আমরা করব জয়

শরীরে সক্ষম হন বা অক্ষম, নারীর জয়জয়কার সর্বত্র। সদ্য আয়োজিত প্যারালিম্পিক গেম ২০২৪ তা প্রমাণ করেই ছাড়ল। তাঁরা এলেন, দেখলেন, জয় করলেন। হার মানল সব শারীরিক প্রতিকূলতা, জিতল অদম্য মনোবল। শারীরিক, মানসিক অক্ষমতা নিয়েও এবারে প্যারালিম্পিকে ভারতের হয়ে একাধিক পদক ছিনিয়ে নিয়েছেন মহিলা অ্যাথলিটরা। সেইসব নারীকে কুরনিশ। তাঁদের কথা লিখছেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

প্যারা অলিম্পিক গেম। এক বিরল প্রতিযোগিতা। এই খেলায় অংশগ্রহণকারীরা সকলেই অপ্রতিরোধ্য। শারীরিকভাবে অক্ষম হয়েও কী করে বিশ্বজয়ের কান্ডারি হওয়া যায় তার জ্বলন্ত উদাহরণ। এই খেলার উৎস হলেন ইহুদি জার্মান স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ লুডভিগ গুটম্যান। আহত, বিধ্বস্ত সৈনিকদের শারীরিক ও মানসিকভাবে অবসাদমুক্ত করতে তাঁদের জন্য পোলো, বাস্কেটবল, ডার্ট, তিরন্দাজি ইত্যাদি খেলাধুলোর ব্যবস্থা করেন। যাতে মাংসপেশি আর স্নায়ুতন্ত্রের ব্যায়াম হয় এবং সৈনিকরা দ্রুত সেরে ওঠে। ১৯৪৮ সালের ২৯ জুলাই মাসে লন্ডন অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গুটম্যান তাঁর রোগীদের জন্যও তিরন্দাজি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। সেদিন হুইলচেয়ারে বসে যুদ্ধে আহত ১৪ জন পুরুষ ও ২ জন নারী সৈনিক এতে অংশ নেয়। গেমটির তখন নাম ছিল স্টোক-ম্যান্ডভিল গেমস। ১৯৮৮ সাল থেকে এই প্রতিযোগিতাই নাম বদলে হয় প্যারালিম্পিক গেম। মূল অলিম্পিকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চার বছর অন্তর অলিম্পিকের পাশাপাশি আয়োজিত হয় তাই প্যারালিম্পিক।
এই বছর প্যারালিম্পিকে ভারতের পদক সংখ্যা ২৯। আনন্দের বিষয় হল, এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন প্রায় ৩২ জন মহিলা অ্যাথলিট। যাঁদের মধ্যে একাধিকরাই জিতেছেন সোনা, রুপো এবং ব্রোঞ্জ পদক।

আরও পড়ুন-ভাদ্রে রেঁধে আশ্বিনে খাওয়া

অবনী লেখারা
প্যারা রাইফেল শ্যুটার
এই বছর প্যারালিম্পিক্সের সোনার মেয়ে অবনী লেখারা। মহিলাদের এসএইচওয়ান ১০ মিটার এয়ার রাইফেল ইভেন্টে সোনার পদক পেলেন ২০ বছর বয়সি অবনী। প্যারিসে হওয়া এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন। তিনিই প্রথম মহিলা যিনি টোকিও প্যারালিম্পিক্সে সোনা জিতেছিলেন। তাঁকে ঘিরে ছিল প্রচুর প্রত্যাশা। ফাইনালে অবনী ২৪৯.৭ স্কোর করে সোনা জিতেছেন। রাজস্থানের মেয়ে অবনীর জন্ম ২০০১ সালে ৮ নভেম্বর। ২০১২ সালে একটা গাড়ি দুর্ঘটনায় অবনীর নিম্নাঙ্গ সম্পূর্ণ অসাড় হয়ে পড়ে। চিকিৎসার পরিভাষায় যাকে বলে প্যারাপ্লেজিয়া। বাবার উৎসাহেই খেলায় আসা। প্রথমে আর্চারি দিয়ে শুরু করলেও পরে রাইফেল শ্যুটিং শেখা শুরু করেন। একজন দক্ষ শ্যুটার হয়ে ওঠা শুধু তাঁর তীব্র ইচ্ছেই নয় ছিল আবেগও। অলিম্পিয়ন অভিনব বিন্দ্রাকে দেখে অণুপ্রাণিত হয়ে ২০১৫ সালে অবশেষে শ্যুটিং শেখা শুরু করেন। পদক জয়ের এই রেওয়াজ তাঁর বহুদিনের। ২০২০-র প্যারলিম্পিকে লেখারা ১০ মিটার এয়ার রাইফেল ইভেন্টে সোনা জেতেন সেই সঙ্গে ৫০ মিটার এয়ার রাইফেল ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জিতে বিশ্বে একনম্বর স্থান পান। পেয়েছেন বহু সম্মান। এই মুহূর্তে অবনী রাজস্থান বিশ্ববিদ্যালয় আইন নিয়ে পড়াশুনো করছেন। তাঁর লক্ষ্য বহুদূর।

