প্রচুর খাওয়াদাওয়া হবে
শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
পুজোর সময় বাড়িতেই থাকব। কারণ সারা বছর এতটাই ব্যস্ত থাকি যে পরিবারকে সময় দিতে পারি না। মাকে সময় দিতে পারি না। পুজোর ক’টা দিন মায়ের সঙ্গে কাটানোই মূল লক্ষ্য। তাই কোথাও যাব না। পুজোর সময় আমার দিদিরা আসবে শান্তিনিকেতন থেকে। দাদা আসবে। আসবে শ্বশুরবাড়ির সবাই। মুম্বই থেকে আসবে নন্দিতাদির বোন। সে আমারও বোন। সবাই মিলে একসঙ্গে পুজো কাটাব। আনন্দ করব। প্রচুর খাওয়াদাওয়া হবে। মূলত বাড়ির রান্না। ষষ্ঠী এবং অষ্টমীর দিন নিরামিষ। অন্যান্য দিন হবে মাছ, মাংস। আমার স্ত্রী এবং দিদি রান্না করবে। পাশাপাশি হবে জমজমাট আড্ডা। আমাদের বাড়ির পাশেই পুজো। তবে আমরা অঞ্জলি দিই বাড়িতেই। রাধামাধব আছেন। আসেন পুরোহিত মশাই। নিত্যপুজো হয়। এবারেও আসবেন ঠাকুর মশাই। মায়ের সঙ্গে সবাই মিলে অঞ্জলি দেব। এবার পুজোয় মুক্তি পাচ্ছে আমাদের নতুন ছবি ‘বহুরূপী’। পরিবারের সবাই মিলে একদিন ছবিটা দেখতে যাব।
আরও পড়ুন-পূজে দুর্গা রঘুপতি
এড়িয়ে চলি ভিড়ভাট্টা
ঋদ্ধি সেন
পুজোর সময় আমাদের নাটকের শো থাকে না। শ্যুটিং থাকে না। এই সময় আমি বাড়িতেই থাকি। এবারের পুজোতেও বাড়িতেই থাকব। সিনেমা দেখব। কয়েকটি নতুন বাংলা ছবি রিলিজ করছে। সেগুলো দেখব। দেখব নতুন হিন্দি ছবি ‘জোকার’ও। বাড়িতে বন্ধুবান্ধবরা আসে। তাদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা হয়। আমি ঠাকুর দেখতে খুব একটা যে পছন্দ করি, তা নয়। এড়িয়ে চলি ভিড়ভাট্টা। তবে কখনওসখনও বেরোতে হয়েছে। মূলত পূজা পরিক্রমার কাজে। বিচারক হিসেবে। তবে এই বছর কোনও পূজা পরিক্রমার সঙ্গে যুক্ত হইনি। ফলে বেরোনোর সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। পুজোর সময় কোনও বিশেষ পোশাক নিয়ে আমার ফ্যাশিনেশন নেই। যা পাই, তাই পরি। খাওয়া হয় বাড়ির খাবার। মা রান্না করেন। আমাদের বাড়ির কাছেই পুজো হয়। ঘরোয়া এবং আন্তরিক। রাতের দিকে যাই। কিছুটা সময় কাটিয়ে আসি। এবারও যাব। এই ভাবেই কাটবে আমার পুজোর দিনগুলো।
পুজো মণ্ডপে ছবি আঁকব
মৌবনী সরকার
এবার পুজোয় খুব বেশি এদিক-ওদিক যাব না। হইহুল্লোড় করব না। তবে নিয়ম মেনে যা যা করণীয়, সবই করব। নিজের জন্য নতুন শাড়ি কিনিনি। মা তিনটি শাড়ি উপহার দিয়েছেন। সেগুলোই পরব। বোনেরা দিয়েছে কিছু হাতের কাজের সাজের জিনিস। পরব সেগুলোও। ষষ্ঠীর দিন সাজব নতুন শাড়িতে। সৃজনশীল কিছু করার ইচ্ছা আছে। যে কোনও একটি পুজো মণ্ডপে বসে দীর্ঘক্ষণ ছবি আঁকব। মায়ের ছবি। অয়েল পেইন্টিং। আঁকব শান্তিপূর্ণ পরিবেশের ছবি। যেটা আমাদের কাঙ্ক্ষিত। এইভাবেই আমি শান্তির বার্তা দিতে চাই। আমরা বিনোদন জগতের মানুষ। অনেকেই আমাদের অনুসরণ করেন। আশা করি তাঁদের মধ্যে কিছু মানুষ অনুপ্রাণিত হবেন। খুঁজে পাবেন শান্তি। এছাড়াও প্রতি বছরের মতো অষ্টমীর অঞ্জলি