প্রতিবেদন : বন্যা-পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তৎপর নবান্ন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কার্যত প্রতি মুহূর্তে খবর রাখছেন। পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে বাসিন্দাদের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে আনা, খাদ্যদ্রব্য পৌঁছে দেওয়া-সহ সার্বিকভাবে মানুষের পাশে থাকার জন্য শীর্ষ প্রশাসনিক আধিকারিকদের নিদেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিভিন্ন দফতরের সচিবদের দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় বাড়তি দায়িত্ব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার নবান্নে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য-উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মুখ্যসচিবের সঙ্গে কথা বলে বন্যা-নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বেশ কিছু নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেইসঙ্গে হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমান ও পূর্ব বর্ধমানে একাধিক দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারিদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রাজেশ সিনহা, সুরেশ গুপ্তা, ওঙ্কার সিন মিনা, সৌমিত্র মোহন, সঞ্জয় বনশল, পি উলগানাথনের মতো একাধিক সিনিয়র সচিবেরা বন্যা-পরিস্থিতির উপর নজর রাখবেন ও কাজ করবেন। ডিভিসির সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে, বলেন আলপন বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্যের আপত্তি সত্ত্বেও ফের জল ছেড়েছে ডিভিসি। যার জেরে রাজ্যের একাধিক জেলা প্লাবিত হয়েছে। একটানা দুর্যোগের জেরে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন সাত ঘণ্টার মধ্যে পাঞ্চেত এবং মাইথন বাঁধ থেকে প্রায় ৩ লক্ষ কিউসেক জল ছেড়েছে।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন বন্যা-কবলিত এলাকায় এনডিআরএফ-এর ৮টি টিম মোতায়েন করা হয়েছে ইতিমধ্যেই জেলায়। হুগলি, হাওড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা মিলিয়ে ১৭টি এসডিআরএফের টিম মোতায়েন করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত দু’জন মারা গিয়েছেন। আটকে পড়া ৭,৯৫২ জন মানুষকে ইতিমধ্যেই ক্যাম্পে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়েছে। ১৮০টি ক্যাম্প চলছে রাজ্য জুড়ে। ৪৬ হাজার ত্রিপল বিলি করা হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। বীরভূমের কিছু অংশ, বাঁকুড়া, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর এবং পশ্চিম বর্ধমান– এই জেলাগুলিতে বন্যার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন-এসিএল টু-এ সামনে আজ রাভশান, অনিশ্চিত আলবার্তো, পরীক্ষা মোহনবাগানের
মঙ্গলবার সকাল এগারোটার পর মাইথন জলাধার থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ কমানো হয়েছে। তবে পাঞ্চেত জলাধার থেকে জল ছাড়া বাড়ানো হয়েছে। মাইথন থেকে প্রায় ২ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছিল। এখন সেখান থেকে ১ লক্ষ ৬০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে। অন্যদিকে, পাঞ্চেত থেকে ৫০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছিল। এখন সেখান থেকে প্রায় ৯০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে। এর ফলে ডিভিসির দুটি বাঁধ থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ প্রায় একই থাকছে। প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার কিউসেক জল দুর্গাপুর ব্যারেজের দিকে যাচ্ছে। ডিভিসির সাফাই, ঝাড়খণ্ড সরকার তেনুঘাট থেকে বিপুল পরিমাণ জল ছাড়ায় পাঞ্চেত থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়াতে হচ্ছে। প্রসঙ্গত, দুটি জলাধার থেকে জল ছাড়া হলে সেই জল দামোদর নদ হয়ে পৌঁছয় পশ্চিম বর্ধমানের দামোদর ব্যারেজে। জলের চাপ বাড়তে থাকলে সেখান থেকেও জল ছাড়ার পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে বেশি জল ছাড়া হলে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জায়গা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে বর্ধমান, হাওড়া এবং হুগলির খানাকুল, আরামবাগ-সহ দামোদরের তীরবর্তী এলাকাগুলি বানভাসি হতে পারে।