রাখি গড়াই, বিষ্ণুপুর: ভাদু এবং টুসু পরব বাঁকুড়ার সংস্কৃতির অন্যতম অঙ্গ। এখন সারা মাস জুড়ে উৎসব হয় না। পরিবর্তে ভাদু পরব এখন প্রতীকী উৎসব। ৪৮ ঘণ্টা পরে শুরু হবে ভাদু জাগরণ। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করেও মহিলারা দক্ষিণ বাঁকুড়ার ভাদু-দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন। একই দৃশ্য সিমলাপাল এবং লক্ষ্মীসাগর বাজারে। মৃৎশিল্পীদের মতে ভাদুমূর্তি বিক্রি ভালই হচ্ছে। তবে পারিবারিক পুজো কমে গেলেও বারোয়ারি পুজোর প্রচলন বেড়েছে দক্ষিণ বাঁকুড়ার গ্রামে গ্রামে। উত্তর বাঁকুড়ায় ভাদু পরব কার্যত বিলুপ্তির পথে।
আরও পড়ুন-নির্ভয়া তহবিল নষ্ট মোদিরাজ্যে
বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের সিমলাপালের পুকুরিয়া গ্রামের শিক্ষিত যুবক গিরিধারী ও গোবিন্দ কর্মকার সিমলাপাল বাজারে ভাদুমূর্তির দোকান করেছেন। ওঁরা জানালেন, দাদু দ্বারকানাথ কর্মকারের হাত ধরে বাবা ভাস্কর কর্মকার মূর্তি তৈরি শিখেছেন। আমরাও বিকল্প পেশার সন্ধান না পেয়ে দুই ভাই এটাকে ধরে রেখেছি। বাবার সঙ্গে বিভিন্ন উৎসবে প্রতিমা তৈরি করে এই স্থায়ী দোকানে বিক্রি করি। পাঁচ বছর আগের তুলনায় পঞ্চাশ শতাংশ ভাদু বিক্রি কমেছে। ছোট ভাদুমূর্তির পরিবর্তে বড় মূর্তির চাহিদা বেড়েছে। দোলদেড়িয়া থেকে ভাদু কিনতে আসা চার গৃহবধূ জানালেন, পাড়ার সকলে মিলে চাঁদা দিয়ে একটি জায়গায় পুজো করছি। মাসভর পুজোর সেই উন্মাদনা না থাকলেও এক রাতে যে আনন্দ সেটাও কম নয়। এক নামী ঘরের গৃহবধূ গাইলেন, ‘কুলির (গ্রামীণ রাস্তা) এ পারে ঘর, ওপারে ঘর, সিঁয়াড়ে সিঁয়াড়ে ঔল/ মানবজীবন কত দিন ভাই, লাগে না রে গণ্ডগোল।’ বাঁকুড়ার খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষ এত সুন্দর শব্দ পান কোথা থেকে, এ প্রশ্ন অনেকেরই। গান শেষে ৬০০ টাকায় একটি ভাদুমূর্তি বিক্রি করে গিরিধারী হেসে জানালেন, আশা করছি এ বছর ২০০-র কাছাকাছি ভাদুমূর্তি বিক্রি হবে।