প্রতিবেদন : ২৩ বছর আগে আরজি করের এক মেডিক্যাল পড়ুয়া খুনের ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল বেশ কয়েকজনের। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল তাঁরা তখন ছিলেন সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের সদস্য। এখন তাঁরাই আরজি করে ডাক্তারি পড়ুয়ার ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় আন্দোলনকারীর ভূমিকা নিয়েছেন। এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসছে। একইসঙ্গে দাবি উঠে পড়েছে, ২৩ বছর আগে মেডিক্যাল পড়ুয়ার খুনের ফাইল ফের খোলা হোক।
আরও পড়ুন-উপনির্বাচনের প্রস্তুতিতে জেলায় বৈঠক ও টানা সভা, লক্ষ্য ৬-এ ৬, মাঠে তৃণমূল
২৩ বছর আগে ২০০১ সালের ২৫ অগাস্ট আরজি করের ললিত মেমোরিয়াল হস্টেলের ঘরে রহস্যমৃত্যু হয়েছিল সৌমিত্র বিশ্বাস নামে এক ডাক্তারি পড়ুয়ার। সৌমিত্র বারাকপুরের বাসিন্দা। চতুর্থ বর্ষের মেডিক্যাল পড়ুয়া ছিলেন তিনি। ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল তাঁর মৃতদেহ। গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু ওই ডাক্তারি পড়ুয়ার গলায় বাঁধা দড়ি এতটাই পলকা ছিল যে, তাতে কোনও মানুষের ঝোলা সম্ভব নয়। হস্টেল রুমে সেই রহস্যমৃত্যু য়ে আদতে খুন ছিল, সেই অভিযোগও উঠেছিল জোরদারই। এই ঘটনায় এসএফআইয়ের বেশ কয়েকজনকে জেরাও করা হয়েছিল। সিপিএম জমানার সিআইডির অধীনে সেই তদন্ত বেশি দূর এগোয়নি। ধামাচাপা পড়ে গিয়েছিল। এখন আরজি করের ঘটনার আবহে ফের একবার ২৩ বছরের পুরনো মামলার ফাইল খোলার দাবি উঠে পড়ল।
সৌমিত্র বিশ্বাসের মা সবিতাদেবীর অভিযোগ ছিল, আরজি করের পর্নোগ্রাফি চক্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাতেই ‘খুন’ হতে হয়েছে তাঁর ছেলেকে। তিনি তিনজনের নামও করেছিলেন। ‘দুবেজি’, ‘ধরবাবু’ ও ‘গোসাঁই ঠাকুর’ নামে তিনজন এসএফআই-এর সক্রিয় সদস্যের বিরুদ্ধে সরাসরি যুক্ত থাকার অভিযোগ এনেছিলেন। কিন্তু সেদিন তাঁর সমর্থনে উই ওয়ান্ট জাস্টিসের মিছিল হয়নি, হয়নি রাত দখল, প্রতিবাদে ঝাঁপিয়ে পড়েননি এই মেকি প্রতিবাদীরা। হয়নি কোনও দ্রোহ কার্নিভালও। অভিযোগ উঠেছে, এখন যাঁরা এই আন্দোলনের হোতা, তাঁদের কেউ কেউ সেদিন ছিলেন অভিযুক্তের তালিকায়।
সেইসময় আদালতের নির্দেশে তদন্তে নেমে সিআইডি আরজি করের হস্টেল থেকে পর্নোগ্রাফির শ্যুটিং সংক্রান্ত নানা সরঞ্জাম উদ্ধার করেছিল। তারা রিপোর্টেও লিখেছিল, যৌনকর্মী ভাড়া করে শ্যুটিং হত। তা সত্ত্বেও সেদিনের তদন্ত ধামাচাপা পড়েছিল। সুবিচারের আশায় হতাশ সবিতাদেবী দোরে দোরে ঘুরেছিলেন। কিন্তু সুবিচার পাননি। ২০২১-এর ১২ নভেম্বর সাংবাদিক সম্মেলন করে সরাসরি এসএফআই নেতাদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ এনেছিলেন সবিতাদেবী। অভিযোগ করেছিলেন, কলেজ ব্যাগের নাইলনের স্ট্র্যাপ দিয়ে ঝোলানো ছিল সৌমিত্রকে। মুখের মধ্যে ঠেসে রুমাল গোঁজা ছিল। দরজা খোলা। এভাবে কেউ আত্মহত্যা করে? সুবিচারের জন্য কলেজ প্রিন্সিপাল, পুলিস কমিশনার, স্বাস্থ্যমন্ত্রী এমনকী মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও দরবার করেছিলেন। তারপরও ন্যায়বিচার পাননি সবিতাদেবী। এখন যাঁরা অভয়ার মায়ের প্রতি সমবেদনা উজাড় করে দিচ্ছেন, তাঁরা কিন্তু সেই সময় কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ হেনেছিলেন সবিতাদেবীর বিরুদ্ধে। তাই আরজি করের সৌমিত্র-অধ্যায় ফের সামনে আনার দাবি উঠছে।