দুরন্ত স্টুয়ার্ট, ডার্বি মোহনবাগানের

কাকভোরে শহরে আসার পরেও ইস্টবেঙ্গলের ডাগ আউটে নতুন হেড কোচ অস্কার ব্রুজোকে দেখে লাল-হলুদ সমর্থকরা উৎসাহী হয়ে উঠেছিলেন।

Must read

চিত্তরঞ্জন খাঁড়া: কাকভোরে শহরে আসার পরেও ইস্টবেঙ্গলের ডাগ আউটে নতুন হেড কোচ অস্কার ব্রুজোকে দেখে লাল-হলুদ সমর্থকরা উৎসাহী হয়ে উঠেছিলেন। অস্কার-বিনো জর্জ জুটির কাছে চমক আশা করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু ডুরান্ড কাপ থেকে টানা ছয় হারে আত্মবিশ্বাসের তলানিতে থাকা এই ইস্টবেঙ্গলের পক্ষে সম্ভব হয়নি ডার্বিতে মশাল জ্বালানোর। ফলে বদলাল না আইএসএল ডার্বির পরিসংখ্যান। আরও একবার ডার্বি মোহনবাগানের। লাল-হলুদে আঁধার কাটল না। টানা পাঁচ হারে চলতি আইএসএলে খুলল না তাদের পয়েন্টের খাতাও। লাল-হলুদের ইতিহাসে লজ্জার রেকর্ড। শনিবাসরীয় যুবভারতীতে মোহনবাগান আধিপত্য নিয়ে খেলেই ২-০ গোলে হারাল ইস্টবেঙ্গলকে। আইএসএল ডার্বির ইতিহাসে এখনও অপরাজিত সবুজ-মেরুন। ন’বারের সাক্ষাতে আটবারই জয়। শারদোৎসবের পর সবুজ-মেরুনে ডার্বি জয়ের উৎসব। ৪০০তম মাইলস্টোন ডার্বি জিতে আইএসএলে দু’নম্বরে উঠে এল জোসে মোলিনার দল।

আরও পড়ুন-ফের বাংলার প্রকল্প নিয়ে এল বিশ্বজনীন স্বীকৃতি

জাত চেনালেন জেমি ম্যাকলারেন। আগের ম্যাচে মহামেডানের বিরুদ্ধে গোল করেছিলেন। এদিন মেগা ডার্বিতেও গোল করলেন বাগানের অস্ট্রেলীয় বিশ্বকাপার। অন্য গোলটি পেনাল্টি থেকে করেন পরিবর্ত দিমিত্রি পেত্রাতস। ডার্বিতে গোল করা যেন অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন তিনি। এদিনও দুর্দান্ত খেললেন গ্রেগ স্টুয়ার্ট। খেলা তৈরি, নিখুঁত পাস, গোলের ঠিকানা লেখা সেন্টারে স্কটিশ তারকাই বাগান আক্রমণে নেতৃত্ব দিয়ে গোটা দলকে খেলিয়ে স্টুয়ার্টই ডার্বির নায়ক।
ম্যাচ শুরুর আগেই যুবভারতীর ইস্টবেঙ্গল গ্যালারিতে সমর্থকদের একটি ব্যানারে লেখা, ‘গ্যালারি আজ বলছে ভাই, ডার্বিতে বাঙালি ফুটবলার চাই।’ তা এদিনের বড় ম্যাচে দু’দল মিলিয়ে সাকুল্যে পাঁচজন বাঙালি ছিলেন স্কোয়াডে। মাঠে খেললেন মাত্র তিনজন। ডার্বির নায়ক সেই বিদেশিরাই।
রক্ষণ জমাট রেখে আক্রমণের রণনীতি নিয়েছিলেন দুই স্প্যানিশ কোচই। তবে মোহনবাগানই শুরু থেকে বল দখলে রেখে গুছিয়ে খেলার চেষ্টা করেছে। ইস্টবেঙ্গলের খেলায় পরিকল্পনার ছাপ ছিল না। মাদি তালাল একাই যেটুকু লড়াই করলেন। কিন্তু ফরাসি মিডিও সেভাবে সাপোর্ট পেলেন না। নিষ্প্রভ ছিলেন সাউল ক্রেসপো। নাওরেম মহেশহীন ইস্টবেঙ্গলকে ভোগাল দুই সাইড ব্যাকের পারফরম্যান্সও।

