বিশ্বব্যাপী ভ্রমণ উদযাপন
২৭শে সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষজনদের একত্রিত করার জন্য এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ভ্রমণ যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝানো এবং সেই বিষয় সাধারণকে উৎসাহিত করার জন্যই বিশ্বজুড়ে এই দিনটিতে পালিত হয়। এই দিনটিতে বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন রকমের কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। আর বিশ্ববাসীকে সচেতন করা হয় যাতে তাঁরা উপলব্ধি করতে পারে যে দেশ-বিদেশের পর্যটন কীভাবে চাকরি ব্যবসা, সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা গ্রহণ করে। পর্যটনের যে একটি ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে সেটিও বোঝানো হয় এই দিবসটি উদযাপনের মাধ্যমে। আগে ভারত, স্পেন এবং মেক্সিকোর মতো দেশগুলো এই বিশ্ব পর্যটন দিবসের আয়োজক ছিল। কিন্তু বর্তমানে অনেক দেশই এগিয়ে এসেছে। এ-বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে জর্জিয়া এই পর্যটন দিবস উদযাপনের নেতৃত্ব দেবে।
অর্থনীতিতে পর্যটন
ভ্রমণ মানেই পর্যটকরা বেরিয়ে পড়েন নতুনের সন্ধানে। এক-একটা জায়গা যখন তাঁরা ঘুরতে যান যাতায়াত থেকে শুরু করে হোটেল, রেস্তোরাঁ এবং ভ্রমণস্থল পরিদর্শন অর্থাৎ শুরু থেকে শেষ অর্থ ব্যয় করেন, বিভিন্ন ডেস্টিনেশনের টিকিট কাটেন। ফলে আর দেশ-বিদেশের অর্থনৈতিক পরিকাঠামোয় পর্যটনের অবদান অপরিসীম। ভ্রমণবিলাসে পর্যটকরা সর্বদাই নতুন নতুন অজানা অচেনা গন্তব্য খুঁজতে থাকেন। ফলে এখন দেশ-বিদেশের বহু বিরল জায়গা হয়ে উঠেছে পর্যটন কেন্দ্র। আগে যেখানে কেউ তেমন যেতেন না এখন সেখানেই যাচ্ছেন। যাকে আমরা বলি অফবিট ডেস্টিনেশন। বড় বড় চারতারা পাঁচতারা হোটেল শুধু নয়, ছোট্ট হোমস্টেগুলোও পর্যটন ব্যবসায় যথেষ্ট এগিয়ে রয়েছে তাঁদের ক্ষুদ্র যোগদানেও পর্যটনের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বেড়েছে কয়েকশো গুণ। সেই কারণে প্রতিবছর পর্যটকদের আরও বেশি আকর্ষিত করা জরুরি এবং ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম ডে পালন করা জরুরি।
উদ্দেশ্যের জন্য পর্যটন
পর্যটনের মধ্যে দিয়ে যে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হতে পারে সেটার প্রচার করাও কিন্তু পর্যটন দিবস পালনের অন্যতম লক্ষ্য। বহু সংখ্যক মানুষকে আরও বেশি বেশি করে তথ্য প্রদান করা। ভ্রমণ পারে সব বাধাবিঘ্ন ভেঙে দিতে এবং এই ভ্রমণই পারে সমগ্র মানবজাতির মধ্যে এক অটুট বন্ধন সৃষ্টি করতে। স্থানীয় সম্প্রদায়কে এগিয়ে নিয়ে যেতেও এবং তাদের জীবনের উন্নতিতে সহায়তা করে ভ্রমণ।
শুরুর সেই দিন
১৯৮০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে বিশ্ব পর্যটন দিবস তথা ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম ডে পালিত হওয়া শুরু হয়। এই দিবসের সূচনা করেন জাতিসংঘ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ইউএনডব্লিউটিও) ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস পালনের একটি বিশেষ কারণ ছিল। কারণটি হল ১৯৭০ সালে এই দিনটাতেই জাতিসংঘ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার স্বীকৃতি লাভ করেছিল। ইউএনডব্লিউটিও (UNWTO)-এর বার্ষিকীতে এই বিশ্ব পর্যটন দিবস তথা ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম ডে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
থিমে ঘেরা পর্যটন
এক-এক বছর এক একটি দেশ এই দিনটির আয়োজন করে। ১৯৯৭ সালের অক্টোবর মাসের ইউএনডব্লিউটিও (UNWTO) ঠিক করে বিশ্ব পর্যটন দিবস উদযাপনে জাতিসংঘের অংশ হিসেবে কাজ করতে প্রতিবছর একটি আয়োজক দেশকে মনোনীত করবেন। কারণ, এক একটি দেশ যদি এই পর্যটন দিবসের আয়োজন করেন তাহলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে পর্যটনের ভূমিকা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো যাবে। এবং তার সঙ্গে বিশ্বব্যাপী সামাজিক, সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক মূল্যবোধকে প্রভাবিত করতে পারবে এই পর্যটন।