মোনা আগরওয়াল
প্যারা রাইফেল শ্যুটার
পোলিও আক্রান্ত ক্রীড়াবিদ মোনা আগরওয়ালের প্যারা রাইফেল শ্যুটিং-এর যাত্রা শুরু হয় ২০২১ সালের ডিসেম্বরে৷ অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি তাঁর দক্ষ হয়ে ওঠেন। ২০২৪ সালে তিনি তাঁর প্রথম বিশ্বকাপ স্বর্ণপদকটি পান। এরই সঙ্গে এশিয়ান রেকর্ড এবং একটি প্যারালিম্পিক পদক অর্জন করেন। রাজস্থানের সিকারের মেয়ে মোনার জীবনে যুদ্ধ শুরু ন’মাস বয়সে। পোলিওতে আক্রান্ত হয়েছিলেন মোনা। এর ফলে তাঁর দুটো লোয়ার লিম্বের কর্মক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। সেই প্রতিকূলতা উপেক্ষা করেই পড়াশুনো চালিয়ে গেছেন এবং এই মুহূর্তে সাইকোলজিতে মাস্টারস করছেন তিনি। মাত্র ২৩ বছরে নিজেকে তৈরি করতে ঘর ছাড়েন মোনা। এরপর ২০১৬-তে প্যারা-অ্যাথলিটস হিসেবে নিজেকে তৈরি করা শুরু করেন। রাজ্যস্তরে প্যারা পাওয়ারলিফটিংয়ে পেয়েছেন বহু পদক। এরপর ভলিবল অনুশীলন শুরু করেন। রাজস্থানে প্রথম ন্যাশনাল সিটিং ভলিবল প্রতিযোগিতায় তাঁর ক্যাপ্টেনসিতে স্বর্ণপদক পায় দল। দুই সন্তানের মা মোনা ২০২১-এ ঠিক করেন যে তিনি একক বিভাগে খেলবেন এবং সেই সময় থেকেই তাঁর প্যারা রাইফেল শ্যুটিং-এর যাত্রা শুরু। জাতীয় রৌপ্যপদক জেতেন ২০২২-এ। এরপর আন্তর্জাতিক বিশ্বকাপ এবং এশিয়ান প্যারা গেমসেও কৃতিত্বের সাক্ষী রাখেন। ২০২৪-এ প্যারালিম্পিকে নিজের সফলতার ধারাবাহিকতাকে বজায় রেখে ১০ মিটার এয়ার রাইফেল শ্যুটিং-এ ব্রোঞ্জ পেলেন মোনা আগরওয়াল।

আরও পড়ুন-ফোনে সেই বিস্ফোরক কথোপকথন

রুবিনা ফ্রান্সিস
প্যারা পিস্তল শ্যুটার
ভারতের হয়ে মহিলাদের ১০ মিটার এয়ার পিস্তল শ্যুটিংয়ে প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে ব্রোঞ্জ পদক জিতেছেন জব্বলপুরের রুবিনা ফ্রান্সিস। শরীরের নিম্নাঙ্গের প্রতিবন্ধকতা নিয়েই পিস্তলটি শক্ত করে ধরে করলেন লক্ষ্যভেদ, গড়লেন ইতিহাস। অলিম্পিয়ান গগন নারং অনুপ্রেরণাতেই রুবিনা ২০১৫ সালে পিস্তল শ্যুটিং প্রশিক্ষণ শুরু করেন। ২০১৭ সালে পুনের গান ফর গ্লোরি আকাদেমিতে যোগদান করেন। জয়প্রকাশ নৌটিয়াল এবং যশপাল রানার তত্ত্বাবধানে ধীরে ধীরে দক্ষ হয়ে ওঠেন এয়ার পিস্তল শ্যুটিংয়ে। ২০২০-র টোকিও প্যারালিম্পিকে প্রথম মহিলা প্যারা পিস্তল শ্যুটার হিসেবে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন রুবিনা ফ্রান্সিস।
নিজের কেরিয়ারে এখনও পর্যন্ত জিতেছেন একাধিক পদক। এশিয়ান গেমস, বিভিন্ন দেশভিত্তিক বিশ্বকাপে তার সাফল্য নজির গড়েছে। তার এই যাত্রাপথে পেয়েছেন প্রশিক্ষণ এবং প্রতিযোগিতায় যোগদানের জন্য সরকারি আর্থিক অনুদান। আগামীতে আরও নজির অপেক্ষা করছে তাঁর জন্য।

