কাঞ্চনতলা জমিদারবাড়ির তিনশো পেরোনো ২২ পুতুলের পুজো

নীল বিদ্রোহের পর ব্রিটিশরা দেশ ছাড়তে শুরু করলে তাদের থেকে সাতটি নীল কুঠি কিনে নিয়ে জমিদারি বাড়ান পরিবারের সদস্য জগবন্ধু ও ভগবতী রায়।

Must read

কমল মজুমদার, জঙ্গিপুর: প্রায় ৩০০ বছর আগে মুর্শিদাবাদে কাঞ্চনতলা জমিদারবাড়িতে শুরু হওয়া ২২ পুতুলের দুর্গাপুজো আজও জেলায় বড় আকর্ষণ। ঢাকা বিক্রমপুরের মারুচি গ্রামের বসু পরিবারে পুজোর সূচনা করেন রাঘবেন্দ্র রায়। পরে স্থানান্তরিত হয় কাঞ্চনতলায়। বসুরা ঢাকার নবাবের দেওয়ান ছিলেন। ভাল কাজের জন্য নবাবের কাছ থেকে ‘রায়’ উপাধি পান। ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে নবাবি স্থানান্তরিত হওয়ায় তাঁরাও চলে এসে তৎকালীন মালদা-মুর্শিদাবাদ এবং রাজশাহি জেলার সংযোগস্থলে দেওনাপুরে বাড়ি তৈরি করেন। সে সময় গঙ্গার উপর দিয়ে যাওয়া বাণিজ্যতরী থেকে খাজনা আদায় করে সেই টাকা বাংলার নবাবকে নজরানা দিয়ে জমিদারি পায় এই পরিবার।

আরও পড়ুন-ডুলুংয়ের জল বেড়ে ঝাড়গ্রামের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন জামবনির গিধনি

তবে ফি বছর বন্যায় দেওনাপুরের বিস্তীর্ণ অংশ প্লাবিত হওয়ায় অন্যত্র জমিদারবাড়ি গড়ার কথা ভেবে নৌকায় চেপে উঁচু জায়গা হিসাবে কাঞ্চন ফুলে ভরা একটি গ্রাম খুঁজে পেয়ে নাম দেন কাঞ্চনতলা। সেখানেই নতুন জমিদারবাড়ি গড়া হয়। নীল বিদ্রোহের পর ব্রিটিশরা দেশ ছাড়তে শুরু করলে তাদের থেকে সাতটি নীল কুঠি কিনে নিয়ে জমিদারি বাড়ান পরিবারের সদস্য জগবন্ধু ও ভগবতী রায়। সাঁওতাল বিদ্রোহের সময় বর্তমান ঝাড়খণ্ডের পাকুড়কে রক্ষা করে ‘রায়’ পরিবারের প্রতিপত্তি বাড়ে। বর্তমান সদস্য সুদীপ রায় বলেন, প্রায় ৩০০ বছর ধরে চলছে পরিবারের দুর্গাপুজো। সদস্যরা দেশবিদেশ যেখানেই থাকুন, পুজোয় সবাই কাঞ্চনতলার বাড়িতে অবশ্যই হাজির হন। প্রতিমার সঙ্গে ২২ দেবদেবী থাকায় অনেকেই একে ২২ পুতুলের পুজো বলেন। দুর্গামূর্তির সবথেকে উপরে থাকেন মকরবাহিনী গঙ্গা। সঙ্গে নন্দী-ভৃঙ্গীকে নিয়ে মহাদেব। থাকেন রাম-লক্ষণ। দেবীমূর্তির পাশে দেখা যায় মা তারা, নরসিংহ, জয়া-বিজয়া সহ একাধিক দেবদেবীকে। সুদীপবাবু বলেন, ‘শাক্তমতে সপ্তমী, সন্ধিপুজো এবং নবমীতে পাঁঠাবলি প্রথা আজও চালু। পুজোয় দেবীর উদ্দেশ্যে অন্ন ভোগ নয়, ফল ও এবং অন্যান্য জিনিসের ভোগ নিবেদন হয়। প্রথা মেনে আজও শতবর্ষপ্রাচীন কাঠামোতেই মূর্তি গড়া হয় ঠাকুরদালানে। মন্ত্র ও স্তোত্রপাঠের মধ্যে দিয়ে পুজো শুরু হয় দুর্গাপুজোর আগের নবমীতে। প্রতিমা বেদিতে বসেন পঞ্চমী বা ষষ্ঠীর কোনও এক শুভ মুহূর্তে। বহু বছরের রীতি মেনে দশমীর দিন বেহারাদের কাঁধে চেপে প্রতিমা যান নিরঞ্জনে।’

Latest article