জিগরা

'রকি অউর রানি কী প্রেম কাহানি’র রোমান্টিকতাকে ঝেড়ে ফেলে আলিয়া ভট্ট এবার ডাকাবুকো, মারকুটে অবতারে। পরিচালক ভাসান বালার অ্যাকশন ড্রামা 'জিগরা'তে আবার একবার নিজেকে প্রমাণ করলেন আলিয়া ভট্ট। এই ছবি তাঁরই। লিখছেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

জিগরওয়ালা, দুঃসাহসী, জেদী আত্মবিশ্বাসী, প্রত্যয়ী, মুখের সারল্যে অন্তরালে লুকিয়ে থাকা তীক্ষ্ণ তরবারির মতো শাণিত বুদ্ধিসম্পন্না এক ইউটোপিয়ান রাজকন্যা, যে পুরুষাকারের প্রতীক। যে সবকিছু ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে পারে মুহূর্তে। মৃত্যুর পরোয়ানাকে খেলার ছলে ভাসিয়ে দিতে পারে জলে। যে শুধু তাঁর অভিব্যক্তি দিয়েই বুঝিয়ে দিতে পারে ‍‘মিশন ইমপসিবল’ বলে কিছু হয় না। তাঁর নাম সত্যভামা আনন্দ ওরফে আলিয়া ভট্ট। পরিচালক ভাসান বালার ‍‘জিগরা’-ছবির (Jigra) নায়িকা আলিয়া ভট্ট। ‍‘জিগরা’র পর্যালোচনা করতে বসে মন আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে শুধু আলিয়াতেই। কারণ এই ছবি আলিয়া ময়, ছবি শুরু থেকে শেষ শুধুই আলিয়া। তাঁকে দেখার, শোনার উপলব্ধি করার পর আশপাশের সবকিছুই কেমন যেমন ম্রিয়মাণ। ছবিটা বক্স অফিসে ডাহা ফেল কিন্তু ছবির প্রত্যেকটা ফ্রেমে আলিয়া অসাধারণ। দুরন্ত তাঁর অভিনয়।

‍‘জিগরা’ (Jigra) ছবিটি সেই ঘোষণার দিন থেকেই আশা জাগিয়েছিল দর্শক মনে। মা হওয়ার পর এই ছবির মাধ্যমে আবার বড়পর্দায় ফিরছেন আলিয়া ফলে স্বাভাবিক কারণেই তাঁর কামব্যাক নিয়ে উৎসাহ থাকবেই। তার ওপর ফিল্মি কেরিয়ারে এখনও পর্যন্ত খুব হাতগুনতি ছবি ফ্লপ আলিয়ার। বেশিরভাগ সুপারহিট। কাজেই উদ্দীপনা তুঙ্গে ছিলই। পরিচালক ভাসান বালা দর্শকদের সেই প্রত্যাশা পূরণে বিফল হলেও ছবিটা উতরে গেল শেষপর্যন্ত তার একমাত্র কারণ আলিয়া ভট্ট। ইতিমধ্যে যাঁরা ছবিটা দেখে ফেলেছেন তাঁরা জানেন ‍‘জিগরা’র তুরুপের তাস, অগতির গতি আলিয়া ভট্ট। যিনি মোটামুটি একাই টেনে নিয়ে গেছেন গোটা ছবিটা।

চিত্রনাট্যও খুব সবল নয় বরং ছবিটা দেখতে বসে কোথাও কোথাও অসম্পূর্ণ মনে হতে পারে, কনফিউশন আসতে পারে। তা সত্ত্বেও আলিয়া ভট্টের জন্যই দেখতে হবে এই ছবি। এবার ছবির গল্পের বিষয় আসা যাক।
সুদূর মালয়েশিয়ার একটি ছোট্ট দ্বীপ ‍‘হানসি দাওতে’। এই দ্বীপেই সত্যভামা আনন্দের ভাই অঙ্কুর আনন্দ এবং তার খুড়তুতো ভাই পড়াশুনো করে। আচমকাই ঘটে অঘটন। অঙ্কুর মাদক রাখার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়। কিন্তু সে এই ব্যাপারে কিছুই জানত না। সেই দেশের কঠোর আইনে অঙ্কুর মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়। সেখানকার পুলিশ তাকে একটি উচ্চ নিরাপত্তা সম্পন্ন জেলে নিয়ে যায়। অসহায় নির্দোষ অঙ্কুর সেই জেলে বসে মৃত্যুর জন্য দিন গুনতে থাকে। ভয়ঙ্কর এই জেল থেকে মুক্তি পাওয়া এককথায় অসম্ভব হলেও দিদি সত্যা বিশ্বাস করে, তার ভাই নির্দোষ, সে মরতে পারে না। সাহস এবং মনোবল নিয়ে সত্যা ওই দেশে যায় এবং ভাইকে মুক্ত করে আনার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে। একসময় প্রাক্তন এক পুলিশ অফিসার ভাটিয়া এবং অবসর নেওয়া গ্যাংস্টার মুথুর সঙ্গে সত্যার আলাপ হয়। ওদের ছেলেরাও বিভিন্ন অপরাধে শাস্তি পেয়ে ওই জেলেই মৃত্যুর জন্য দিন গুনছে। ভাটিয়া ও মুথুকে বুঝিয়ে সত্যা ওদের জেল থেকে মুক্ত করার কথা ভাবে এবং ওরা তিনজন মিলে ভয়ঙ্কর এক পরিকল্পনা করে। কী সেই পরিকল্পনা? তাতে কি তাঁরা সফল হবে? অঙ্কুর কি জেল থেকে সত্যিই মুক্তি পাবে?

