উত্তরের হাতছানি

ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম বারমেক এবং দেবরালি দারা। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। দুই গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে অপরূপা তিস্তা। উপত্যকায় ফুটে রয়েছে নানা রঙের ফুল। নির্জন নিরিবিলি পরিবেশ মনের মধ্যে জন্ম দেয় অদ্ভুত প্রশান্তি। আশেপাশেও আছে বেশকিছু বেড়ানোর জায়গা। পুজোর মরশুমে ঘুরে আসতে পারেন। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

উত্তরের পাহাড়। অপরূপ শোভা। হাতছানি দেয় পর্যটকদের। যাঁরা নিয়মিত বেড়ান, তাঁদের অনেকেই এক বা একাধিকবার ঘুরেছেন পরিচিত জায়গাগুলোয়। ফলে তাঁরা খোঁজেন অফবিট জায়গা। এমন কোনও জায়গা— যেখানে খুব বেশি মানুষ যাননি। তেমনই এক জায়গা বারমেক (Barmek)। পুজোর মরশুমে ঘুরে আসতে পারেন।
বারমেক (Barmek) কালিম্পংয়ের এক ছোট্ট গ্রাম। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। সুন্দর ছিমছাম গোছানো পাহাড়ি উপত্যকা বাহারি ফুলের রং ছড়িয়ে যেন পথিকের অপেক্ষায় চেয়ে আছে। নির্জন নিরিবিলি পরিবেশ। এই গ্রামে ঘুম থেকে উঠেই চোখ খুলে দেখতে পাওয়া যায় দূরের পাহাড়। পাহাড়ের পিছনে লাল রঙের সূর্য। এই দৃশ্য মনের মধ্যে জন্ম দেয় অদ্ভুত প্রশান্তি। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা। কুলুকুলু শব্দে। চাইলেই নদীর তীরে বসে দু-দণ্ড সময় কাটানো যায়।

সিঙ্কোনা চাষের জন্য বিখ্যাত বারমেক (Barmek)। ফোটে নানা রঙের ফুল। এখান থেকে সিকিমের রংপো নদী এবং রংপো শহরটির দেখা মেলে। পাহাড়ের একদিকে পশ্চিমবঙ্গ, আরেকদিকে সিকিম। স্থানীয় মানুষেরা বড় আন্তরিক এবং প্রাণবন্ত। অতিথিপরায়ণ। কঠোর পরিশ্রম করে— তবু তাঁদের মুখে লেগে থাকে হাসি।
উত্তরের আর একটি অফবিট বেড়ানোর জায়গা দেবরালি দারা। বাংলা এবং সিকিমের সীমান্তে অবস্থিত। নেপালি ভাষায়, ‘দেবরালি’ শব্দের অর্থ ‘পবিত্র পর্বতচূড়া’ এবং ‘দারা’ মানে ‘সুন্দর দেখতে শিখর’। নাম শুনে নিশ্চয়ই বোঝা যায়, জায়গাটা কতটা সুন্দর হতে পারে। যেন রূপকথার এক রাজ্য। হিমালয় পর্বতের গায়ে লেপ্টে রয়েছে। মনে হয়, কোনও শিল্পীর আঁকা ছবি। পাইনের জঙ্গল, অর্কিডের বাগান, চায়ের বাগিচার মাঝে ছোট ছোট বাড়িগুলো দেখলে মন ভাল হয়ে যায়। গ্রামের মানুষরা সহজ-সরল, পরিশ্রমী। হিমালয়ের কোলে অবস্থিত দেবরালি দারার গা-ঘেঁষে বয়ে গেছে তিস্তা নদী। তিস্তার ঠিক অপর পারেই আছে সিকিমের মেল্লি।
দেবরালি দারা চুড়োয় আছে মা শক্তির মন্দির। মন্দিরের পোশাকি নাম ‘সিংহবাহিনী ধাম’। ফুলের বাগানে সুসজ্জিত মন্দিরের সামনে সর্বদা ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালানো থাকে। সকালে মন্দিরে পুজো করেন নেপালি পুরোহিত। সন্ধ্যার আরতি দেখার মতো। এর রীতিনীতি অনেকটাই আলাদা। সামনেই কালীপুজো। ফলে ঘুরে আসা যায়।

আরও পড়ুন-সিকিমে মরশুমের প্রথম তুষারপাত, বরফ ছাঙ্গুতে

পূর্ব হিমালয় বেল্টের অন্যতম গন্তব্য হিসেবে, গত কয়েক বছর দেবরালি দারা পরিচিতি পেতে শুরু করেছে। সমস্যা হল, এখানে থাকার জন্য তেমন কোনও জায়গা নেই। যাওয়া যায় বারমেক থেকে। কালিম্পং থেকে ভালু মার্গ হয়ে দেবরালি দারা পৌঁছোতে গাড়িতে মাত্র ৪০ মিনিট সময় লাগে। অনেকে ট্রেক করেই পৌঁছে যান। আশপাশে দেখে আসতে পারেন হিমালি দারা, জলসা বাংলো, মহাদেব ধাম, হনুমান টোক। কালিম্পং থেকে ট্রেক করে দেবরালি দারায় যাওয়ার পথে বাঁ দিকে পড়বে আলপাইন গাছের জঙ্গল, ডানদিকে তিস্তা। জায়গাটি অ্যাডভেঞ্চার এবং প্রকৃতিপ্রেমীদের মনের মতো। নিরিবিলি শান্ত জায়গায় সারাক্ষণ শুনতে পাওয়া যায় হিমালয়ের পাখিদের কুজন। সাদা কুয়াশা ভেদ করে নির্জন পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার মজাই আলাদা।
বারমেক এবং দেবরালি দারার আশেপাশে আছে বেশকিছু বেড়ানোর জায়গা। রামধুরা খুব দূরে নয়। পাইন গাছের বন দিয়ে ঘেরা রামধুরার প্রাকৃতিক শোভা মুগ্ধ করবেই। রামধুরা থেকে দেখতে পাওয়া যায় শ্বেতশুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘা। দূরের নীল দিগন্তের নিচে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে ছোট-বড় নানা আকারের পাহাড়। পাহাড়ের ঢালে কপি, আলু, ধান ও আরও নানান সবজির চাষ হয়। আরও অনেক জায়গা দেখার সুযোগ রয়েছে। ঘুরে আসা যায় ইচ্ছেগাঁও থেকে। ছবির মতো সুন্দর এই পাহাড়ি উপত্যকায় গেলে মন ফিরতেই চাইবে না। ইচ্ছেগাঁও থেকে ট্রেক করে দেখে আসা যায় সানসেট পয়েন্ট। এ ছাড়াও গাড়ি নিয়ে ঘুরে নিতে পারেন জলসা বাংলো ভিউ পয়েন্ট, রমতে ভিউ পয়েন্ট, ডেলো পার্ক, মরগ্যান হাউস, দুর্পিন মনস্ট্রি, ক্যাকটাস গার্ডেন, দেওরলিদারা, হনুমান দেউল। চিন্তাভাবনা দূরে সরিয়ে চার-পাঁচ দিনের জন্য বেরিয়ে পড়ুন।

Latest article