সংবাদদাতা, হুগলি : নাম হীরালাল সরকার। পেশা সিভিক ভলান্টিয়ার। সারাদিন রোদ, ঝড়, জল, বৃষ্টিতে হুগলির বলাগড়ে দাঁড়িয়ে ট্রাফিকের দায়িত্ব সামলান। আদিবাসী অধ্যুষিত এই এলাকায় অনেক পরিবারের পক্ষেই আলাদা করে প্রাইভেট টিউটর রেখে ছেলেমেয়েদের পড়াশুনো করানোর সামর্থ্য নেই। সেই দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন হীরালাল। পাটকাঠির ঘরে চলছে তাঁর পাঠশালা যা মন জিতেছে পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে আম জনতার।
আরও পড়ুন-কমল বৃষ্টি, অব্যাহত ডিভিসির জল ছাড়া
রাস্তার পাশেই পাটকাঠির বেড়া দিয়ে একটি চালাঘর তৈরি করেছেন হীরালাল। প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার আগে অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন পড়ুয়া হীরালালের কাছে পড়তে আসে। তাঁর পাঠশালায় মিড-ডে মিল হয়তো নেই, কিন্তু আছে অনাবিল আনন্দ, গল্পের ছলে পড়া আর লজেন্স, বিস্কুট— পড়াশোনার শেষে দায়িত্ব সহকারে রাস্তা পার করিয়ে দেন এই সিভিক ভলান্টিয়ার। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন হীরালাল চান প্রতিটি শিশু যথোপযুক্ত শিক্ষা পাক। স্কুলের পড়াশোনার বাইরে তাদের যাবতীয় খুঁটিনাটি প্রশ্ন থাকলে তার সঠিক উত্তর দিয়ে পড়ুয়াদের জ্ঞান অর্জনে সাহায্য করেন তিনি। অভিভাবকরা বলছেন, এই হীরালাল যে স্নেহ-ভালবাসায় শিক্ষা দেন, সেটা শিক্ষণীয়।
আরও পড়ুন-ভাল মানুষ, খারাপ মানুষ
হীরালাল ২০১০ সালে বলাগড় কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। এরপর হুগলি গ্রামীণ পুলিশের বলাগড় থানার সিভিক ভলান্টিয়ারের কাজে যোগ দেন। সকালে ট্রাফিকের দায়িত্ব সামলে বিকেলে বাবার সবজির ব্যবসায় হাত লাগান। ক্রিকেটপ্রেমী হীরালাল বলছেন, যাঁরা প্রাইভেট টিউশন দিতে পারেন না তাঁদের ছেলেমেয়েদের আমি পড়াই। মূলত শিশুদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ তৈরি করতেই আমার এই উদ্যোগ। সমাজের পাশে থেকে মানুষের জন্য কাজ করতে ভাল লাগে। হুগলি গ্রামীণ পুলিশের ডিএসপি (ক্রাইম) অভিজিৎ সিনহা মহাপাত্র বলেন, সবাই খারাপ হয় না সেটা হীরালালকে দেখলেও বোঝা যায়। পুলিশ সুপারও এই সিভিক ভলান্টিয়ারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। একদিকে যখন আরজি কর-কাণ্ডে নিকৃষ্ট ঘৃণ্য অপরাধে অভিযুক্ত এক সিভিক ভলান্টিয়ার, তখন হুগলির বলাগড়ের আরেক সিভিক ভলান্টিয়ার হীরালাল সরকার সামাজিক দায়িত্ববোধ এবং সুস্থ মানসিকতার উজ্জ্বল সমাজ গড়তে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর কাজকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন সকলেই।