আরও পড়ুন- সংখ্যালঘুদের ব্রাত্য করেই ৬ কমিটি গড়লেন ইউনুস

সত্যি খুব ইন্টারেস্টিং গল্প। শুনলেই মনে হবে দেখি কিন্তু রিলিজের পর শেষরক্ষা হয়নি, সব আশায় জল ঢেলে দিয়েছেন পরিচালক ভাসান বালা। যেটা প্রাপ্তি সেটা হল দীর্ঘ সফল ট্র্যাক রেকর্ড-সহ একজন প্রতিভাবান অভিনেত্রীর চমৎকার পারফরম্যান্স। অ্যাকশন স্টার হিসেবে এই ছবিতে তিনি আত্মপ্রকাশ করলেন। রাগ, অসহায়তা, যন্ত্রণার নিশ্চুপ অভিব্যক্তি সঙ্গে বিভিন্ন স্টান্ট দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন আলিয়া ভট্ট। এই ছবিতে তিনি অ্যাকশন কুইন। আলিয়ার ভাইয়ের চরিত্রে ভেদাং রায়না একজন নবাগত হিসাবে তেমন ছাপ রাখতে না পারলেও তার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। ভাটিয়ার চরিত্রে মনোজ পাহওয়া এবং মুথুর চরিত্রে রাহুল রবীন্দ্রন বেশ ভাল। ‍‘জিগরা’ সঙ্গে অনেকটাই মিল রয়েছে ৯০-এর দশকের সঞ্জয় দত্ত, রাহুল রায় ও শ্রীদেবী অভিনীত ‘গুমরাহ’ সিনেমার সঙ্গে। যদিও ওই ছবিতে সঞ্জয়ের প্রেমিকা ছিলেন শ্রীদেবী। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সঞ্জয় ফিরিয়ে এনেছিলেন শ্রীদেবীকে। এখানে বেদাং-এর বোনের চরিত্রে রয়েছেন আলিয়া। ভাইকে মৃত্যুমুখ থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফিরিয়ে আনবে তার বোন।
ভাসান বালা-পরিচালিত জিগরা (Jigra) রিলিজের দিন ভারতে মাত্র ৪.৫৫ কোটি সংগ্রহ করেছে, যা বলা যেতে পারে খুবই কম অঙ্ক।

জিগরার (Jigra) আগে, শুধুমাত্র আলিয়া ভট্টের একটি ছবি মুক্তির দিনে ৫ কোটির কম আয় করেছিল এবং সেটি ছিল হাইওয়ে। ২০১৪ সালে ইমতিয়াজ আলির ছবিটি ৩.৪৮ কোটিতে শুরু হয়। তারপর থেকে, কাপুর অ্যান্ড সন্স বাদে আলিয়ার সমস্ত ফিল্ম কমপক্ষে ৭ কোটি বা তার বেশি আয় করেছে। আলিয়ার কেরিয়ারের একমাত্র দুটি ফ্লপ ছবি শানদার এবং কলঙ্ক, কিন্তু উভয়েরই যথাক্রমে ১৩.১০ কোটি এবং ২১.৬০ কোটির বেশি দিয়ে শুরু হয়েছিল। এমনকী কোনও পুরুষ তারকা ছাড়া আলিয়ার একক চলচ্চিত্রের সবগুলোই ভালো ফল করেছে। রাজি ৭.৫৩ কোটি টাকা, ডিয়ার জিন্দেগি ৮.৭৫ কোটি এবং গাঙ্গুবাই কাথিয়াওয়াড়ি করোনাকালীন পরিস্থিতিতে মুক্তির দিনেও ১০.৫০ কোটি ঘরে তোলে। কিন্তু ‍‘জিগরা’ তার ধারপাশে যায়নি।
ধর্ম প্রোডাকশন এবং ইটারনাল সানশাইন প্রোডাকশনের এই ছবির প্রযোজনা করেছেন করণ জোহর, অপূর্ব মেহতা, শাহিন ভাট, আলিয়া ভাট এবং সৌমেন মিশ্র। ছবির চিত্রনাট্যকার ভাসান বালা এবং দেবাশিস ইরেংবাম। স্বপ্ননীলের সিনেমাটোগ্রাফি খুব ভাল লাগবে। ছবির সঙ্গীত পরিচালক অচিন্ত্য ঠক্কর, মনপ্রীত সিং।

Latest article