টেক্কা

সৃজিত মুখোপাধ্যায় তাঁর ছবির চলনে নিজের একটা ছাপ রেখে যান বরাবর। পুজোর মুখেই মুক্তি পেয়েছে তাঁর পরিচালিত বহুল প্রতীক্ষিত ছবি ‘টেক্কা। দেব প্রযোজিত দুর্ধর্ষ এই অ্যাকশন হস্টেজ থ্রিলার ছবিটি জমিয়ে উপভোগ করলেন দর্শক। লিখছেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

সাহেব বিবি গোলামের দেশে, আস্তিনে থাক… ‘‘এবার পুজোয় দেখা হচ্ছে টেক্কার সঙ্গে।’’ এমন ক্যাপশনে যেদিন সৃজিতের নতুন ছবি ‘টেক্কা’-র (Tekka) চরিত্রদের ফার্স্ট লুক প্রকাশিত হয়েছিল সেদিন থেকে দর্শকদের উত্তেজনা তুঙ্গে ছিল। পরনে ডোরা কাটা শার্ট, উস্কোখুস্কো চুল, হাতে একটি ঝাড়ু আর চোখে একরাশ কৌতূহল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইকলাখ। ‘প্রধান’-এর পর সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী একটা চরিত্রে দেখা গেল এবার দেবকে। ফলে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন দর্শক। সেই অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে পুজোর একেবারে মুখেই মুক্তি পেয়েছে দেব এন্টারটেনমেন্ট ভেঞ্চারের অ্যাকশন হস্টেজ থ্রিলার ছবি ‘টেক্কা’।

সাহেব বিবি গোলাম, টেক্কা, হরতন, চিঁড়েতন, ইস্কাবন। তাস বদলে দেয় ভাগ্য। একটা চাল ভুল হলেই অন্যজনের বাজিমাত। দুর্গাপুজো মানেই উৎসবের জমকালো আবহে সাজগোজ, খানাপিনা, প্যান্ডেল হপিং-এ একে অপরকে ‘টেক্কা’ দেওয়ার লড়াই। এমন এক হাড্ডাহাড্ডি পরিবেশে বাঙালির পুজো আরও জমজমাট করে তুলতে হাজির পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘টেক্কা’। এমন টানটান চিত্রনাট্য, জবরদস্ত কাস্টিং যেদিন যত গড়াল আর ততই চড়ল ‘টেক্কা’র (Tekka) পারদ।
‘জুলফিকর’ ছবির পর ‘টেক্কা’য় আবার দেব-সৃজিতের জুটি। দেব প্রযোজিত এবং অভিনীত ছবিগুলো ইদানীং মুক্তি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দর্শক মন জয় করে নিচ্ছে। এই ছবিও তার খুব একটা ব্যতিক্রম হয়নি।
সমাজের গরিব-গুর্বোদের হেয়, হীন প্রতিপন্ন করে চলা বিত্তশালীদের একটা স্বভাব। এই ছবিতেও তেমনটাই দেখা যায়। গরিব ইকলাখের চণ্ডালের মতো রাগ আর সেই রাগের কারণেই একদিন চাকরি চলে যায় ইকলাখের। এদিকে ইকলাখ ছেলের স্কুলে মাইনে দিতে না পারার কারণে তাকে বহিষ্কার করা হয়। একদিকে চাকরি হারানোর যন্ত্রণা, অন্যদিকে ছেলের বহিষ্কার। সহ্য করতে পারে না সে ফলে রাগে, ক্ষোভে, যন্ত্রণায় চাকরি ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে। সমাজের উচ্চকোটির মানুষকে জব্দ করতে প্রতিবাদস্বরূপ একজন সাধারণ দারোয়ান থেকে মুহূর্তে হয়ে ওঠে অপহরণকারী। নিজের চাকরি ফিরে পেতে দেব একটি স্কুলের বাইরে থেকে অপহরণ করে এক ছাত্রীকে। মেয়েটিকে গানপয়েন্টে রেখে পুরো অফিস বিল্ডিংটাকেই দখল করে নেয়। পুলিশকে সে জানায় সে যে অফিসে সাফাইকর্মীর কাজ করত, সেখানকার মালিককে এসেই তাকে চাকরি ফেরত দিতে হবে তবে মেয়েটিকে ছাড়বে। এমন ভয়াবহ কিডন্যাপের কাণ্ডের দায়িত্ব দেওয়া হয় ক্রাইম ব্রাঞ্চের এসিপি মায়াকে। সেই ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে যায় সাংবাদিক দেবদান এবং বৃষ্টিও। এদিকে মেয়েকে অপহরণকারীর হাত থেকে বাঁচাতে মা ইরা যে কোনও মূল্যের মুক্তিপণ দিতে প্রস্তুত। কিন্তু তাতেও চিঁড়ে ভেজে না। ঘটনার আসল চমক আসে পরে যখন ইরা ইকলাখের সন্তানকে কিডন্যাপ করে। আটচল্লিশ ঘণ্টা সময়সীমায় ঘটে যাওয়া একটা রুদ্ধশ্বাস ঘটনা নিয়ে তৈরি সাসপেন্স থ্রিলার। শেষে কী হয় এটাই দেখার।