তুলসীমতি মুরুগেসান
প্যারা ব্যাডমিন্টন
প্যারালিম্পিকে প্যারা ব্যাডমিন্টন প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে প্যারা ব্যাডমিন্টনে রৌপ্যপদক জিতলেন তামিলনাড়ুর মেয়ে তুলসীমতি মুরুগেসান। তুলসীমতির এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে অনেক কঠিন লড়াই। ২২ বছরের তুলসীমতির খেলার সফর শুরু পাঁচবছর বয়স থেকে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু ছিলেন তুলসীমতি। তাঁর ছিল নানাধরনের শারীরিক জটিলতা। দীর্ঘস্থায়ী নিউরাইটিস, মাসল অ্যাট্রফি ছাড়া তুলসী এক বড় দুর্ঘটনায় তাঁর বা হাতের শক্তি হারায় এবং বুড়ো আঙুলটাও বাদ যায়। এই শারীরিক প্রতিকূলতা ছোট থেকেই বাড়িয়ে তুলেছিল তুলসীর জেদ। বাবা চিকিৎসক মুরগেসান মেয়েকে প্রতিকূলতা কাটানোর শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলেন। এখানে থেকেই তাঁর প্যারা ব্যাডমিন্টনের যাত্রা শুরু। প্যারালিম্পিক চ্যাম্পিয়ন হিসেবে রেকর্ড গড়েন ইন্দোনেশিয়াতে। টোকিওতে সোনা ছাড়াও, তিনটে পদক জেতেন তুলসী। তাঁর অধ্যবসায় ঝুলিতে এনেছে বহু সম্মান এবং স্বীকৃতি।

আরও পড়ুন-ডায়মন্ড লিগে আজ অবিনাশ, কাল নীরজ

সিমরান শর্মা
প্যারা জ্যাভলিন থ্রো
মাত্র সাড়ে ছ’মাসেই ভূমিষ্ঠ হয়েছিল সিমরান। প্রিম্যাচিওর বেবি তাই বাকি পুরো সময়টা ইনকিউবেটরে রাখতে হয়েছিল তাঁকে। জন্ম থেকে তাঁর চোখে দৃষ্টিগত সমস্যা ছিল। উত্তরপ্রদেশের মোদিনগরের মেয়ে সিমরান শর্মা। এখন ইতিহাসের পাতায় নাম তাঁর। ভিস্যুয়াল ইম্পেয়ারড প্যারা অ্যাথলিট বিভাগে এ-বছরের প্যারালিম্পিকে ব্রোঞ্জ পদক জিতলেন সিমরান। উইমেনস ২০০ মিটার টি-১২ ফাইনালে তিনি এই পদকটি পান। এছাড়া ১০০ মিটার উইমেন টি-১২-তে চার নম্বরে শেষ করেন প্রতিযোগিতা। বাবা মনোজ শর্মার উদ্যোগ আর উৎসাহেই ক্রীড়াজগতে আসা সিমরানের। কোচ নায়েক গজেন্দ্র সিংকে বিয়ে করেন সিমরান শর্মা। তিনি প্রথম মহিলা প্যারা অ্যাথলিট যিনি ২০২১-এর টোকিও অলিম্পিকে কোয়ালিফাই করেছিলেন।

