পুজোর সময় অনেকেই বাইরে বেড়াতে যান। উড়ে উড়ে যান দূরে দূরে কোথাও। বহু মানুষ যান রাজ্যের বাইরে। কেউ কেউ দেশের বাইরেও। তবে বহু মানুষ আছেন, যাঁরা পুজোর ক’টা দিন কলকাতা ছেড়ে নড়তে চান না। পুজোর উত্তাপ গায়ে মেখে ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখেন। মিশে যান জনসমুদ্রে। দূরের বহু মানুষ দুর্গাপুজো উপলক্ষে আসেন কলকাতায়। মহানগরের পুজো উপভোগ করার জন্য। বিদেশ থেকেও আসেন প্রচুর পর্যটক। কারণ, গত এক যুগে বাংলা তথা কলকাতার দুর্গাপুজোর খবর পৌঁছে গেছে বিশ্ববাসীর কানে। ফলে বেড়েছে আগ্রহ। সেই কারণেই পুজোর সময় দেখা মেলে বহু বিদেশি এবং অন্য রাজ্যের মানুষের। প্রত্যেকেই মেতে ওঠেন পুজোর (Durga Puja) আনন্দে।
পুজোপ্রেমীদের কথা ভেবে অন্যান্য বছরের মতো এবারও বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকারের পর্যটন দপ্তর।
৬ এবং ৭ অক্টোবর, চতুর্থী এবং পঞ্চমীতে পুজো পরিক্রমায় আছে ‘উদ্বোধনী’ প্যাকেজ। ওই দুদিন রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত কলকাতার সার্বজনীন পুজো মণ্ডপগুলি দেখার সুযোগ মিলবে। রবীন্দ্র সদন থেকে ছাড়বে এসি বাস। দেওয়া হবে ডিনার। খরচ জনপ্রতি ২১৯৯ টাকা। ঘোরানো হবে কলেজ স্কোয়্যার, মহম্মদ আলি পার্ক, কাশী বোস লেন, বাদামতলা আষাঢ় সংঘ, ৬৬-র পল্লি, মুদিয়ালি, একডালিয়া এভারগ্রিন, সিংহি পার্ক, হিন্দুস্তান রোড, রাজডাঙা নব উদয় সংঘ।
‘সনাতনী’ প্যাকেজ রয়েছে দুদিন। ১০ অক্টোবর এবং ১১ অক্টোবর। যাত্রা শুরু হবে রবীন্দ্র সদন থেকে। সকাল ৮টায়। চলবে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। দেওয়া হবে ব্রেকফাস্ট। দুপুরে শোভাবাজার রাজবাড়িতে মিলবে ভোগ। খরচ জনপ্রতি ২০৯৯ টাকা। ঘোরানো হবে খেলাৎ ঘোষ বাড়ি, শোভাবাজার রাজবাড়ি, চন্দ্র বাড়ি, রানি রাসমণি বাড়ি, ঠনঠনিয়া দত্ত বাড়ি, জোড়াসাঁকো দাঁ বাড়ি। ছাতুবাবু লাটুবাবুর বাড়ি ঘোরানো হবে সপ্তমীর দিন।
কলকাতার পাশাপাশি ‘হুগলি সফর’ প্যাকেজ রয়েছে দুদিন। ১০ অক্টোবর এবং ১১ অক্টোবর। যাত্রা শুরু হবে রবীন্দ্র সদন থেকে। এসি বাসে। শুরু সকাল ৭টায়। চলবে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। দেওয়া হবে ব্রেকফাস্ট এবং লাঞ্চ। খরচ সবমিলিয়ে জনপ্রতি ৩৬৯৯ টাকা। ঘোরানো হবে শ্রীরামপুর গোস্বামী বাড়ি, বুড়ি দুর্গা, শেওড়াফুলি, সুরেন্দ্রনাথ ঘোষের পুজো, শেওড়াফুলি রাজবাড়ির পুজো, হংসেশ্বরী মন্দির, অনন্ত বাসুদেব মন্দির, হুগলি গুপ্তিপাড়া দুর্গাবাড়ি পুজো, গুপ্তিপাড়া সেন বাড়ি ও অন্যান্য মন্দির।
