প্রতিবেদন: জুনিয়র ডাক্তারদের অযৌক্তিক জেদ ও তথাকথিত আন্দোলন হাইজ্যাক করে বঙ্গ রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে সিপিএম। অথচ এরাই ক্ষমতায় থাকার সময় ডাক্তারদের আন্দোলন পুলিশ দিয়ে লাঠি চালিয়ে তুলে দিয়েছিল। এমনকী ডাক্তারদের ক্রিমিনাল বলতেও ছাড়েনি সিপিএম তথা বামেরা। এবার বামেদের সেই কলঙ্কময় ইতিহাস মনে করালেন আর এক প্রাক্তন এসইউসিআই বিধায়ক ডাক্তার তরুণ মণ্ডল। যিনি জয়নগর থেকে সাংসদও হয়েছিলেন একসময়। ভিডিও বার্তায় তিনি স্মৃতিচারণ করেছেন ১৯৮৩ সালে ও পরবর্তীতে কীভাবে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু (Jyoti Basu) ডাক্তার আন্দোলনে লাঠি চালাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন পুলিশকে। তরুণ মণ্ডল বলেন, ১৯৮৩ সালে আন্দোলন যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে যায়, তখন বারবার বৈঠকে বসেছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী রামনারায়ণ গোস্বামী ও জুনিয়র ডাক্তাররা। যখন বারবার দাবি তুলেছিলেন তাঁদের ন্যায্য অধিকার নিয়ে, তখন শ্যামল চক্রবর্তী, অম্বরীশ মুখার্জির মতো তৎকালীন বাম নেতা-বিধায়করা দ্বিচারিতা করেছিলেন। সেখানে দাঁড়িয়ে জ্যোতি বসু বলেছিলেন, ধর্মঘটী চিকিৎসকদের দাবি যুক্তিযুক্ত। আবার তিনিই পরে বলেন, এদের কোনও যুক্তিগ্রাহ্য দাবি নেই। বাম আমলের ভূমি ও ভূমি-রাজস্ব মন্ত্রী বিনয় চৌধুরী বলেছিলেন, হাসপাতালগুলিতে কাজ বন্ধ করে আন্দোলন চালানো বিদ্রোহের সমান।
সঙ্গে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, সিপিএমের ক্যাডারদের তো ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে দেখেছেন। ওদের যদি চিকিৎসকদের আন্দোলন প্রতিহত করতে নামানো হয়, তাহলে কী হবে বুঝতে পারছেন? ডাঃ মণ্ডলের স্মৃতিচারণ, এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসকদের বেধড়ক পেটানো হল একদিন। সেইসময় হেল্থ সার্ভিসের সেক্রেটারি অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে আউটডোরে গিয়ে পুলিশের সামনেই হেনস্থা করেছিল ডিওয়াইএফআই ও কোঅর্ডিনেশন কমিটির সদস্যরা। পুলিশ নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল। এক বিশাল পুলিশবাহিনী এসএসকেএম চত্বর জুড়ে ডাক্তারদের তাড়া করে বেড়ায়। কয়েকজনকে তাড়া করে চায়ের দোকানে ফেলে পেটানো হয়। ১৫ মিনিট ধরে পুলিশি তাণ্ডব চলে। এখানেই শেষ নয়। কর্মবিরতি পালনের সময় এসএসকেএমের গায়নোকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ সুশান্ত বসু বলেন, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে জুনিয়র ডাক্তারদের পেটানোর পর তাঁদের অজ্ঞাত কোনও জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়।
আরও পড়ুন- ডাঃ অভিজিৎ চৌধুরীর বিরুদ্ধে সিবিআইয়ে অভিযোগ জানিয়ে তদন্ত চাইলেন কুণাল
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার দিনের পর দিন ধৈর্য ধরে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁদের দাবি মেনে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু ডাক্তারদের ওপর লাঠি চালাননি। ডাক্তার মণ্ডলের কথায়, জ্যোতি বসুর (Jyoti Basu) সরকার যখন লাঠি চালিয়ে ডাক্তারদের ধর্মঘট তুলে দিয়েছিল তখন বিনয় চৌধুরীর সাফাই ছিল, পুলিশ আত্মরক্ষার্থে লাঠি চালিয়েছিল। তাদের আত্মরক্ষার অধিকারও কেড়ে নিতে হবে? কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভিসি সুশীলকুমার মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, কর্মবিরতির জেরে যারা শিশুমৃত্যু ঘটাতে পারে, তারা সমাজের কলঙ্ক, ক্রিমিনাল। তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, আন্দোলনরত ডাক্তারদের সঙ্গে জড়িত রয়েছে সমাজবিরোধী কিছু বড় বড় ডাক্তার ও শিল্পপতিরা। যাদের ব্যাঙ্কে লাখ-লাখ টাকা আছে। এরপর কী বলবেন কমরেড? জ্যোতি বসুর সরকার যে ঔদ্ধত্য দেখিয়ে ডাক্তারদের লাঠিপেটা করেছিল, সেই কালো দিনগুলি এদিন ফের মনে করিয়ে দিয়েছেন এক সময়ের বাম বিধায়ক।