প্রতিবেদন : বীরভূমের (Birbhum Blast) খয়রাশোল ব্লকের গঙ্গারামপুর চককয়লা খনিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে আটজনের মৃত্যু হয়েছে বলে বীরভূম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। মৃত ছয়জনের বাড়ি খয়রাশোল ব্লকে— জয়দেব মুর্মু (৫৩), সোমলাল হেমব্রম (৪০), রবিলাল মুর্মু (৩৪), মঙ্গল মারান্ডি (৩৪), ভাজারাম ঘোষ (৪৫), যুদ্ধ মারান্ডি (৪৪)। মঙ্গলবার মৃতের পরিবারদের হাতে ক্ষতিপূরণের ৩২ লক্ষ টাকার চেক তুলে দিলেন বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায়, বিদ্যুৎ দফতরের সচিব শান্তনু বসু। খয়রাশোল ব্লক থেকে ক্ষতিপূরণের চেক বিলি করা হল। সঙ্গে ছিলেন বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ, রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম-সহ অন্য আধিকারিকবৃন্দ। এদিন সিউড়ি সদর হাসপাতালে বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত তিনজনকে দেখতে যান সিউড়ি বিধানসভার বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী। তিনি বলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, মানুষের বিপদ হলেই দৌড়ে যেতে হবে। গতকালের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় যাঁরা আহত হয়েছেন সিউড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে এসে তাঁদের আত্মীয়-পরিজনের সাথে দেখা করে তিনি আশ্বস্ত করেন, রাজ্য সরকার তাঁদের পাশে সর্বতোভাবে আছে। কেউ সন্তান, কেউ স্বামী হারিয়েছেন, শোকগ্রস্ত পরিবারগুলোকে মানসিকভাবে সাহস দেওয়া আমাদের প্রধান কাজ। রাজ্যসভার সংসদ সামিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। দেহ তাঁদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে। গতকালের হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনায় যাঁরা গত হয়েছেন তাঁদের মধ্যে ৬ জনকে চিহ্নিত করা গেছে, দুজনকে এখনও চিহ্নিত করা যায়নি। তাঁদের দেহাংশ সংগ্রহ করে দুর্গাপুরে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বীরভূম (Birbhum Blast) জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ জানিয়েছেন, এই মৃত্যু নিয়ে আমরা যতই দুঃখ প্রকাশ করি না কেন তাতে স্বজনহারা পরিবারগুলোর কষ্ট কমবে না। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে দুর্ঘটনায় মৃত পরিবারগুলোর পাশে দ্রুত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তার নজির ভারতবর্ষে অন্য কোনও রাজ্যে নেই। সিউড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার ড. সুব্রত গড়াই জানিয়েছেন, সব আইন মেনে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। দুটি মৃতদেহ চিহ্নিত হয়নি বলে তাঁদের দেহাংশ ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে। বিস্ফোরণের মৃত জয়দেব মুর্মুর আত্মীয় খাঁদু মুর্মু জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের জেরে জয়দেবের শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে। কেবলমাত্র পা দেখে শনাক্ত করেছি। প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে রাজ্য সরকার যে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে সেই সুবিধা জয়দেবের পরিবার পাবে। কোথাও কোনও সমস্যা হবে না। মৃত শ্রমিক যুদ্ধ মারান্ডির আত্মীয় মহাদেব মারান্ডি জানিয়েছেন, জামার ছেঁড়া টুকরো এবং গামছা দেখে যুদ্ধকে চিনতে পেরেছি। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩২ লক্ষ টাকা ও একটি সরকারি চাকরি ভাইয়ের পরিবারকে দেওয়া হবে। আদিবাসী গাওতার নেতা রবিন সরেন জানিয়েছেন, ঘটনার ভয়াবহতা আমাদের সকলকে হতবাক করেছে। তবে বীরভূম জেলা প্রশাসন ও রাজ্য সরকার যেভাবে মৃত শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছে তাতে আমরা খুশি। মঙ্গলবার সন্ধেয় মৃত শ্রমিকদের পরিবারদের হাতে ক্ষতিপূরণের ৩২ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেওয়া হল। এবং সরকারের কাছে আমরা অনুরোধ করব পরিবারগুলো সহায় সম্বলহীন হয়ে পড়েছে, দ্রুত পরিবারগুলোকে চাকরির নিয়োগপত্র দিলে তাঁরা নিশ্চিন্ত হবেন। ময়নাতদন্তের সময় সিউড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে হাজির ছিলেন জেলাশাসক বিধান রায়, রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদের পি বি সেলিম, সভাধিপতি কাজল শেখ, রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম, বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী-সহ অন্যরা।