প্রতিবছরে এই দিনের থাকে ভিন্ন ভিন্ন থিম। ২০২২ সালে বিশ্ব পর্যটন দিবসের আয়োজক দেশ ছিল ইন্দোনেশিয়া। সেই বছর তাদের থিম ছিল রিথিংকিং ট্যুরিজম অর্থাৎ আবার নতুন করে ভাবি প্রস্তুত হই ভ্রমণে। যেহেতু তার আগে করোনা অতিমারির কারণে পর্যটনের অনেক ক্ষতি হয়েছিল সেই কারণে সেই ক্ষতিপূরণের বিষয়ে মনোযোগী হতে এই থিমটি নির্বাচন করা হয়েছিল। ২০২৩ সালের বিশ্ব পর্যটন দিবসের আয়োজন করেছিল সৌদি আরব। সেই বছরের থিম ছিল পর্যটন ও সবুজ বিনিয়োগ। এ-বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে বিশ্ব পর্যটন দিবসের আয়োজক দেশ হচ্ছে জর্জিয়া। এ-বছরের থিম হচ্ছে পর্যটন এবং শান্তি। এ-বছরের পর্যটন দিবসের উদ্দেশ্য হচ্ছে সংস্কৃতির মধ্যে শান্তি এবং বোঝাপড়ার সমন্বয় করতে পর্যটনের ভূমিকা যে গুরুত্বপূর্ণ সেটাই সবার সামনে তুলে ধরা। বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রচারে পর্যটনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ কারণ ভ্রমণ আন্তর্জাতিক সংস্কৃতিকে জানতে, সেখানকার ধর্মীয় দিকগুলোকে জানতে উৎসাহিত করে। ধর্মের জ্ঞান মানুষকে শান্তি দেয় তাই যত বেশি মানুষ ভ্রমণ করবে তত বেশি তারা বিভিন্ন সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা লাভ করতে সক্ষম হবে।
এবারের পর্যটন দিবসের আয়োজক দেশ জর্জিয়া। পূর্ব ইউরোপ এবং পশ্চিম এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত জর্জিয়া। এই দেশটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। জর্জিয়ার সংস্কৃতি এবং দৃষ্টি নন্দন প্রকৃতি সমৃদ্ধ ভ্রমণপিপাসুদের পছন্দের ডেস্টিনেশন। জর্জিয়া দেশটি বিখ্যাত তার বুকে অবস্থিত প্রাচীন গির্জা, ওয়াইন তৈরির স্থান এবং ভীষণ সুন্দর পর্বতমালার জন্য। আর এই কারণেই জর্জিয়ার পর্যটন খ্যাতি খুব দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পর্যটনস্থানটি লক্ষ লক্ষ আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আকর্ষণ করছে। মনোরম দৃশ্যের সঙ্গে কীভাবে পর্যটন শান্তি ও সংস্কৃতির বিনিময়কে উৎসাহিত করে সেটা তুলে ধরবে জর্জিয়া।
জর্জিয়ার রাজধানী তিবিলিসির একটি বিলাসবহুল হোটেল প্যারাগ্রাফ ফ্রিডম স্কোয়্যারে বিশ্ব পর্যটন দিবস ২০২৪ অনুষ্ঠিত হবে। এবছর বিশ্ব পর্যটন দিবসের লক্ষ্য হল পর্যটন ও শান্তি সংযোগসূত্র স্থাপন। জাতিসংঘ কীভাবে ভ্রমণ, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং সুরক্ষিত পর্যটন, শান্তির প্রচার, জাতিগত বিরোধের নিষ্পত্তি, পুনর্মিলন এবং বিশ্বব্যাপী মানুষে মানুষে মেলবন্ধন ঘটাবে এবারের বিশ্ব পর্যটন দিবসে তুলে ধরা হবে।
দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম
১৯৮০ সাল থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর দিনটি বিশ্ব পর্যটন দিবস হিসাবে পালিত হচ্ছে। এই দিনটিতেই জাতিসংঘ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার স্বীকৃতি লাভ করেছিল। এছাড়াও বিশ্ব পর্যটনের জন্য এই সময়টাই বেশ উপযুক্ত। তার কারণ হচ্ছে এটি উত্তর গোলার্ধে ভ্রমণ মরশুমের শেষে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ভ্রমণ মরশুমের শুরুতে আসে।
আমরা সকলেই বিশ্ব পর্যটন দিবসে অংশগ্রহণ করতে পারি। এই দিনটিতে নিজেদের, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির সম্বন্ধে জানতে স্থানীয় জাদুঘরে অথবা পার্কে অথবা যে কোনও ঐতিহ্যবাহী স্থানে যেতে পারি। এই দিনে আয়োজিত বিভিন্ন কর্মশালায় অংশগ্রহণ করতে পারি। সোশ্যাল মিডিয়াতে আমাদের ভ্রমণের গল্প শেয়ার করতে পারি। যাতে সেখানে যাবার আগ্রহ বাড়ে মানুষের। এই দিনটিতে পরিবারের সকলেই স্থানীয় রেস্তোরাঁয় খাওয়াদাওয়ার মাধ্যমে স্থানীয় ব্যবসাগুলোকে সমর্থন ও স্থানীয় অর্থনীতিতে অল্প অবদান রাখতে সাহায্য করতে পারি।
বিশ্ব পর্যটন দিবসের মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রাকৃতিক এবং সংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও উৎসাহিত করতে পারি। যাতে তাঁরা ভবিষ্যতে দেশ-বিদেশ অন্বেষণ করতে পারে এবং উপভোগ করতে পারে। পর্যটন সকলের জন্য একটি ইতিবাচক শক্তি। সেই শক্তি সকলের কার্যকরী রূপদান করতে সবাই এগিয়ে আসি তবেই দিনটির সার্থকতা।