ঘুরে আসুন পশ্চিমে

দুর্গাপুজো শেষ। তবে শেষ হয়নি উৎসবের মরশুম। এই সময়ে অনেকেই বেরিয়ে পড়েন। হয় দূরে কোথাও যান, নয় কাছেপিঠে। শরৎ শেষে হেমন্তের শুরুতে কয়েকদিন কাটিয়ে আসতে পারেন শিমুলতলা, মধুপুর, দেওঘর। মনের মধ্যে জন্ম নেবে অদ্ভুত ভাললাগা। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

পশ্চিমে বেড়াতে যাওয়ার চল ছিল অতীতে। অনেকের ধারণা সেটা ইউরোপ। তা নয়। পশ্চিম হল বাংলার পশ্চিম দিক। অর্থাৎ, শিমুলতলা, মধুপুর, দেওঘর। আগে ছিল বিহারের অন্তর্গত। বর্তমানে ঝাড়খণ্ডে। হাওয়া বদলের জন্য আদর্শ জায়গা। ডাক্তারি-পরামর্শে স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য অসুস্থ মানুষদের একটা সময় নিয়ে যাওয়া হত। কিছুদিন থাকলেই বিশুদ্ধ জলহাওয়ায় সেরে উঠত শরীর। ওই অঞ্চলের ছবি সিনেমার পর্দায় চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তরুণ মজুমদার। তাঁর বেশকিছু ছবির প্রেক্ষাপট ওই পশ্চিম। দুর্গোৎসবের পর আসছে আলোর উৎসব। দীপাবলি। এই সময়ে সপরিবারে ঘুরে আসতে পারেন। প্রথমে যান শিমুলতলা।
ছোট ছোট পাহাড়। টিলা। শাল-মহুয়ার চিরসবুজ অরণ্য। লাল মোরামের রাস্তা। নরম ঘাসের উপর লাজুক শিশিরবিন্দু। ফুরফুরে হাওয়া। মালভূমি অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে একমুঠো নীরবতা। এই হল শিমুলতলা। যান্ত্রিক মনকে কিছুটা তরতাজা করে তোলার জন্যে যাওয়া যায়। কাটিয়ে আসা যায় কয়েকটা দিন।
আছে বেশকিছু দর্শনীয় স্থান। শিমুলতলার মূল আকর্ষণ ১০০০ ফুট উঁচু লাট্টু পাহাড়। নলডাঙা রাজবাড়ি, দুর্গাকার পাটনা লজ, সেন সাহেবদের লন টেনিস কোর্ট ছুঁয়ে অসমতল পথ পেরিয়ে লাট্টু পাহাড় ঘুরে আসা যায়। শিমুলতলা বাজার থেকে লাট্টু পাহাড় হাঁটা পথে ১৫ মিনিট। এখানে আছে গাছগাছালিতে ছাওয়া আদিবাসী দেবতার থান। তবে সন্ধেবেলায় লাট্টু পাহাড়ের দিকে না যাওয়াই ভাল। কারণ রাস্তা সরু এবং নির্জন। আছে অচেনা অজানা বিপদের আশঙ্কা।
লাট্টু পাহাড় ঘোরার পর চোখে পড়বে হলদি ঝরনা, ধারারা ফলস। প্রকৃতি এখানে রূপের পশরা সাজিয়ে বসেছে। দিগন্ত বিস্তৃত খোলা আকাশ। তার নীচে দাঁড়িয়ে প্রতি মুহূর্তে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। সেই আনন্দ-অনুভূতি আজীবন থেকে যাবে মনের মণিকোঠায়। বাধাহীন ফুরফুরে বাতাসের আদুরে ছোঁয়ায় দূর হয়ে যাবে সমস্তরকমের নাগরিক ক্লান্তি। রাতের আকাশে সেজে ওঠে তারার মেলা।
ঘুরে আসুন মধুপুর। আগেকার দিনে স্বাস্থ্যোদ্ধারের জন্য বাঙালিরা যেতেন। এখনও কিন্তু অঞ্চলটা সেরকমই সুন্দর আছে। চুপচাপ, নিরিবিলি। সবুজে ভরা বিস্তৃত উপত্যকা। আছে বহু বিখ্যাত মানুষের স্মৃতি বিজড়িত বাগানবাড়ি। কিছু কিছু নষ্টও হয়ে গেছে। আছে বেশকিছু দর্শনীয় স্থান। মধুপুরের পাথরোলেশ্বরী দেবীর মন্দির খুব জাগ্রত এবং বেশ প্রাচীন। কলকাতা থেকে কালীমূর্তি নিয়ে এসে, বসিয়ে পুজো শুরু হয়। মন্দিরের গঠনও বাংলার সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। মূলত শ্মশানঘাটে এটি নির্মিত হয়। এখনও এখানে পশুবলি হয়। মধুপুরে শহরের মাঝে একটা বিরাট আকারের পাতকুয়ো আছে। সেখানের জল নাকি শরীরের জন্য খুব ভাল। মিষ্টির স্বাদও তুলনাহীন।
