প্রতিবেদন: আশির দশকে লেবাননের ধর্মগুরুদের অনুপ্রেরণায় শিয়াভিত্তিক সংগঠন হিজবুল্লা তৈরির পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে তাদের সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা করেছে শিয়াপন্থীদের দেশ ইরান। প্যালেস্টাইনের গাজা ভূখণ্ডে ইজরায়েলের ধারাবাহিক আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে হামাসকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেছিল লেবাননের হিজবুল্লা ও ইরান। কিন্তু সম্প্রতি হিজবুল্লা প্রধান হাসান নাসরুল্লার মৃত্যু হামাসের পাশাপাশি বড় চাপের মধ্যে ফেলেছে ইরানকে। ইজরায়েল, আমেরিকা-সহ পশ্চিমি শক্তির উদ্দেশে প্রত্যাঘাতের হুমকি দিলেও খোমেইনির দেশের বড় ভরসার জায়গা হিজবুল্লা। কিন্তু এই মুহূর্তে তাদের ক্রমাগত শক্তিক্ষয়ে প্রবল চাপে পড়েছে তেহরান। আর এই সুযোগে যুদ্ধবিরতির পথে হাঁটার বদলে দুর্বল হয়ে পড়া হামাস-হিজবুল্লা সহ সংগঠনগুলিকে শিকড় থেকে উপড়ে ফেলতে চায় নেতানিয়াহু প্রশাসন। হামাস ও হিজবুল্লার শীর্ষনেতাদের নিকেশ করার পর এখন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লা খোমেইনি (Ayatollah Khamenei) হলেন ইজরায়েলের সবচেয়ে বড় টার্গেট। মঙ্গলবার তেল অভিভে ইরানি মিসাইল হানার পর খোমেইনিকে হত্যার হুমকি দিয়েছে নেতানিয়াহু প্রশাসন। আপাতত ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে কোনও গোপন স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে খবর।
এদিকে জানা যাচ্ছে, লেবাননে হিজবুল্লার সদ্যপ্রয়াত প্রধান হাসান নাসরাল্লাকে তাঁর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সতর্ক করে দিয়েছিলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লা আলি খোমেইনি (Ayatollah Khamenei)। ইজরায়েলি হামলায় নিহত হওয়ার কয়েক দিন আগে নাসরাল্লাকে লেবানন ছেড়ে যেতে বার্তাও পাঠান খোমেইনি। সংশ্লিষ্ট ইরানি তিনটি সূত্র রয়টার্সকে এই তথ্য জানিয়েছে। সূত্রের খবর, ইরানের সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় ইজরায়েল-সমর্থিত ব্যক্তিরা ঢুকে পড়েছেন কি না, সেটা নিয়েও এখন গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে ইরানি প্রশাসনের। এমনিতেই ইজরায়েলি গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের দুর্দান্ত নেটওয়ার্ক ও সাফল্যের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। তার উপর খোমেইনিকে নিকেশ করার কথা সরকারিভাবে ঘোষণা করেছে ইজরায়েল। এই পরিপ্রেক্ষিতে মুসলিম আবেগ উসকে দিতে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে মুসলিম দুনিয়াকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিয়েছেন খোমেইনি।
প্রসঙ্গত, লেবাননে গত ১৭ সেপ্টেম্বর পেজার, ওয়াকিটকি-সহ হিজবুল্লার ব্যবহৃত যোগাযোগের বিভিন্ন যন্ত্রে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এর পরপরই হিজবুল্লা প্রধানকে একটি বার্তা পাঠান খোমেইনি। ওই বার্তায় হাসান নাসরাল্লাকে দ্রুত লেবানন ছেড়ে ইরানে চলে আসতে বলেন তিনি। ইরানের এক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ইজরায়েলিরা হিজবুল্লার অভ্যন্তরে ঢুকে কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং হাসান নাসরাল্লাকে হত্যা করার জন্য আগাম ছক কষেছে এমন গোয়েন্দা বার্তার কথাও ইরানের সর্বোচ্চ নেতার পক্ষ থেকে হিজবুল্লা প্রধানকে জানানো হয়। ওই সূত্রের মতে, ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডস কোরের (আইআরজিসি) কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্বাস নিলফোরোওশানকে লেবাননে হিজবুল্লা প্রধানের কাছে বার্তা দিয়ে পাঠিয়েছিলেন স্বয়ং খোমেইনি। ইজরায়েল যখন বেইরুটে হাসান নাসরাল্লার বাঙ্কারে হামলা করে, তখন সেখানে আব্বাস নিলফোরোওশান ছিলেন। তিনিও সেখানে হিজবুল্লা প্রধানের সঙ্গে নিহত হন। হাসান নাসরাল্লার হত্যার ঘটনার পর গত শনিবার থেকে খোমেইনিকেও অজ্ঞাত নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গোপন স্থান থেকেই তিনি ইজরায়েলে প্রতিশোধমূলক হামলা চালানোর নির্দেশ দিচ্ছেন।
আরও পড়ুন- হরিয়ানায় শেষ দিনের প্রচারে মরিয়া সব পক্ষ