সুদেষ্ণা ঘোষাল: কথায় আছে যস্মিন দেশে যদাচার। যেমন দেশ, তেমনই আচার। এই প্রবাদ পাথেয় করেই বিদেশ বিভুঁইয়ে থেকে দুর্গোৎসবের আয়োজন করেন প্রবাসী বাঙালিরা। শুধুমাত্র মা দুর্গার প্রতি অমোঘ টান আর ভালবাসা দিয়েই যেমন নজির গড়ে ফেলেছেন মার্কিন মুলুকের এক ঝাঁক প্রবাসী বাঙালি৷
আরও পড়ুন-ইরানের বিপুল তৈলভাণ্ডারই কি লক্ষ্য? বিশ্বজুড়ে জ্বালানির দাম বাড়ার আশঙ্কা
পাঁজি-পুঁথির জটিলতা দূরে সরিয়ে আন্তরিক আগ্রহ আর বিশুদ্ধ ভক্তি সম্বল করে দুর্গোৎসবের আয়োজন শুরু করেন তাঁরা৷ স্বদেশে যখন মায়ের বোধনের প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে, তখন সাত সমুদ্র তেরো নদীর পাড়ে মার্কিন মুলুকে বিল গেটসের পাড়া সিয়াটেলে মহা ধুমধামে আয়োজিত হচ্ছে মায়ের পুজো৷ সারা সপ্তাহ চূড়ান্ত ব্যস্ততা, হাতে সম্বল সপ্তাহান্তের দুটি ছুটির দিন শনি আর রবি৷ সেই দু’দিনেই সেরে ফেলতে হবে মা দুর্গার আরাধনা৷ যেমন ভাবা তেমন কাজ৷ রাতারাতি বুক করে ফেলা হল কমিউনিটি সেন্টার, মা দুর্গার মূর্তির ব্যবস্থাও হয়ে গেল দেশে যোগাযোগ করে৷ এরপরে শুধুই পুজো সুষ্ঠুভাবে যাতে হয় তার আয়োজন৷ কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গে মায়ের বোধনের আগেই বিল গেটসের পাড়া, স্টারবাকস কফির গ্লোবাল সদর দফতরের এলাকায় দু’দিনের মধ্যে মা দুর্গার আরাধনা সেরে ফেললেন সিয়াটেলের ‘উত্তরায়ণ’ ক্লাবের সদস্যরা৷ এঁদের মধ্যে বিশ্বখ্যাত বিমান প্রস্তুতকারক সংস্থার ডিরেক্টর অভীক ভট্টাচার্য অন্যতম৷ তিনি নিজে তাঁর বাঙালি বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করেছেন, মায়ের পুজোর ব্যবস্থা করেছেন নিষ্ঠাভরে৷ শেষে সবার সহযোগিতায় উত্তরায়ণ ক্লাবের দুর্গাপুজো সম্পন্ন হয়েছে শনি ও রবি দু’দিন৷
আরও পড়ুন-মোদির মুখের উপর জবাব দিলেন বিনেশ
সমালোচকরা হয়তো চোখ কুঁচকোবেন! প্রশ্ন তুলবেন, পুজোর নির্ঘণ্ট না মেনে কীভাবে দুর্গাপুজো? তাঁদের জন্য এই উৎসাহী প্রবাসীদের জবাব একটাই, পাঁজিপুঁথি এখানে ব্রাত্য৷ পেটের টানে বিদেশে কর্মরত বাঙালির প্রবল উত্সাহের কাছে হার মানছে মার্কিন মুলুকের দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততা ও পেশাদারিত্ব৷ এতটাই সাড়া ফেলেছে সিয়াটেলের প্রবাসী বাঙালিদের আয়োজিত এই দুর্গোত্সব যে, এখানকার অধিবাসী বিশ্বখ্যাত শিল্পপতি বিল গেটসও চাঁদা পাঠিয়েছেন দুর্গাপুুজোর জন্য। এখানেই শেষ নয়। উত্তরায়ণের বন্ধু আরও তিনটি ক্লাবও একইরকমভাবে উইকএন্ডের দু’দিন করে দুর্গাপুজোর আয়োজন করবেন, তাঁদের নিজের নিজের এলাকায়৷ সেখানেও থাকবে নিষ্ঠাভরে মায়ের আরাধনা, আট থেকে আশির দেদার আনন্দ আর অবশ্যই বাঙালির বিখ্যাত পেটপুজো৷ নিজেদের দেশ থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরে থেকেও যে এই ভাবে নিষ্ঠা ভরে দুর্গাপুজো করা সম্ভব তা হাতে কলমে দেখিয়ে দেওয়ার জন্য আয়োজকদেরই সব কৃতিত্ব দিচ্ছেন ভারতীয় সেনার অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল উত্পল ভট্টাচার্য৷ বিশেষ অতিথি হিসেবে সিয়াটেলের পুজোর সাক্ষী তিনি৷ সেখান থেকেই জাগোবাংলাকে বললেন, সবই মা দুর্গার আশীর্বাদ৷ তা না হলে বিদেশ বিভুঁইয়ে বসে এত নিষ্ঠাভরে সব কিছু সম্পন্ন করা যেত না৷