কৃষক আন্দোলন এবং তার সাফল্য নিয়ে আজ আলোচনা দেশ জুড়ে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কৃষকের জমিরক্ষার লড়াই কয়েক বছর আগে দিশা দেখিয়েছিল দেশকে, বদল হয়েছিল ১৮৯৪ জমি অধিগ্রহণ আইনের। কেমন ছিল সেই দিনগুলি, লিখছেন বিতনু চট্টোপাধ্যায়)
২০০৭ সালের ১৪ মার্চ সন্ধে থেকে টানা প্রায় পাঁচ ঘণ্টা চণ্ডীপুরের মোড়ে সিপিএম বাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ থাকার পর রাত প্রায় ১১টা নাগাদ তমলুকে ফিরলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাধারণ হোটেলের ছোট্ট একটা ঘরে রাতে থাকলেন দোলা সেন এবং অনুরাধা পুততুণ্ডর সঙ্গে। পরদিন ১৫ মার্চ সকালে উঠে রওনা দিলেন নন্দীগ্রামের উদ্দেশে।
আরও পড়ুন-Railway School: রেলের চক্রান্ত
চণ্ডীপুরের মোড় থেকে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রীর কনভয় ঢুকে পড়ল নন্দীগ্রামের দিকে। কিন্তু কিছুটা এগোতেই হাঁসচড়া মোড়ে সিপিএমের অবরোধ। তাদের বিচিত্র দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নন্দীগ্রামে ঢুকতে দেওয়া হবে না। দীর্ঘক্ষণ থমথমে মুখে গাড়িতে বসে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী। সিপিএম বাহিনীর সামনে নীরব দর্শকের ভূমিকায় পুলিশ। ঘণ্টা দেড়েক পর সেই অবরোধ সরিয়ে একটু এগোতেই আবার রেয়াপাড়ার মোড়ে অবরোধ। শেষ পর্যন্ত দুপুরে নন্দীগ্রাম হাসপাতালে পৌঁছতে পারলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী। প্রচুর গুলিবিদ্ধ এবং পুলিশের হাতে আক্রান্ত জখম মানুষ তখন হাসপাতালে ভর্তি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হাতের সামনে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন তাঁরা।
আরও পড়ুন-দুর্ঘটনা রুখতে শহরে এবার জরিমানাও
সকাল থেকে একের পর এক জায়গায় সিপিএমের অবরোধে আটকে নন্দীগ্রাম হাসপাতালেই অসুস্থ হয়ে পড়লেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী। শেষ পর্যন্ত জখম এবং নিহতদের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে নন্দীগ্রাম ছাড়লেন অসুস্থ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর বারবারই কখনও সিঙ্গুর, কখনও নন্দীগ্রামে ছুটে গিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী।
আরও পড়ুন-গান শুনিয়ে রোগীদের হাসপাতালে চিকিৎসা
২০০৭ সালেরই নভেম্বরে নন্দীগ্রামে সিপিএমের অপারেশন সূর্যোদয়ের সময়ও সেখানে গিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী। বারবার সিপিএম বাধা দিয়েছে তাঁকে। কিন্তু ফেরাতে পারেনি লড়াইয়ের ময়দান থেকে। ২০০৭ সালের ১০ নভেম্বর এমনই এক দিন। সিপিএম গুলি চালিয়ে নন্দীগ্রাম দখল করছে খবর পেয়ে কলকাতা থেকে রওনা দিলেন নেত্রী। এবার একেবারে কোলাঘাটের কাছেই মেচেদায় রাস্তা অবরোধ করে তাঁকে আটকে দিল সিপিএম। সারা রাত কোলাঘাটেই কাটালেন তিনি, হাল ছাড়লেন না।
আরও পড়ুন-ক্লাস নিলেন বিডিও
পরদিন সকালে পাঁশকুড়া হয়ে তৃণমূলের এক যুবনেতার বাইকে চেপে তমলুকে পৌঁছলেন নেত্রী। ২০০৬ সালের বিধানসভা ভোটের পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে জমিরক্ষার যে আন্দোলন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুরু করলেন তাতে তখন প্রায় বেসামাল অবস্থা রাজ্য প্রশাসনের। তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রীকে ঠেকাতে একদিকে পার্টি ক্যাডার, অন্যদিকে পুলিশকে নামিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছিল সিপিএম এবং প্রশাসন। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যত বাধা পেয়েছেন ততই মানুষের সমর্থন বেড়েছে তাঁর প্রতি।
আরও পড়ুন-ভোটের ভবিষ্যৎ আজ ঠিক করবে হাইকোর্ট
এমনই জমি আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এল ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোট। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে দক্ষিণবঙ্গে গরিব মানুষের সমর্থনের ঢল নামল তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদ দখল করল তৃণমূল। এ ছাড়াও হুগলি, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, সমস্ত জেলাতেই গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে বহু আসন জিতল তৃণমূল কংগ্রেস। পঞ্চায়েত ভোটের রেজাল্ট দেখে আরও বড় আন্দোলনের প্রস্তুতি নিলেন তৃণমূল নেত্রী। (চলবে)