মনীষা রামদাস
প্যারা ব্যাডমিন্টন
সিগনিফিক্যান্ট ইম্পেয়ারমেন্টস ইন আপার লিম্বস ক্যাটাগরিতে এই বছর ব্রোঞ্জপদক জিতেছেন ১৯ বছরের মনীষা রামদাস। জন্ম থেকেই আর্বস পলসিতে আক্রান্ত মেয়েটি। ছোট থেকেই ব্যাডমিন্টন খেলাটা পছন্দ করতেন। শারীরিক সমস্যার জন্য নিজে না খেললেও ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় সাইনা নেহওয়ালকে দেখে অনুপ্রাণিত হতেন তিনি। ব্যাডমিন্টনকে ভালবেসে ফেলেছিলেন। ২০১৯ সালে মনীষার প্রিয় বান্ধবী তাঁর খেলার প্রতি তীব্র আগ্রহ দেখে প্যারা ব্যাডমিন্টন নিয়ে এগনোর পরামর্শ দেন। বছর পাঁচেক আগে প্যারা ব্যাডমিন্টনকে কেরিয়ার হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন মনীষা। চলতি প্যারিস প্যারা অলিম্পিক গেমসে মহিলা সিঙ্গলস ব্যাডমিন্টনের এস ইউ-৫ বিভাগে ব্রোঞ্জ জিতলেন তিনি। প্যারালিম্পিকে ভারতের হয়ে প্রথম প্যারা ব্যাডমিন্টনে পদকজয়ী ১৯ বছরের মনীষা রামদাস।

নিত্য শ্রী সুমাথি শিভন
প্যারা ব্যাডমিন্টন
প্যারালিম্পিকে মহিলাদের সিঙ্গেল এসএইচ ৬ ব্যাডমিন্টন বিভাগে ব্রোঞ্জ জিতেছেন নিত্য শ্রী সুমাথি সিভান। তিনি ইন্দোনেশিয়ার ক্রীড়াবিদ রিনা মার্লিনা হারিয়ে জিতে নেন রুপোর পদক। সিভান শুধু প্যারালিম্পিকই নয় এশিয়ান প্যারা গেমসে উইমেন সিঙ্গল এবং মিক্সড ডবলস বিভাগে জিতে নিয়েছেন তিনটে ব্রোঞ্জপদক। সিভান জন্ম থেকেই শরীরে ছোট । ২০১৬ সাল থেকে ব্যাডমিন্টন খেলা শুরু করেন তখনও ভাবেননি প্যারালিম্পিকে অংশ নেবেন। ২০১৯-এ প্যারালিম্পিক গেমসের কথা শোনার পর প্রতিযোগিতামূলক খেলায় তাঁর আগ্রহ বাড়ে। লখনউতে কোচ গৌরব খান্নার তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ শুরু করেন। ২০২৩-এ জেতেন এশিয়ান প্যারা গেমস। ওই বছরে ব্রাজিল প্যারা ব্যাডমিন্টনে জেতেন স্বর্ণপদক। এছাড়া গোটা কেরিয়ারে সুমাথি জিতে নিয়েছেন বহু সম্মান এবং পদক।

আরও পড়ুন-বাংলাদেশে ডামাডোল: রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই কি ফের পুরনো মামলা খুঁচিয়ে তোলা হচ্ছে?

দীপ্তি জীবনজি
প্যারা অ্যাথলিট
প্যারা অ্যাথলিট জীবনজি দীপ্তি বা দীপ্তি জীবনজি ২০২৪-এর প্যারালিম্পিকের ব্রোঞ্জ পদক বিজেতা। মহিলাদের ৪০০ মিটার টি-টোয়েন্টি-তে ব্রোঞ্জ জিতেছেন দীপ্তি জীবনজি। এর আগে এশিয়ান প্যারা গেমস ২০২৩-এ রেকর্ড গড়েন তিনি। মেন্টালি চ্যালেঞ্জড বা বিশেষভাবে চাহিদাসম্পন্ন দীপ্তির জন্ম তেলেঙ্গানা প্রদেশের ওয়ারাঙ্গলে। দীপ্তি বাবা-মা পেশায় শ্রমজীবী। খুব সাধারণ নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম হওয়া দীপ্তি যত বড় হতে থাকেন ধীরে ধীরে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বাবা মা বুঝতে পারেন যে তাঁদের মেয়ে মেন্টালি হ্যান্ডিক্যাপড। এরপরেই বাবা-মার উৎসাহেই প্যারা অ্যাথলিট হিসেবে তাঁর সফর শুরু। জীবনজি ভারতীয় দলে নির্বাচিত হয়ে ২০২২ হাংজাউ এশিয়ান গেমসে অংশ নেন। এখানে স্বর্ণপদক জেতেন। এরপর ২০২৪-এর জাপানের কোবে-তে প্যারালিম্পিকের জন্য নির্বাচিত হন তিনি। এখানেও স্বর্ণপদক জেতেন দীপ্তি। অবশেষে ২০২৪ প্যারিস প্যারালিম্পিকে ব্রোঞ্জপদক পেলেন তিনি। ইউক্রেনের ইউলি শিউরিয়র এবং বিশ্বরেকর্ড গড়া ক্রীড়াবিদ তুর্কির আয়সেল অন্ডেরকে পিছনে ফেলে ভারতের জন্য ব্রোঞ্জ পদকটি ছিনিয়ে নেন তুলসী। প্রতিবেশীরা একটা সময় ব্যঙ্গ করে তাঁকে বলতেন ‘মাঙ্কি’। বাবা-মাকে তাঁরা বলেছিলেন মেয়েকে কোনও অনাথ আশ্রমে দান করে আসতে। কিন্তু দীপ্তির বাবা-মা হাল ছাড়েননি। এককাট্টা হয়ে মেয়েকে লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করেছেন।

