কমল মজুমদার, জঙ্গিপুর: সপ্তমী পুজো শুরুর আগে বৃহস্পতিবার ভোরে সূর্য ওঠার আগেই রঘুনাথগঞ্জের গদাইপুরে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের মা পেটকাটি দুর্গার নবপত্রিকা অর্থাৎ কলাবউকে স্নান করানো হল। রীতি মেনে গ্রামের পাশের আখরি নদীর তীর থেকে মাটি এনে এই পুজোর প্রতিমা গড়া হয়। দৈর্ঘ্যে ৯ ফুট ও চওড়ায় ১৩ ফুট মাপের কোনও হেরফের হয়নি ৪০০ বছর ধরে। কথিত, এক দরিদ্র ব্রাহ্মণকে পুজোর দায়িত্ব দিলে স্ত্রী ও একমাত্র কিশোরী মেয়েকে নিয়ে পারিবারিক মন্দিরের পাশে থাকতে শুরু করেন তিনি। একবার সন্ধিপুজোর সময় পুরোহিতের মেয়ে পুজোর উপচার সাজানোর সময় তৈরি হঠাৎই নিখোঁজ হয়ে যায়। মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে দেবীমূর্তির সামনেই হত্যে দিয়ে সারা রাত পড়ে থাকেন সেবায়েত। ভোরে ব্রাহ্মণকে স্বপ্নে দেবী জানান, তাঁর মেয়ের রূপে মুগ্ধ হয়ে তিনি লোভ সামলাতে না পেরে তাকে গিলে ফেলেছেন। পরের দিন দেবীর নির্দেশমতোই ছাগবলি দেওয়া হয়। এর পর প্রতিমার পেট কেটে কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়। সেই থেকে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের দেবী পেটকাটি দুর্গা নামে পরিচিত। এখনও প্রতিমার মুখে একটুকরো কাপড় লাগানো থাকে কিশোরীকে খেয়ে ফেলার প্রতীক হিসেবে। ঘটনার পুনরাবৃত্তি আটকাতে পায়ে বাঁধা থাকে শিকল। প্রাচীন রীতি মেনে প্রতিমা তৈরির সময় কেটে রাখা হয় পেট। পুজোর চার দিন মা দুর্গাকে অন্নভোগ দেয় বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার। ষষ্ঠীর দিন হয় বলিদান। নবমীতে দেওয়া হয় আমিষ ভোগ। প্রচলিত কাহিনি, পঞ্চমীর সকালে নিয়ম মেনে প্রতি বছর হাজির হয় পাঁচ কপোত-কপোতি। স্থানীয়দের বিশ্বাস, তারা উমার পরিবারেরই জীবন্ত রূপ। পুজো শেষে দশমীর দিন লোকচক্ষুর আড়ালে হারিয়ে যায় পায়রারা। দশমীর দিন আখরি নদীতে নৌকায় পেটকাটি দুর্গাকে এলাকার অন্যান্য প্রতিমার মতো আনা হয় জঙ্গিপুরের সদর ঘাটে। বসে মেলা, চলে নৌকাবাইচ। সব প্রতিমা মিলিত হওয়ার পর একাদশীর সকালে জঙ্গিপুর শ্মশানঘাটে পেটকাটি প্রতিমার নিরঞ্জনের পর শুরু হয় বাকি প্রতিমার নিরঞ্জন।
আরও পড়ুন- উৎসবমুখর বাংলায় জনপ্লাবন