প্রতিবেদন : বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চ থেকে এবার বিচার নিয়ে দলের অবস্থান স্পষ্ট করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এই মুহূর্তে উত্তর থেকে দক্ষিণ, সর্বত্র চলছে দলের বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠান। সেই মঞ্চ থেকেই মানুষের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে কীভাবে বিচারের নামে জুনিয়র ডাক্তাররা কার্যত রাজনীতি করছেন। তাঁদের সামনে রেখে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধিতে মরিয়া বাম-অতিবাম সহ একাধিক স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার আলোচনা করেছেন জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে। সল্টলেকের অবস্থান মঞ্চে গিয়েছেন। নবান্নে বৈঠক করেছেন।
আরও পড়ুন-এনআরএসে সদ্যোজাতর পেটে ভ্রূণ
ধর্মতলার অনশনমঞ্চে মুখ্যসচিব-স্বরাষ্ট্রসচিবকে পাঠিয়েছেন। তাঁদের মাধ্যমে প্রায় ১ ঘণ্টা ফোনে কথা বলে জুনিয়র ডাক্তারদের বোঝানোর চেষ্টা করেছে। আজ, সোমবার বিকেল ৫টায় ফের বৈঠক করবেন। অনশন তুলে কাজে ফিরতে অনুরোধ করেছেন। এসবের পরেও বলা হচ্ছে রাজ্য সরকার নাকি সদর্থক ভূমিকা পালন করছে না! জুনিয়র ডাক্তারদের মুখ দিয়ে কারা বলাচ্ছে এসব কথা? দলের স্পষ্ট বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তদন্ত করছে সিবিআই। রাজ্য সরকার কী করবে? ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ বলে এখানে চিৎকার কেন? হাসপাতালের পরিকাঠামো নিয়ে রাজ্য সরকারের পদক্ষেপ সদর্থক মনে না হলে সুপ্রিম কোর্টে কেন বলা হচ্ছে না? আসলে প্রথমে এদের পুলিশে আস্থা ছিল না। পরে সিবিআইতে আস্থা নেই। এখন সুপ্রিম কোর্টকেও মানতে চায় না। তা না হলে শীর্ষ আদালতের একাধিকবার নির্দেশ সত্ত্বেও নানা অজুহাতে কাজে ফেরেননি জুনিয়র ডাক্তাররা। এর উত্তর দেবেন না এঁরা?
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
ডাক্তারদের ১০ দফা দাবির অধিকাংশই মেনে নিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু পাল্টা তাঁদের যখন ১৩ দফা দাবির বিষয়ে বলা হল, কার্যত ভিরমি খেলেন তাঁরা। কিন্তু কেন? ল্যাব থেকে কাটমানি, ওষুধ কোম্পানির টাকায় বিদেশ ভ্রমণ, ডিউটি না করে বেসরকারি হাসপাতালে প্রাইভেট প্র্যাকটিস, সরকারি অনুদানে পড়াশোনা করবেন অথচ ১০ ঘণ্টা ডিউটি করতে অসুবিধে কেন? এসব প্রশ্নের উত্তর দেবেন না? বেসরকারি হাসপাতালে গেলে প্রয়োজন না থাকলেও প্রথমেই কয়েক হাজার টাকার টেস্ট করানো হয়। নির্দিষ্ট প্যাথ ল্যাব থেকে টেস্ট না করালে বহু ডাক্তারবাবু সেই রিপোর্ট দেখতেই চান না। কেন? এর উত্তর দেবেন না? দেশে খুন-ধর্ষণের এত ঘটনা ঘটছে অথচ সেগুলি নিয়ে একটি কথাও নেই কেন আপনাদের মুখে? শুধু বাংলাকে তুলে ধরে জাস্টিসের নামে নিজেদের হারানো জমি ফেরানোর মরিয়া চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাই অনশনের মতো অস্ত্রকে সামনে রেখে একদল জুনিয়রকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বাঘের পিঠে। চাইলেও সেখান থেকে আর নামতে পারছেন না জুনিয়র ডাক্তাররা। আর ফ্রিতে মিডিয়া ফুটেজ পেয়ে এখন আর সেখান থেকে সরা যাচ্ছে না, কী বলুন? এসবের মধ্যে তিলোত্তমার বিচারের মূল দাবি কোন পিছনে চলে গিয়েছে। রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমেই বিচার চেয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন। মনে পড়ে? নাকি নিজেদের এই সাপ-লুডোর খেলায় সেসব বেমালুম ভুলে গিয়েছেন?
আরও পড়ুন-সরকার উদ্যোগ নেওয়ায় রাজ্য জুড়ে দাম কমল সমস্ত সবজির
বাংলার মানুষের কাছে এই কথাগুলি এখন আরও বেশি করে তুলে ধরছে তৃণমূল কংগ্রেস। মানুষকে এর উত্তর দেবেন না ডাক্তারবাবুরা? দিতে তো হবেই। মনে রাখতে হবে, ডাক্তারদের একাংশের খামখেয়ালিপনা, চূড়ান্ত বেনিয়ম ও দুর্নীতি ও তার জেরে চিকিৎসাপ্রার্থীর অসহায় মানুষদের কান্না দেখেই শিল্পী নচিকেতা নিজেই লিখে গিয়েছিলেন সেই কালজয়ী গান— ‘ও ডাক্তার…’, যা আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।