এ ছাড়াও আছে অষ্টমীর দিন বেলুড় মঠে কুমারী পুজো দেখার ব্যবস্থা, অষ্টমী-নবমীর দিন সন্ধিপুজো দেখার ব্যবস্থা। সেইসঙ্গে রয়েছে ধুনুচিনাচ ও দেবীবরণ দেখার ব্যবস্থাও। সবমিলিয়ে দুর্দান্ত অফার। রাজ্য পর্যটন দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন আগ্রহীরা। সরকারি ব্যবস্থাপনায় নির্ঝঞ্ঝাটে পুজোর ক’টা দিন ঠাকুর দেখার জন্য চলছে বুকিং। বুকিংয়ের জন্য সরাসরি পর্যটন দফতরের কার্যালয় অর্থাৎ বিবাদী বাগের অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করতে হবে। দেখে নেওয়া যায় পর্যটন দফতরের ওয়েবসাইট।
আরও পড়ুন-নিজের লেখা নিজের সুর খালি গলায় গান গেয়ে মঞ্চ মাতালেন নেত্রী
দুর্গাপুজো (Durga Puja) উপলক্ষে রাজ্য পরিবহণ দফতরও বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। পঞ্চমী থেকেই শুরু হবে সারারাত সরকারি বাস পরিষেবা। কলকাতা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান, যেমন হাওড়া, শিয়ালদা এবং বারাসতকে কেন্দ্র করে এই বাস পরিষেবা চালু হবে। এছাড়াও, পরিবহণ দফতর এই বছরও দর্শনার্থীদের জন্য পুজো পরিক্রমার বিশেষ প্যাকেজ নিয়ে এসেছে। ষষ্ঠী থেকে শুরু হবে এই বিশেষ পরিষেবা, যেখানে দর্শনার্থীরা কলকাতার ঐতিহ্যবাহী বনেদি বাড়ির পুজো এবং অন্যান্য বিখ্যাত পুজো দেখার সুযোগ পাবেন। এই পরিক্রমায় ব্যবহার করা হবে বিলাসবহুল ভলভো বাস, সাধারণ বাস, এমনকী জলপথে লঞ্চও।
শোভাবাজার রাজবাড়ি, বেলুড় মঠ, সাবর্ণ রায়চৌধুরীর বাড়ি এবং বেহালার সোনার দুর্গাবাড়ির পুজো দেখার জন্য ষষ্ঠী থেকে নবমী, ভলভো এসি বাস ছাড়বে এসপ্ল্যানেড থেকে। প্রতিজনের ভাড়া ধার্য করা হয়েছে ২০০০ টাকা। এতে জলখাবার এবং লাঞ্চও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এছাড়াও রয়েছে জলপথে উত্তর কলকাতার পুজো পরিক্রমা। মিলেনিয়াম পার্ক থেকে লঞ্চে চড়ে উত্তর কলকাতার বিখ্যাত পুজো (Durga Puja) দেখানো হবে। এই ভ্রমণের সময়সীমা প্রায় পাঁচ ঘণ্টা। এর জন্য ভাড়া ধার্য করা হয়েছে ৮০০ টাকা।
শহরের বাইরের ঐতিহ্যবাহী পুজো দেখার জন্য ধান্যকুড়িয়া ও আড়বালিয়ার সাবেকি পুজো দেখানোর ব্যবস্থাও থাকছে। এসি বাসে এই সফরের খরচ হবে ২০০০ টাকা।
হাওড়া সিটিসি টার্মিনাল, টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপো, বারাসত কলোনি মোড় এবং বারাকপুর থেকে ছাড়বে নন-এসি বাস। সেগুলো কলকাতার বিভিন্ন বিখ্যাত পুজো দেখাবে। অষ্টমীর দিন সকালে কামারপুকুর এবং জয়রামবাটির পুজো দেখতে নন-এসি বাসে যাওয়ার সুযোগও থাকছে। খরচ ৮০০ টাকা।
ডব্লিউবিটিসি-র সাইটে গিয়ে সহজেই প্যাকেজের বুকিং করা যাবে। পাশাপাশি, বুকিং করা যাবে পরিবহণ নিগমের সমস্ত ডিপো থেকেও।