আরও পড়ুন-শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত ভিয়েতনাম! মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৯৭

প্রীতি পাল
প্যারা স্প্রিন্টার
ইতিহাসের পাতায় প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে প্যারা অলিম্পিকে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে জোড়া পদক জিতলেন প্রীতি পাল। প্যারা স্প্রিন্টার প্রীতি ১০০ মিটার এবং ২০০ মিটার দৌড়ে দুটো ব্রোঞ্জ পদক জিতেছেন। শৈশবেই সেরিব্রাল পলসি হয়েছিল প্রীতির। কিন্তু উওরপ্রদেশের মিরাটের এই মেয়ে ঠিকমতো চিকিৎসার সুযোগ পাননি। ফলে সুস্থ করা যায়নি তাঁকে। তা সত্ত্বেও দমে যাননি প্রীতি। নিজের দৈহিক প্রতিকূলতা জয় করে একটা সময় দিল্লিতে কোচ গজেন্দ্র সিংয়ের কাছে জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে অনুশীলন করতেন, সেখান থেকেই বিশ্বমঞ্চে সফল হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু তাঁর। কোচ গজেন্দ্র সিং সবসময়ই তাঁকে উদ্বুদ্ধ করে গেছেন, শেষ পর্যন্ত প্যারিসে এসেই নিজের স্বপ্নপূরণ করলেন। পদক জিতে ইতিহাস গড়লেন ২৩ বছরের প্রীতি। এই বছরই জাপানের কোবে শহরে বিশ্ব প্যারা অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ পেয়েছিলেন প্রীতি। সেই সুবাদেই প্যারালিম্পিকের যোগ্যতা অর্জন করেন। প্যারা এশিয়ান গেমসে ভাল পারফরমেন্স করেও একটুর জন্য পদক হাতছাড়া হয়েছিল তাঁর।

শীতল দেবী
প্যারা আর্চারি
দুটো হাত নেই কিন্তু প্যারালিম্পিকে পা দিয়েই লক্ষ্যপূরণ করেছেন ভারতের শীতল দেবী। মিক্সড টিম কম্পাউন্ড ইভেন্টে পেয়েছেন ব্রোঞ্জ পদক। সদ্যসমাপ্ত প্যারালিম্পিকে ভারতের সর্বকনিষ্ঠ অ্যাথলিট ছিলেন তিনি। মাত্র ১৭ বছর বয়সে গড়েছেন বিশ্বরেকর্ড। এই বিশ্বরেকর্ড তাঁর প্রচেষ্টার কাছে ক্ষুদ্র। ফোকোমেলিয়া নিয়ে জন্মানো শীতল দেবীর দুটো হাত নেই জন্ম থেকেই। হাত নেই তো কী, পা, কাঁধ, চোয়াল ব্যবহার করে তির ছুঁড়ে কম্পাউন্ড ওপেন মহিলাদের বিভাগে বিশ্বে প্রথম র্যাঙ্ক পেয়েছেন। ২০২২ সালে কাটরা বৈষ্ণোদেবীর শ্রীমাতা বৈষ্ণোদেবী শ্রাইন বোর্ড স্পোর্টস কমপ্লেক্সে। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাননি, পেয়েছেন বহু সাফল্য।

Latest article