধী অপরাজিতা বিল পাশ করা হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের সেনাপতি তথা সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক, সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং কেন্দ্রীয় সরকার যাতে সারা দেশে অবিলম্বে ধর্ষক-বিরোধী কঠোর আইন প্রণয়ন করার জন্যও আবেদন জানিয়েছেন। রামরেডরা আপনারা কি খবর রাখেন যে প্রতিদিন গোটা দেশে এই ধরনের ন্যক্কারজনক কত ঘটনা ঘটে চলেছে! হাথরস থেকে শুরু করে বিলকিস বানো, বা ব্রিজভূষণের মতো একজন নোংরা মানুষের দ্বারা দেশের মহিলা কুস্তিগিরদের নিগৃহীত হওয়া, বদলাপুরের মতো ঘটনা, মণিপুরে দিনের পরদিন নিরীহ মা-বোনেদের উপর অকথ্য অত্যাচার, কয়েকদিন আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পরিযায়ী শ্রমিক সাবির মল্লিককে হরিয়ানায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা— এসব ঘটনার সময় কোথায় ছিলেন রামরেড? উত্তর নেই আপনাদের কাছে। কারণ আপনারা প্রতিবাদ করেন সিলেক্টিভ বিষয়ে, যেখানে আপনাদের রাজনৈতিক ফায়দা থাকবে। আপনারা একবারও তো ভাবছেন না যে দুর্গাপুজো বন্ধ করার যে অনৈতিক চেষ্টা চলছে, তাতে কত সাধারণ মানুষের রুটি রুজিতে টান পড়বে! কত মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বেন,তাঁদের ব্যবসা-বাণিজ্য লাটে উঠবে! সংসার চালানোর ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ভাবে উৎসবের দিনগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকা মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াবেন, তাঁদের আরও একধাপ পিছিয়ে দিচ্ছেন! দুর্গাপুজোয় পুজোর জন্য ফুল, ফল, মিষ্টি কিনবেন, ঘুরতে বেরিয়ে খাবার খাবেন, তাতে বিক্রেতাগণের মুখে একগ্রাস ভাত উঠবে, তার পেটটা ভরবে। আর আজ তা না করে একটা ন্যক্কারজনক ঘটনার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের আবেগকে শুধুমাত্র নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে বিপথগামী করতে উদ্যত হয়েছেন। ‘দফা এক, দাবি এক’— এই স্লোগান কোথা থেকে আমদানি করেছেন, আজ কিন্তু তা বাংলার মানুষের বুঝে নিতে কোনও অসুবিধা হচ্ছে না।

আরও পড়ুন-ধৈর্য রেখে সদিচ্ছা মুখ্যমন্ত্রীর, ছক কষে আটকানো হল বৈঠক

গত ২৭ অগাস্ট ২০২৪ পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র সমাজের নাম করে পুলিশের অনুমতি ছাড়াই যে নবান্ন অভিযান করেছিলেন, আদতেও কি তা ছাত্রদের আন্দোলন ছিল? না রামরেড, ছিল না। সেই আন্দোলন ছিল গদ্দারের আন্দোলনের ভড়ং। পরিশেষে বলে রাখা ভাল দুই বছর আগে ‘টুম্পা সোনা, দুটো হাম্পি দে না’ যাদের পার্টি-সঙ্গীত ছিল, তারাই আজ ‘We Want Justice’ স্লোগানের মধ্যে দিয়ে রাজনীতি করছে। এটা মনে রাখবেন মাননীয়া নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর রাজনৈতিক জন্মটাই কিন্তু আন্দোলনকে সঙ্গে নিয়ে, তাই তাঁকে আন্দোলন দেখাতে গিয়ে, সেটা যেন বুমেরাং না হয়। ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না। মধ্যরাতে বাংলার নারীরা ১৪ অগাস্ট পথে নেমে প্রমাণ করেছেন যে, বাংলায় তারা আজও সুরক্ষিত, কিন্তু মণিপুর বা উত্তরপ্রদেশের নারীরা পথে নামতে পারেননি। এটাই তফাত। তফাত ছিল, আছে, থাকবে। সেই আন্দোলনের মধ্যেও মাকু আর রামরেডদের হার্মাদরা ঢুকে আরজি কর ভাঙচুর করে আন্দোলনকে বিপথগামী করেছেন। যাঁরা বলছেন বাংলায় জন্মগ্রহণ করে লজ্জিত, তাঁরা কি হাথরস বা মণিপুরে জন্মগ্রহণ করে সম্মানিত হতেন?

আরও পড়ুন-চিত্র সাংবাদিককে ধাক্কা, ফের বিতর্কে মার্টিনেজ

আরজি কর-এর প্রাক্তন অধ্যক্ষ গ্রেফতার হয়েছেন। দুটো জিনিস কিন্তু স্মরণে রাখুন। খুন এবং ধর্ষণের মামলায় তিনি গ্রেফতার হননি। তিনি গ্রেফতার হয়েছেন দুর্নীতির অভিযোগে। ২. উনি যে কেসে গ্রেফতার হয়েছেন, সেই কেসে এফআইআর দায়ের করেছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাই শেষ প্রশ্ন যেটা এখনও জীবিত, এখনও প্রাসঙ্গিক, খুন ও ধর্ষণের মামলায় কলকাতা পুলিশ ঘটনা ঘটার ১২ ঘণ্টার মধ্যে যাকে গ্রেফতার করেছিল সে ছাড়া আর কেউ এখনও গ্রেফতার হয়নি। কবে হবে? সিবিআই জবাব দাও। রামরেড! যতই করো ষড়যন্ত্র/মমতা-অভিষেক মাথার উপরে, মা, মাটি, মানুষ মোদের মন্ত্র। আমাদের কৃষ্টি, আমাদের সৃষ্টি, পাইনা কভু ভয়, আগামী ভোরের নতুন সূর্য, মা, মাটি, মানুষের জয়। তাই বন্ধু এসো হাতে হাত ধরো, একসঙ্গে হই তবে, বাংলার মানুষ আওয়াজ তুলছে, সিবিআই বিচার চাই, না হলে খেলা হবে।
জয় বাংলা।

Latest article