দেওঘর বা বৈদ্যনাথধাম এই অঞ্চলের খুব কাছেই। চাইলেই টুক করে ঘুরে আসা যায়। সেখানে আছে দেবাদিদেব মহাদেবের মন্দির। সারা দেশের ভক্তরা এখানে আসেন। পুজো দেন। শিবের মাথায় জল ঢালেন। ঘুরে আসা যায় নন্দন পাহাড় থেকে। কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে এলে মন ভাল হয়ে যাবে। এছাড়াও আছে আরও কিছু মন্দির, আশ্রম। জেনে রাখুন, দেওঘরের পেঁড়া জগৎবিখ্যাত। খাবেন এবং বাড়ির জন্য নিয়ে আসবেন।
ঘুরে আসা যায় ঝাঁঝাঁ, ভাগলপুর, গিরিডি থেকেও। স্বাস্থ্যকর এই জায়গাগুলোও বাঙালির অত্যন্ত পছন্দের। সবমিলিয়ে চার পাঁচ দিন কাটিয়ে আসতেই পারেন। সব জায়গায় আছে খাবার হোটেল। চাইলে নিজেরাও পছন্দমতো রান্না করতে পারেন। অথবা করা যায় রাঁধুনির ব্যবস্থা। বাজারে চাল, মাছ, মাংস, সবজি সমস্তই পাবেন। পুজোর সময় থেকেই মোটামুটি ঠান্ডা পড়ে। এই ঠান্ডাও রীতিমতো উপভোগ্য। সঙ্গে নিতে হবে গরম জামাকাপড়। সন্ধের দিকে রয়েছে বিদ্যুতের সমস্যা। তার জন্য অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে টর্চ। সকাল-বিকেল দুবেলা পাবেন গরম সিঙ্গাড়া। এছাড়া রসগোল্লা, কালাকাঁদ, বোঁদে, ল্যাংচা, গাঠিয়া, নিমকি, চানামুড়কি। যত খুশি খেতে পারেন। কোনও সমস্যা হবে না। খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই হজম! এখানকার মনোরম এবং স্বাস্থ্যকর জলহাওয়াই আপনাকে সঙ্গ দেবে।
বাঙালি কোথায় নেই? এইসব অঞ্চলেও দেখা পাবেন বহু বঙ্গভাষীর। হয় দুর্গাপুজো, কালীপুজো। আয়োজন আন্তরিক, জাঁকজমকহীন। খুব বেশি ঘোরাঘুরি অপছন্দের হলে খাওয়াদাওয়া এবং পরিবার-বন্ধুদের সঙ্গে নির্ভেজাল আড্ডা মেরে, পরম বিশ্রামে কয়েকটা দিন কাটিয়ে দেওয়া যায়। এই পথ অনুসরণ করেন অনেকেই।
কীভাবে যাবেন?
হাওড়া স্টেশন থেকে রাতে ছাড়ে মোকামা প্যাসেঞ্জার। পরের দিন সকালে ট্রেনটি পৌঁছয় শিমুলতলায়। এ-ছাড়া হাওড়া থেকে দিল্লিগামী বহু ট্রেন রয়েছে। যদি হাওড়া স্টেশন থেকে জসিডি পর্যন্ত ট্রেনে আসেন, তাহলে জসিডি জংশন থেকে ট্রেন বদল করতে হবে। মেমু লোকাল ট্রেন ধরে শিমুলতলা নামতে হবে। যাওয়া যায় বৈদ্যনাথধামেও।
কোথায় থাকবেন?
শিমুলতলা রেল স্টেশনে নেমে ডানদিকে বাস স্ট্যান্ড, বাজার। বাজারের ডানদিক বরাবর আছে প্রচুর পুরোনো বাংলো বাড়ি। এছাড়াও রয়েছে আধুনিক মানের হোটেল এবং তারামঠ। থাকা যায় এইসব জায়গায়। আগে থেকে বুকিং করে গেলে ভাল হয়। মধুপুর এবং দেওঘরেও আছে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা।

Latest article