দেব। যাব মা-বাবার সঙ্গে। আমাদের বাড়ির সামনেই পুজো। এবার খুব ভোরে পড়েছে অঞ্জলি। মানব সমস্ত নিয়ম। স্নান করে শাড়ি পরে সময়মতো পৌঁছে যাব মণ্ডপে। দাঁড়াব দেবী দুর্গার সামনে। বিশ্বের মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করব। আশা করি মা আমার কথা শুনবেন। পুজোর ছুটিতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানোর পাশাপাশি কিছুটা সময় আড্ডা দেব বন্ধুদের সঙ্গে। ঘুরে দেখব উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার বনেদি পরিবারের পুজো এবং কিছু ছোট ছোট পুজো। কয়েকটি জায়গা থেকে আমন্ত্রণ পেয়েছি। এইভাবেই কাটাব পুজোর দিনগুলো। বাড়তি উচ্ছ্বাসে গা ভাসাব না। চাইব, সকলের ভাল হোক। আলো হোক। পরিবেশ সুন্দর থাকুক।
আরও পড়ুন-পুজোতে শিশামারা নদীর সঙ্গে গল্প
নিজের মতো সময় কাটাব
সোনামণি সাহা
এবার পুজোয় কলকাতাতেই থাকছি। টুকটাক কাজ রয়েছে। সেগুলো করব। উপস্থিত থাকব কিছু পুজো মণ্ডপে। যদিও কোনও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকা সম্ভব হবে না। কারণ ছুটি পাব না। শ্যুটিং চলবে। আলাদাভাবে ঠাকুর দেখতে যাওয়া অনেক আগেই মোটামুটি বন্ধ হয়ে গেছে। আগে কয়েকবার বিভিন্ন চ্যানেলের পূজা পরিক্রমার বিচারক হিসেবে ঘুরেছি মণ্ডপে মণ্ডপে। আমাদের বাড়ির সামনে পুজো হয়। সেখানে কিছুটা সময় কাটাই। অষ্টমীর অঞ্জলি দিই। অবশ্যই শাড়ি পরে। অন্যান্য সময় ক্যাজুয়াল পোশাক পরলেও, পুজোর সময় শাড়ি আমার প্রথম পছন্দ। সারা বছর ব্যস্ততা। শ্যুটিং, ইভেন্ট। ফলে চেষ্টা করি পুজোর ক’টা দিন বাড়িতে থাকতে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যত বেশি সম্ভব সময় কাটাতে। টিভি দেখি, গান শুনি, বই পড়ি। এই সময় বিভিন্ন পত্রিকার শারদীয়া সংখ্যা প্রকাশিত হয়। পড়ি সেগুলোও। একেবারে নিজের মতো সময় কাটাই। এবারেও তাই করব। আমি স্ট্রিট ফুড খেতে খুব ভালবাসি। তবে বছরের অন্যান্য সময় সুযোগ হয় না। ডায়েটে থাকি। তবে পুজোর সময় স্ট্রিট ফুড খাই। এবারও খাব। মোমো, বিরিয়ানি খুব প্রিয়। ছোটবেলায় পুজোর সময় বন্ধুদের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ হত। আড্ডা হত। এখন সেটা কমে গেছে। কোনও কোনও বছর পুজোর সময় ঘুরতেও গেছি। পাহাড় আমার খুব পছন্দের। একবার সিকিমে গিয়েছিলাম। ছোট্ট একটি পাহাড়ি গ্রামে দেখেছিলাম স্থানীয়দের পুজো। আড়ম্বরহীন। গুটিকয়েক মানুষের আয়োজন। ভাল লেগেছিল।
পুজো কাটাব দেশের বাড়িতে
বিশ্বনাথ বসু
