প্রতিবেদন : রাজ্য প্রশাসনের তরফে বারবার আবেদন-নিবেদন করা হয়েছে। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে সহানুভূতি দেখিয়ে এসেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু কিছুতেই শারদোৎসবের মাঝেও অনশন-আন্দোলনের পথ থেকে তারা পিছু হটতে চায়নি। এবার রণে ভঙ্গ দিতে মুখরক্ষার পথ খুঁজছেন আন্দোলনকারীরা। বিশিষ্টদের মাধ্যম করে সরকারের সঙ্গে মধ্যস্থতা করতে উদ্যোগী অনশনরত জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ। এদিকে সিপিএমের পর বিজেপির তরফ থেকেও ডাক্তারদের আন্দোলনে যোগ দিতে কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আবার জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। তাঁদের এই পদক্ষেপে সুবিধাবাদী রাজনীতি প্রকট হয়ে পড়ল ফের।
আরও পড়ুন-বিদায় রজনীতেও মণ্ডপে ঢল দর্শনার্থীদের, কাল কার্নিভাল
রবিবার সরকার ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে মধ্যস্থতার ইচ্ছে প্রকাশ করে দু’পক্ষকে ই-মেল করেছেন অপর্ণা সেন-সহ বিশিষ্টরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট ছাড়াও ই-মেলের কপি পাঠানো হয়েছে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে। তাঁদের আশা, দু’পক্ষ থেকেই ইতিবাচক সাড়া মিলবে। আমরণ অনশনের জেরে জুনিয়র ডাক্তারদের শারীরিক অবস্থার ক্রমাগত অবনতি হচ্ছে। তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এই পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু সমাধানের লক্ষ্যে উভয়ের মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে এগিয়ে এলেন অপর্ণা সেন, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়-সহ সুশীল সমাজের একাধিক ব্যক্তি। তাঁরা জানিয়েছেন, দু’পক্ষ চাইলে তাঁরা মধ্যস্থতা করে সমাধানসূত্র বের করতে রাজি।
আরও পড়ুন-মঙ্গলের দুপুরে শীর্ষ আদালতে আরজি কর মামলার শুনানি
ইমেল করে তাঁরা জানিয়েছেন, লাগাতার আন্দোলনে সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনশনকারী জুনিয়র চিকিৎসকেরা। রোগীদের সমস্যা হচ্ছে চিকিৎসা পরিষেবা পেতে। এর সুষ্ঠু সমাধানই তাঁদের উদ্দেশ্য। এই ইমেল-বার্তায় অপর্ণা সেন ছাড়াও সই করেছেন অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, মানবাধিকার কর্মী সুজাত ভদ্র, মনোবিদ রত্নাবলী রায়-সহ একাধিক বিশিষ্টরা। তাঁরা সেতুবন্ধনে উদ্যোগী।
সরকার যখন শারদ উৎসব চলাকালীন এই আন্দোলন-অনশন থেকে দূরে থাকতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন, তখন উৎসবের শেষ পর্বে এসে মধ্যস্থতা করতে এগিয়ে এলেন সুশীল সমাজের একাংশ। তা যে আদতে অনশন তুলতে আন্দোলনকারীদের মুখ রক্ষার চেষ্টা, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আরও পড়ুন-আজ স্বাস্থ্যভবনে ফের বৈঠকে মুখ্যসচিব
আবার জুনিয়র ডাক্তাররা নাকি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে এখানে আসতে অনুরোধ করছেন! তার পাল্টা রাজ্যসভার প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, এটা ঠিক হলে— এক, মনে রাখুন ডাক্তারদের কর্মবিরতিতে দিল্লিতে এসমা জারি হয়েছিল। দুই, মণিপুর জ্বলছে, হতাহত, নারীনির্যাতন অসংখ্য, উনি যাননি। তিন, দিল্লির উপকণ্ঠে কৃষক বিক্ষোভের সময় ওঁদের দমনপীড়নটা মনে আছে? চার, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, মহারাষ্ট্রে পরপর নারীনির্যাতন ভুলে গেলেন? পাঁচ, সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ডাক্তার ইস্যু সারা দেশের সমস্যা। টাস্ক ফোর্স গড়ে দিয়েছে। ছয়, সোনার মেয়ে কুস্তিগিরদের নির্যাতনকারী বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণকে সঙ্গে নিয়েই লোকসভায় বসতেন প্রধানমন্ত্রী! তালিকা দীর্ঘ। এরপরেও তাঁর দ্বারস্থ হলে রামবাম জোট আর এই অংশের ডাক্তারদের সস্তা সুবিধাবাদী রাজনীতিই সামনে আসবে।