আরও পড়ুন-মুখ্যমন্ত্রীর পথ ধরেই জিএসটি সংশোধনী-কথা

প্রথম দশ মিনিট ইস্টবেঙ্গলকে বেশি সাবধানী দেখিয়েছে। মনবীর সিং, স্টুয়ার্টরা প্রায় গোলমুখ খুলে ফেলেছিলেন। ১৩ মিনিটে পাল্টা প্রতিআক্রমণে বক্সে ভাল জায়গায় বল পেয়েছিলেন ক্লেটন। গোল করতে পারেননি ব্রাজিলীয় স্ট্রাইকার। এই আক্রমণ থেকেই যেন আত্ম বিশ্বাসটা পেয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। তবে প্রেসিং ফুটবলে রাশ নিজেদের হাতে রেখেই পরপর গোলের সুযোগ তৈরি করে মোহনবাগান।
১৭ মিনিটে নিশ্চিত গোলের সুযোগ হাতছাড়া মোলিনার দল। ইস্টবেঙ্গল গোলকিপারের সঙ্গে হ্যান্ডশেকের দূরত্ব থেকে গোল করতে পারেননি ম্যাকলারেন। ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্স চিরে স্টুয়ার্টের অসাধারণ ক্রস ছিল ম্যাকলারেনের জন্য। কিন্তু বল প্লেস করতে গিয়ে প্রভসুখন গিলের গায়ে মারেন বাগানের অস্ট্রেলীয় বিশ্বকাপার। মিনিট দুয়েক পর লিস্টন-স্টুয়ার্টের ওয়াল খেলে ফের গোলমুখ খুলে ফেলা। মনবীরের হেডে গোল অবশ্য অফসাইডের কারণে বাতিল হয়। ২৫ মিনিটে মনবীরের হেড দুরন্ত সেভ করেন গিল। এরপর প্রথমার্ধের বাকি সময়টা বিক্ষিপ্তভাবে ইস্টবেঙ্গল আক্রমণে উঠলেও প্রাধান্য ছিল সবুজ-মেরুনেরই। ৪১ মিনিটে অসাধারণ একটি মুভমেন্ট থেকে গোল তুলে নিয়ে এগিয়ে যায় মোহনবাগান। মনবীরের ডিফেন্সে চেরা থ্রু বল দুর্দান্ত ফিনিশ করেন সেই ম্যাকলারেন। শুরুর সুযোগ নষ্টের যেন প্রায়শ্চিত্ত করলেন জেমি।
দেখার ছিল, অস্কারের টোটকায় দ্বিতীয়ার্ধে ইস্টবেঙ্গল ম্যাচে ফিরতে পারে কি না। ডেভিডকে তুলে ফ্রেশ লেগ তরুণ পি ভি বিষ্ণুকে নামিয়ে আক্রমণে ঝাঁজ বাড়াতে চেয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। পরে ক্লেটনের পরিবর্তে দিয়ামনতাককোস, নন্দকুমারের জায়গায় জেসিনকে নামিয়েও লাভ হয়নি। বরং মোহনবাগানই গোলের সুযোগ তৈরি করল বেশি। কিন্তু মনবীর, লিস্টন, ম্যাকলারেনরা তা হাতছাড়া করায় ব্যবধান বাড়ছিল না। এই সময় ম্যাকলারেনকে তুলে পেত্রাতসকে নামান মোলিনা। আনোয়ার বক্সের মধ্যে স্টুয়ার্টকে ফাউল করায় পেনাল্টি পেতে পারত মোহনবাগান। কিন্তু ৮৯ মিনিটে মোলিনার দল ২-০ করল সেই পেনাল্টি থেকে। দিমিত্রিকে ফাউল করেন ইস্টবেঙ্গল গোলকিপার গিল। কিন্তু রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশয় রয়েছে। পেনাল্টি থেকে গোল করতে ভুল করেননি আগের অনেক ডার্বির নায়ক বাগানের দিমি।

Latest article