এই ছবির মুখ্যভূমিকায় রয়েছেন দেব, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় এবং রুক্মিণী মৈত্র। একজনের লড়াই চাকরির জন্য, অন্যজনের লড়াই একমাত্র সন্তানের জন্য— দু’জনের হাতেই রয়েছে বন্দুক, শেষমেশ কে কাকে দেবেন টেক্কা?
এই ছবিতে রুক্মিণী মৈত্রকে নতুন অবতারে দেখবে দর্শক। এই প্রসঙ্গে রুক্মিণী বলেছেন, ‘‘আমার কেরিয়ারের কঠিনতম তিনটি চরিত্রের মধ্যে মায়া হল একটি। এর বেশি কিছু বলতে চাই না। ওটা দর্শকদের জন্য তোলা থাক।’’ সত্যি রুক্মিণীর অভিনয় বসে দেখতে হবে কারণ ‘টেক্কা’ ছবিটা জুড়ে শুধুই রুক্মিণী। অসাধারণ তাঁর স্ক্রিন প্রেজেন্স। এই ছবিতে নিজের সেরাটা দিয়েছেন রুক্মিণী। তাঁর চরিত্রটাকে অনেকদিন মনে রাখবে দর্শক। রুক্মিণীর পাশে এক নতুন দেবকেও দেখবে দর্শক। তিনি এক কথায় অনবদ্য।
অন্যদিকে বহুদিন পর সৃজিতের ছবিতে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। তার চরিত্রের নাম ইন্দিরা বা ইরা। ছবিতে তাঁকে দেখা যাবে কর্পোরেট সংস্থার সিইও-র চরিত্রে। স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় বরাবরের মতোই নজরকাড়া। টেক্কায় তাঁর পারফরম্যান্স মানুষ সারাজীবন মনে রাখবে। এছাড়া এই ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন পরান বন্দ্যোপাধ্যায়, টোটা রায়চৌধুরী, সৃজা দত্ত, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, আরিয়ান ভৌমিক প্রমুখ। এই ছবির সঙ্গীত করেছেন রণজয় ভট্টাচার্য। সিনেমাটোগ্রাফি মধুরা পালিত এবং এডিটিংয়ে প্রণয় দাশগুপ্ত।
দেব-এর চোখে ‘বাইশে শ্রাবণ’ এর পর … সৃজিত পরিচালিত সেরা ছবি ‘টেক্কা’। এমন গল্প অনেকদিন পর দর্শক দেখবেন বলেও দাবি করেছেন দেব। প্রযোজক হিসেবেও যে তিনি দারুণ খুশি তিনি সে-কথাও জানিয়েছেন।
দেবের বাঘাযতীন ছবিতে কাজ করেছিলেন অভিনেত্রী সৃজা। ‘টেক্কা’তেও তাঁকে এবং আরিয়ানকে দেখা যাবে অন্যরকম ভূমিকায়। বাঘাযতীনের পর টেক্কায় ফাটিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। আরিয়ান ও সৃজা ছাড়া এমন অভিনয় কেউ করতে পারত না। গত বছর পুজোতে সৃজিতের তুরুপের তাস ছিল ‘২২ শ্রাবণ’-এর প্রিকুয়েল ‘দশম অবতার’৷ এই বছর তিনি আনলেন ‘টেক্কা’ (Tekka)৷ ছবি সংলাপ থেকে, শেষ মুহূর্তের টুইস্ট, সিনেমাটোগ্রাফি সবটাই বেশ ভাল। ‘টেক্কা’ জয় করেছে দর্শক-মন।

আরও পড়ুন- ফের প্রমাণিত রেলের অপদার্থতা, অসমে লাইনচ্যুত মুম্বইগামী লোকমান্য তিলক এক্সপ্রেস

Latest article