পুজোয় আমি কলকাতায় থাকি না। বসিরহাট মহকুমার বাদুড়িয়া থানার আড়বেলিয়া গ্রামে আমাদের দেশের বাড়িতে দুর্গাপুজো হয়। এবার পুজোর ৩৫৪তম বছর। পঞ্চমীর রাতে সেখানেই চলে যাব। কাটাব পুজোর দিনগুলো। আমাদের পুজো হয় নিষ্ঠার সঙ্গে। আসেন আত্মীয়স্বজনেরা। এবারেও অনেকেই আসবেন। সবাইকে বলা হয়ে গেছে। প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় অনেক আগে থেকেই। পুজোর সময় জমিয়ে খাওয়াদাওয়া হয়। সকালে লুচি, কুমড়ো-আলুর তরকারি। সঙ্গে মিষ্টি। দেশের বাড়িতে পুজোর সময় একটা বিশেষ ধরনের গজা তৈরি হয়। নিমকি তৈরি হয়। দারুণ লাগে। দুপুরে ভাত, ডাল, ছ্যাঁচড়া, মাছ, চাটনি, পাঁপড়, মিষ্টি, দই। প্রতিদিন আমিষ এবং নিরামিষ দুই ধরনের আইটেম থাকে। অষ্টমীর দিনেও। যার যেটা পছন্দ। নবমীর দিন মাংস। পুজোর দিনগুলোয় ধুতি-পাঞ্জাবি পরতে ভালবাসি। তবে পুজোর সকালে আমি জোড় পরি। আমাদের বাড়িতে এক হাজার আটটা বেলপাতার হোম হয়। সেটায় অংশ নিই। গ্রামে মোট ১৮টি দুর্গাপুজো হয়। তবে বাড়ি থেকে বেরোনোই হয় না। ফলে অন্য কোনও পুজো দেখার সুযোগ পাই না। শুধু সকালে পুকুরে স্নান করতে যাই। তারপর সারাদিন বাড়িতে। দূর-দূরান্ত থেকে বহু মানুষ আমাদের বাড়িতে আসেন। পুজো দেখতে। তাঁরা আমার সঙ্গেও দেখা করেন। একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া করি। ভাল লাগে। পুজোর সময় আমাদের বাড়ি থেকে কেউ না খেয়ে ফেরেন না। অষ্টমীর সন্ধেবেলায় বাড়ির ছোটরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। কেউ গান করে, কেউ আবৃত্তি করে, কেউ নাচ করে। আমিও গান করি। কিশোর কুমারের গান, কুমার শানুর গান। একটা সময় নাটক হত। যাই হোক, এই ভাবেই গ্রামের বাড়িতে কাটবে আমার পুজোর দিনগুলো।
আরও পড়ুন-আজ থেকে গঙ্গার নিচে অতিরিক্ত মেট্রো পরিষেবা
নৃত্যানুষ্ঠান পরিচালনা করছি
মাফিন চক্রবর্তী
যে আবাসনে থাকি, সেখানে দুর্গাপুজো হয়। গত বছর থেকে পুজোর দায়িত্ব অনেকটাই আমার কাঁধে। বিশেষত সাংস্কৃতিক দিকটা। নৃত্যানুষ্ঠান পরিচালনা করছি। ফলে পুজোর আগের সময়টা আমাকে খুব ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। কিছুদিন আগেই শেষ হয়েছে আমার একটি সিরিয়াল। আবার কাজ শুরু করব পুজোর পর। ফলে অনেকটা সময় আমি রিহার্সালে দিতে পারছি। আমার নিজের একটি নাচের গ্রুপ আছে। সেখানে ক্লাস নিতে হয়। নতুন নাচ তোলাতে হয়। কারণ পুজোর সময় প্রচুর অনুষ্ঠান। পাশাপাশি আবাসনের অনুষ্ঠানের জন্যেও নাচ তোলাতে হচ্ছে। বাচ্চারা যেমন নাচ করে, তেমন নাচ করে বড়রাও। বেছে নিয়েছি থিম, ‘নারী নারায়ণী মহিষাসুরমর্দিনী’। পুজোর সময় বাইরে বেড়াতে যেতে একেবারেই পছন্দ করি না। আমার কাছে পুজো মানেই কলকাতা। অনেকেই ভিড় এড়িয়ে চলে। তবে আমি পুজোর ভিড় ভালবাসি। ছোটবেলায় মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে ঠাকুর দেখতাম। খুব আনন্দ হত। অভিনয়ের মাধ্যমে একটু পরিচিতি পাওয়ার পর বিভিন্ন সংস্থার পূজা পরিক্রমায় ডাক পেয়েছি। বিচারক হিসেবে। খুব সহজেই মণ্ডপে পৌঁছে যেতে পেরেছি। মন দিয়ে দেখেছি ঠাকুর। এই বছর কোনও পূজা পরিক্রমায় আমি থাকছি না। এবার আমার ধ্যানজ্ঞান শুধুমাত্র আমার আবাসনের পুজো। সেখানেই কাটাব বেশিরভাগ সময়। খাওয়াদাওয়া, আড্ডা, অনুষ্ঠান— আশা করি দারুণ কাটবে। ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরতেই বেশি পছন্দ করি। তবে পুজোর সময় অবশ্যই শাড়ি পরব। অঞ্জলি দেওয়ার সময়। ডায়েটের সঙ্গে আমার কোনও রকম সম্পর্ক নেই। খেতে ভালবাসি। পুজোর সময় কবজি ডুবিয়ে খাব। তবে রেস্তোরাঁয় যাব না। প্রচণ্ড ভিড়। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। আমাদের আবাসনে নানা রকমের স্টল বসে। সেখানে খাওয়াদাওয়া করব। দিনের বেলায় আবাসনের পুজোয় হয় খাওয়াদাওয়া। নানা রকমের পদ। পুজোয় আড্ডা হয়। তবে ছোটবেলার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয় না। তারা সব বেড়াতে যায়। অভিনয় জগতের বন্ধুরাও পুজোর সময় বেড়াতে যায়। আমাকেও যেতে বলেছিল। কিন্তু আমি যাইনি। আমার আবাসনের পুজো, অনুষ্ঠান, নাচের গ্রুপের ছাত্রছাত্রীদের ছেড়ে এই সময় আমি কোথাও যাব না।
আরও পড়ুন-পুজোর আগেই ভাঙা রাস্তা সারিয়ে দিচ্ছে জেলা পরিষদ, ছয় বছরেও ফ্লাইওভারের কাজ শেষ করছে না রেল
বন্ধুদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা
সত্যম ভট্টাচার্য
পুজোর সময় বাইরে কোথাও যেতে ইচ্ছে হয়। দূরে কোথাও। অচেনা অজানা জায়গায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যাওয়া হয়ে ওঠে না। কারণ এই সময় বন্ধু-বান্ধবরা বাইরে থেকে আসে। পুজোর ক’টা দিন জমিয়ে আড্ডা হয়। এবারেও হবে। ভিড়ভাট্টায় খুব একটা বাইরে বেরোই না। ঠাকুর দেখতে যাই দশমীর সকালে। ফাঁকায় ফাঁকায়। বাকি দিনগুলো কাটাই বন্ধু-বান্ধবদের বাড়িতে। নিজের বাড়িতে খুব কমই থাকি। মা-বাবা যান কালীঘাটে। সেখানে আমাদের পুরনো পাড়ায় দুর্গাপুজো হয়। ওখানেই তাঁরা খাওয়াদাওয়া করেন। আমাদের এই পাড়াতেও পুজো হয়। তবে আমি খুব একটা জড়িত থাকি না। বরং আমি বেশি মেতে উঠি সরস্বতী পুজো নিয়ে। ওই পুজোটা আমরা নিজেরাই আয়োজন করি। গত কয়েক বছর অষ্টমীর অঞ্জলি দেওয়া হয়ে ওঠেনি। তবে এই বছর দেব। পুজোর পোশাক নিয়ে খুব একটা ভাবনাচিন্তা করি না। যেটায় কমফর্ট ফিল করি, সেটাই পরি। পুজোর একটা দিন পাজামা-পাঞ্জাবি পরতে ভাল লাগে। খাওয়াদাওয়া নিয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যা পাই, তাই খাই। বড় রেস্তোরাঁতেও খাই, আবার রাস্তার ধারের দোকানের খাবারও খাই। গতবছর একটা পূজা পরিক্রমায় অংশ নিয়েছিলাম। এবছর আমন্ত্রণ পাইনি। পুজোর সময় বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান হয়। আমি একটু এড়িয়েই চলি। কারণ এই ক’টা দিন আমি নিজের মতো করে সময় কাটাতে পছন্দ করি। বহু বছর আগে পুজোয় নাটকের শো পড়েছিল। এখন আর পড়ে না। কারণ পুজোর মঞ্চে এখন নাটক খুব একটা হয় না। নাচ-গানই বেশি হয়। পাশাপাশি আয়োজিত হয় বসে আঁকো প্রতিযোগিতা। আমি মুখিয়ে আছি পুজোর সময় বন্ধুদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দেওয়ার জন্য।