প্রতিবেদন: আওয়ামি লিগ সরকারের পতন ও শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর এখন বাংলাদেশে জামাতপন্থী ও মৌলবাদীদের পোয়াবারো। দুর্বল ও দিশাহীন অন্তর্বর্তী সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ। অবস্থা এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে অস্বীকার করার দাবি উঠেছে। জামাতের প্ররোচনায় বাংলাদেশে পাকিস্তানপ্রেমীদের দাপট যে বিপদসীমা ছুঁয়েছে তার অকাট্য প্রমাণ এবার মিলল হাতেনাতে। ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবে পালন করা হল পাকিস্তানের জনক মহম্মদ আলি জিন্নার ৭৬ তম মৃত্যুবার্ষিকী। বুধবার এই অনুষ্ঠানে বক্তারা দাবি জানান, শেখ মুজিবুর রহমান নন, বাংলাদেশের প্রকৃত জাতির পিতা হলেন মহম্মদ আলি জিন্নাই। নতুন বাংলাদেশে এই বিষয়টি আইন করে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
আরও পড়ুন-সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে তৃণমূলকে বঞ্চনার চেষ্টা
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অস্বীকার করে নয়া ভাষ্যে বলা হচ্ছে, ১৯৭১ সাল ছিল পাকিস্তান ভাঙার চক্রান্ত, যা আসলে দিল্লির রচনা করা। বাংলাদেশকে পাকিস্তান থেকে আলাদা করার পরিকল্পনা ছিল ভারতের স্বার্থে। কোটাবিরোধী আন্দোলনের নেতাদের নিয়ে সম্প্রতি তৈরি হওয়া নাগরিক পরিষদের সভাপতি মহম্মদ সামসুদ্দিন কোনওরকম রাখঢাক না করেই জিন্নার স্তুতি করে মন্তব্য করেন, ’৭১-এ আসলে ভারতের গোলাম হয়েছে বাংলাদেশ। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়, এই অনুষ্ঠানে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন পাকিস্তানের ডেপুটি হাইকমিশনার কামরান ধাঙ্গাল। তাঁর মন্তব্য, একদিকে পাকিস্তান, অন্যদিকে বন্ধু বাংলাদেশ। মাঝখানে ভারতের মতো বিষধর সাপ আমাদের সম্পর্ককে বিষিয়ে তুলেছিল। ঢাকায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল নবাব সলিমুল্লা অ্যাকাডেমি। জীবনী পাঠ হয় জিন্নার। সঙ্গে উর্দু শায়েরিও। ’৭১-এর পরে এমন অনুষ্ঠান কল্পনারও অতীত। স্বাভাবিকভাবেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে সামাজিক মাধ্যমে।
ওপার বাংলার অস্থির পরিস্থিতি পর বাংলাদেশের দায়িত্বে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার। ইউনুসকে সামনে রেখে নতুন সরকার ক্ষমতায় বসতেই প্রথমে জাতীয় পতাকা, তারপর জাতীয় সঙ্গীত বদলের দাবি উঠেছিল। এবার ফের নতুন দাবি, যা প্রকাশ্যে আসতেই সমালোচনা শুরু হয়েছে বাংলাদেশে।
পাকিস্তানের অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে ’৭১-এ মৃত্যুবরণ করেছিলেন বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ নর-নারী। সাধারণ মানুষের ওপর নেমে এসেছিল পাক বাহিনীর অমানবিক নির্যাতন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেই পাকিস্তানের প্রেমেই মশগুল বাংলাদেশের একটি অংশ। প্রচারে বলা হচ্ছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ যে স্বাধীনতা পেয়েছিল তা আসল স্বাধীনতা নয়, তা ছিল পাকিস্তানকে ভাঙার ষড়যন্ত্র। তাই শেখ মুজিবুর রহমান নন, রাষ্ট্রপিতা হিসেবে ঘোষণা করা হোক জিন্নাকে। কারণ জিন্না না থাকলে পশ্চিমবঙ্গের মতো ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য হয়েই থেকে যেত বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন-আমরা করব জয়
এদিকে রাজনৈতিক ডামাডোলের মধ্যেই বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ধর্মস্থান বলপ্রয়োগ করে দখল করা হল রাজধানী ঢাকা শহরের বানিয়ান নগরে। মান্নান নামে বিএনপির এক নেতা বৃহস্পতিবার মদনগোপাল জিউর মন্দিরে দলবল নিয়ে তাণ্ডব চালান বলে অভিযোগ। মারধর করা হয় মন্দিরে পুজো দিতে আসা ভক্তদেরও। রেহাই পাননি মহিলারাও। অপহরণের হুমকি দেয় দুষ্কৃতীরা। খবর পেয়ে সেনা-জওয়ানরা ছুটে এলেও তাদের উপস্থিতিতেই মন্দিরে ভাঙচুর চলে
বলে অভিযোগ।