মৌসুমী দাস পাত্র, নদিয়া: বঙ্গে দুর্গাপুজোকে সর্বজনীন রূপ দেওয়া মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির পুজো এবারও উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে পালিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার প্রতিপদের দিন রীতি অনুযায়ী রাজরাজেশ্বরীর হোম জ্বালানো হয়। কয়েক কেজি ঘি, বেলকাঠ, পাতা, জল, মধু, কলার উপাচার দিয়ে। হোমের আগুন জ্বলবে টানা নবমী পর্যন্ত। রাজরাজেশ্বরী পাটে আসীন হন বোধনের সময়। তাঁকে বেহারাদের কাঁধে চড়িয়ে রাজবাড়ির পঙ্খ অলঙ্কৃত দুর্গাদালানে অধিষ্ঠিত করা হয়। রাজবাড়ির রাজরাজেশ্বরীর পুজোর বয়স চারশো বছরের বেশি।
আরও পড়ুন-সিবিআইকে এসআইটি গড়ে তদন্তের নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের, তিরুপতির লাড্ডু-বিতর্ক
মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রই প্রথম সর্বসাধারণের মধ্যে দুর্গোৎসবের প্রচলন করেন যা পরবর্তী কালে সর্বজনীন পরিচিতি পায়। উল্টোরথের পরের দিন পাটপুজোর মাধ্যমে শুরু হয় প্রতিমা নির্মাণের কাজ। প্রচলিত প্রতিমার থেকে রাজবাজেশ্বরী মূর্তি আলাদা। আগে মূর্তি তৈরি করতেন সাধন পাল। তাঁর প্রয়াণের পর মূর্তির পরিবর্তন হয়। দুর্গার সামনের দুটি হাত বড়, পিছনের আটটি হাত আকারে অপেক্ষাকৃত ছোট। দেবীর গায়ে থাকে যুদ্ধের বর্ম। পিছনে অর্ধগোলাকৃতি সাবেক বাংলা চালির এক দিকে আঁকা দশাবতার, অন্য দিকে দশমহাবিদ্যা। মাঝে থাকেন পঞ্চানন শিব। দেবীর বাহন সিংহ। সামনে ঝুলন্ত অভ্রধারা। প্রতিমার সাজ প্রচলিত ডাকের সাজের চেয়ে আলাদা। একে বলা হয় ‘বেদেনি ডাক’। এখন আর কামান দেগে সন্ধিপুজো না হলেও আজও সেই সন্ধিপুজো অন্যতম আকর্ষণ। প্রথামতো থাকে ১০৮টি পদ্মফুল ও ১০৮টি প্রজ্বলিত প্রদীপ। আগে হত ছাগবলি। এখন শুধু আখ ও চালকুমড়ো বলি হয়। মহালয়ার পর থেকেই পুজোর ভোগ শুরু হয়ে যায়। খিচুড়ি, ভাজা, ছ্যাঁচড়া-সহ একাধিক তরকারি, চাটনি, সুজি, পায়েস থাকে। সপ্তমীতে সাত রকম ভাজা, অষ্টমীতে পোলাও, ছানার ডালনার সঙ্গে ভাত, আট রকম ভাজা, মিষ্টি, ক্ষীর-সহ একাধিক পদ। নবমীতে নয় রকম ভাজা, তিন রকম মাছ, ভাত, মিষ্টি। দশমীতে গলা ভাত, সিঙি মাছ, খই, ফল, দই, চিড়ের ভোগ। দশমীতে হয় সকলকে নিয়ে সিঁন্দুরখেলা। আগে রাজবাজেশ্বরীর বিসর্জনের পরেই শুরু হত কৃষ্ণনগরের সব প্রতিমার বিসর্জন। এখন কিছু বদল হয়েছে।