অপরাজিতা জোয়ারদার, রায়গঞ্জ: উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারের ভূপালপুর রাজবাড়ির পুজো জেলার ঐতিহ্যবাহী পুজোগুলির একটি। আজও একচালার ডাকের সাজের প্রতিমা দিয়ে জমিদারি প্রথা অনুসারে দুর্গা পুজো করতে চলেছেন রাজা ভূপাল চন্দ্র রায় চৌধুরীর বংশধরেরা। জানা যায়, মুঘল সম্রাট শেরশাহের আমল থেকেই এই বংশের দূর্গাপুজার প্রচলন হয়েছিল। যদিও বাংলার নবাব আলিবর্দি খানের আমলের এই পুজো বলে মনে করেন ইতিহাসবীদরা।
আরও পড়ুন-কমবে রোগী হয়রানি, পরিষেবায় আসবে স্বচ্ছতা, অক্টোবরেই চালু হয়ে যাচ্ছে সেন্ট্রাল রেফারেল সিস্টেম
রাজ পরিবারের বর্তমান বংশধর অভিষেক রায় চৌধুরী বলেন, আমাদের আদি বাড়ি ছিল ইটাহারের চূড়ামন এলাকায়। সেখানেই দেবী দূর্গার আরাধনা হত। মহানন্দা নদীর করাল গ্রাসে রাজবাড়ি ও রাজ্যপাট চলে যায় নদীগর্ভে। তারপর সেখান থেকে চলে এসে দূর্গাপুরে দয়াময়ী রায়চৌধুরীর আমলে নির্মিত হয় রাজপ্রাসাদ ও দেবী দূর্গার মন্দির। সে সময় ভুপালচন্দ্র রায়চৌধুরী নাবালক ছিলেন। পরবর্তীতে ইউরোপীয় সংস্কৃতির আদলে তৈরি এই রাজবাড়ির দ্বিতল ভবন নির্মান হয়। পূজোর কটাদিন এলাকার সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষের ভোজনের ব্যাবস্থাও থাকত। মহালয়ার দিন থেকেই দূর্গার আরাধনায় মেতে উঠতেন রাজ পরিবারের সদস্যরা এবং এতদঅঞ্চলের বাসিন্দারা। জোড়া মোষ ও পাঠাবলীর মাধ্যমে আগে দেবীর বোধন হত মহালয়াতেই। তবে এখন মহাষষ্ঠীতেই হয় দেবীর বোধন। বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলি প্রথা। যদিও পূজোর নিয়ম নিষ্টা রয়ে গিয়েছে আগের মতোই। এখানে অসুরের গায়ের রঙ হয় ঘন সবুজ আর দেবী দূর্গার মাথার উপরে ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বরের অধিষ্ঠান থাকে। নবমীর পুজোয় ভূপালপুর রাজবাড়ির বিশেষত্ব হল, এদিন পুজোর ভোগ ও ফল ফলাদি পুজোর পর ঠাকুর দালানের উঁচু জায়গায় বেঁধে রাখা হয়। এরপর গ্রামের বাসিন্দা ও পরিবারের লোকেরা যে যেভাবে যতটা ফল পেরে নিতে পারে সেটাই একটা খেলার মাধ্যমে আনন্দ উপভোগ করা হয়। পুজো হয় বাড়ির অস্ত্ররও।