প্রতিবেদন : সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ডানার (Dana Cyclone) মোকাবিলায় রাজ্য সরকার সবরকমভাবে প্রস্তুত আছে। উপকূলবর্তী পাঁচ জেলা-সহ ৭ জেলায় এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়তে পারে। তাই ওইসব জেলার জন্য বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার দুপুরে নবান্নে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়ে তিনি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন। পরে সাংবাদিকদের মুখ্যমন্ত্রী জানান, দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য আমাদের সরকার প্রস্তুত আছে। উপকূল এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে আনা হচ্ছে। দিঘা মন্দারমণির মতো পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের গতিবিধিতে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। সতর্ক করতে চালানো হচ্ছে মাইকিং। ইতিমধ্যেই রাজ্য ও জেলাস্তরে ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম চালু করা হচ্ছে। প্রধান সচিব পদমর্যাদার আধিকারিকদের পর্যবেক্ষক হিসেবে ওই সাত জেলায় পাঠানো হয়েছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে আগামী কাল থেকে ২৬ তারিখ পর্যন্ত সব স্কুল ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র বন্ধ রাখা হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান।
ডানার কারণে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ২৩-২৬ তারিখ দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, হুগলি, হাওড়া ও কলকাতার সব স্কুলে পঠনপাঠন বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতেই এই সিদ্ধান্ত, এদিন সাংবাদিক বৈঠকে জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে ২৩ থেকে ২৬ আইসিডিএস সেন্টার বন্ধ থাকছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আলিপুর আবহাওয়া দফতরের খবর অনুযায়ী ২৪ অক্টোবর রাত থেকে ২৫ অক্টোবর সকালের মধ্যে পুরী এবং সাগরদ্বীপের মাঝে ল্যান্ডফল হতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর। এফেক্ট পড়বে হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা, পর্যটকদের সমুদ্রের ধার থেকে সরানোর কথা বলা হয়েছে।
একইসঙ্গে এ-ও জানান, সাতজন প্রিন্সিপাল সেক্রেটারিকে সাত জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ২৪ তারিখে ক্যাবিনেট বৈঠক আছে। কিন্তু সেখানে আবার দুর্যোগের কবলে যে জেলাগুলি রয়েছে সেখানকার মন্ত্রীদের আসতে নিষেধ করা হয়েছে। একইসঙ্গে আর্থিক সাহায্য নিয়ে এদিন ফের একবার ক্ষোভ উগরে দেন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে। বলেন, পরপর একাধিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও কেন্দ্রের তরফ থেকে সেইভাবে কোনও অর্থ সাহায্য মেলে না।
আরও পড়ুন- তদন্ত না করেই সিদ্ধান্ত, হাইকোর্টে ৫৯ ডাক্তারের সাসপেনশন স্থগিত
গভীর নিম্নচাপ সাগরে। বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যেই স্থলভাগে আছড়ে পড়বে ঘূর্ণিঝড় ডানা (Dana Cyclone)। বুধবার থেকেই রাজ্যের দক্ষিণে কলকাতা-সহ বিভিন্ন জেলায় ভারী থেকে অতি-ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সঙ্গে বিক্ষিপ্তভাবে দমকা ঝোড়ো হওয়া। হাওয়া অফিসের তরফে বৃহস্পতি ও শুক্রবার অতি-ভারী থেকে অত্যন্ত ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি হয়েছে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায়। মঙ্গলবার আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, সুস্পষ্ট নিম্নচাপ ছিলই। আজ সকালে তা পূর্ব ও মধ্য বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। সাগরদ্বীপ থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ৭৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। কাল সকালের মধ্যেই তা শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে এগোবে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকালের মধ্যে ওড়িশার পুরী থেকে বাংলার সাগরদ্বীপের মধ্যে ল্যান্ডফলের সম্ভাবনা রয়েছে। সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। এর জেরে বুধবার থেকে দক্ষিণের সব জেলাতেই হালকা-মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা। ভারী থেকে অতি-ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা, বাঁকুড়া এবং ঝাড়গ্রাম জেলায়।