ময়নাতদন্ত সঠিক বলে যে জুনিয়রদের স্বাক্ষর কাগজে, তাঁরাই বিদ্রোহী!

আরজি করের ময়নাতদন্ত নিয়ে আর একটি রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছে। সেই তদন্ত রিপোর্টের কিছু বিষয় বিতর্কের অবকাশ রেখে দিয়েছে।

Must read

প্রতিবেদন : আরজি করের ময়নাতদন্ত নিয়ে আর একটি রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছে। সেই তদন্ত রিপোর্টের কিছু বিষয় বিতর্কের অবকাশ রেখে দিয়েছে। ডাক্তারি ছাত্রীর মৃত্যুর পর থেকেই জুনিয়র ডাক্তারদের প্রায় অধিকাংশই দাবি জানিয়ে আসছিলেন, ময়নাতদন্ত সঠিকভাবে করা হয়নি। এই দাবিকে নস্যাৎ করে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট এমন একটি তথ্য এবার সামনে এসেছে। তথ্যটি কী? একটি হাতে লেখা সম্মতিপত্র। ছাত্রীর মৃত্যুর পর ময়নাতদন্তে যাঁরা উপস্থিত ছিলেন তাঁদের স্বাক্ষরিত সম্মতিপত্র। এই পত্রে তিনজন এমন জুনিয়র ডাক্তার স্বাক্ষর করেছেন, যাঁরা শুধু আন্দোলনের পুরোভাগে রয়েছেন তাই নয়, বিচার চাইছেন, ময়নাতদন্ত যথাযথ হয়নি বলে সমস্বরে আওয়াজ তুলছেন এবং প্রতিবাদ করছেন। আবার আরজি করে যে নতুন অ্যাডভাইজারি বোর্ড হয়েছে, সেই বোর্ডে তিনজনের নাম জ্বলজ্বল করছে। প্রশ্ন হল, সেদিন ময়নাতদন্ত শেষে কী এমন রিপোর্ট দিয়েছিলেন এই তিন জুনিয়র ডাক্তার যার জন্য এই বিতর্ক শুরু হয়েছে।

আরও পড়ুন-তিস্তা ব্যারেজ পরিদর্শনে মুখ্যসচিব

ময়নাতদন্তের শেষে পাঁচজন জুনিয়র ডাক্তার স্বাক্ষর করেছিলেন। এঁরা হলেন, তিতাস পাল, নম্রতা সাহা, রিয়া বেরা, রমা বেরা, মৌতৃষা ঘোষ। ময়নাতদন্ত হয়ে যাওয়ার পর তাঁরা কাগজে লিখেছেন, ‘উই ওয়্যার প্রেজেন্ট ডিউরিং অটোপ্সি অ্যান্ড উই আর স্যাটিসফায়েড।’ বাংলা করলে দাঁড়ায়, ময়নাতদন্তে আমরা উপস্থিত ছিলাম এবং গোটা প্রক্রিয়ায় সন্তুষ্ট। এঁরা কি সন্দীপ ঘোষ ঘনিষ্ঠ? এঁরাই কি ময়নাতদন্তকে প্রভাবিত করেছেন? মোটেই না। তার কারণ তাঁদেরকে ভরসা করেন বলেই জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি হয়ে এই তিনজন উপস্থিত ছিলেন। উদ্দেশ্য, যাতে কোথাও সন্দীপ ঘনিষ্ঠরা প্রভাব খাটাতে না পারে। এই তিনজনই পাস-আউট। তিনজনেই সন্তুষ্ট। তারপরেও তাঁরা প্রতিবাদে শামিল। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, জুনিয়র ডাক্তারদের কি জোর করে এই কথা লেখানো হয়েছিল? তাই যদি হয়, তাহলে পাল্টা প্রশ্ন ওঠে, দীর্ঘ প্রায় ৪০ দিন আন্দোলন চলেছিল। অন্ততপক্ষে ৫০টি সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। আন্দোলনের মুখ হিসেবে নানা জনে অন্তত হাজার খানেক ‘বাইট’ দিয়েছিলেন। একজনও একবারও ভুলেও তো বলেননি, তাঁদের জোর করে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মনমতো কথা লিখিয়ে নেওয়া হয়েছিল। যেহেতু একথা বলেননি তাহলে ধরে নিতেই হবে তাঁরা ময়নাতদন্তে সন্তুষ্ট ছিলেন। তাহলে গোটা আন্দোলন পর্বে বারবার কেন ময়নাতদন্তের রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন তোলা হল? যাঁরা তুললেন তাঁরাই কিনা ‘যথাযথ’ বলে স্বাক্ষর করে এসেছেন! এটা কোন ধরনের দ্বিচারিতা? কোন ধরনের মিথ্যাচার? কোন স্বার্থ চরিতার্থ করতে তাঁরা এই দু’মুখো সাপের অভিনয় করছেন? আর যদি ময়নাতদন্তে ‘ম্যানিপুলেশন’ হয়েই থাকে, তাহলে ময়নাতদন্তে যাঁরা ছিলেন, ৫ জন জুনিয়র ডাক্তার-সহ প্রত্যেকের বিরুদ্ধে এফআইআর করা উচিত। তাঁরা আসলে ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। এই যে বিতর্ক তার সমাধান জুনিয়র ডাক্তারদেরই করতে হবে। মশাল মিছিল করে আসল প্রশ্নগুলোকে এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা এবার বন্ধ হওয়া উচিত। তার কারণ, এতদিন এই প্রশ্নগুলোই কেউ তোলেননি। তুললেও এক শ্রেণির অপপ্রচারে চাপা পড়ে গিয়েছে। যাঁরা প্রত্যেকদিন নিয়ম করে মিছিল আর ডাক্তারদের প্রতিবাদ দেখিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের সৎসাহস থাকলে এই ম্যানিপুলেশন প্রকাশ্যে দেখিয়ে উত্তর চান জুনিয়র ডাক্তারদের কাছে।

Latest article