রাতের পর সকালেও তিনি সেই নবান্নেই

পরিস্থিতির উপর নজরদারি চালাতে নবান্নে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম সক্রিয় ছিল। সেখানেই রাত কাটান মুখ্যমন্ত্রী।

Must read

প্রতিবেদন : রাজ্যের মানুষের প্রহরী তিনি। তাই বিপর্যয়ের প্রহরে রাজ্যের প্রতিটি মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে বিনিদ্র রাত্রি যাপন করাই তাঁর অভ্যাস। এর আগে ইয়াস, আমফান, ফণী, রিমেল-এর সময় তার সাক্ষী থেকেছেন রাজ্যবাসী। এবার ঘূর্ণিঝড় ডানা’র হানাদারির সময়ও তার ব্যত্যয় হল না। সচিবালয় নবান্নে বসেই গোটা রাজ্যের উপর আক্ষরিক ভাবে অক্লান্ত নজরদারি চালালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গোটা দুর্যোগের রাত এবং তার পরের বৃষ্টিমুখর সকাল পেরিয়ে গড়াল দুপুর। তখন ঘূর্ণিঝড়ের অভিঘাতে রাজ্যের প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে টানা পর্যালোচনা বৈঠক। শুক্রবার দুপুরে এক-এক করে ভার্চুয়াল বৈঠকে ধরেছেন কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত ৭টি জেলার জেলাশাসক, পুলিশ সুপারদের। ব্লক ধরে ধরে খোঁজ নিয়েছেন ক্ষয়ক্ষতির। সঙ্গে দিয়েছেন একাধিক প্রশাসনিক নির্দেশ।

আরও পড়ুন-সেই হাথরস, বাড়িতেই বৃদ্ধাকে ধর্ষণ, ২৫ বছরের ডাকাত, ঘুরত প্রকাশ্যে

বৃহস্পতিবার বিকেলেই সাংবাদিক বৈঠকে তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন রাতভর থাকবেন নবান্নে। ঝড়ের ওপরে চালাবেন কড়া নজরদারি। দেখা গেল রাত কেটে ভোর হয়ে সকালেও সেই নবান্নে বসেই ঝড়বৃষ্টির ওপর নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার ভোর রাতে প্রবল শক্তি নিয়ে ‘ডানা’ আছড়ে পড়েছে ওড়িশার বুকে। দিল্লির মৌসম ভবন জানিয়েছে, ডানার স্থলভাগে ঢোকার প্রক্রিয়া শুরু হয় রাত সাড়ে এগারোটায়। তবে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী ‘রেডার সার্চ’ প্রযুক্তির মাধ্যমে ঝড়ের ল্যান্ডফল-এ নজর রেখেছিলেন সন্ধ্যা থেকেই। ঘণ্টায় প্রায় ১২০ কিমি বেগে ডানার ল্যান্ডফল লন্ডভন্ড করে দিয়েছে ধামরা-সহ আশপাশের এলাকা। রাত পেরিয়ে সকাল হয়েছে। তখনও নবান্ন থেকে গোটা পরিস্থিতির উপর নজরদারি চালিয়ে গেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। কথা বলেছেন উপকূলবর্তী জেলাগুলোর জেলাশাসকদের সঙ্গে। খোঁজ নিয়েছেন ক্ষয়ক্ষতির।

আরও পড়ুন-দিনের কবিতা

পরিস্থিতির উপর নজরদারি চালাতে নবান্নে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম সক্রিয়
ছিল। সেখানেই রাত কাটান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তী, রাজ্য পুলিশের ডিজি-সহ অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। উপস্থিত ছিলেন আলিপুর আবহাওয়া দফতরের প্রাক্তন অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথও। ছিলেন রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রী জাভেদ খানও। গতকাল সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক বৈঠকের মাধ্যমে রাজ্যবাসীকে বার্তা দিয়েছিলেন। তারপরেও রাতে সোশ্যাল মিডিয়া মারফত জানান, আমার রাজ্যবাসী যখনই কোনও বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন, আমি দিবারাত্রি তাঁদের পাশে থেকেছি। এবারও তার পরিবর্তন হয়নি। নবান্নে, রাজ্যের এমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার থেকে ঘূর্ণিঝড় ডানা পর্যবেক্ষণ করছি। আমাদের সরকার, প্রশাসন এবং সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধিরা সর্বদা আপনাদের সেবায় প্রস্তুত। ইতিমধ্যেই আমরা যা যা করণীয় সব করেছি। আপনারা ভয় পাবেন না, আতঙ্কিত হবেন না। সতর্ক থাকুন। আমরা আছি সর্বক্ষণ আপনাদের রক্ষার্থে।

আরও পড়ুন-হাজার কর্মী নিয়ে মনোনয়ন পেশ সিতাইয়ের তৃণমূল প্রার্থী সঙ্গীতার

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে হাল্কা ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয় দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সর্বত্র। উপকূলবর্তী এলাকায় রাত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার তীব্রতা। সেই সঙ্গে প্রায় ৫ ফুট উঁচু ঢেউ আছড়ে পড়তে শুরু করে। রাত বাড়তেই পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘায় প্রবল ঝোড়ো হাওয়া বইতে থাকে। সঙ্গে বৃষ্টি। উত্তাল হয়ে ওঠে সমুদ্রও। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জেলাগুলিতে যাওয়া প্রধান সচিবরাও সেখানকার অফিসে রাত জেগে পরিস্থিতির ওপর নজর রেখেছেন। রাতভর বিদ্যুৎ দফতরের কন্ট্রোল রুমে ছিলেন রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসও। রাতের মধ্যে রাজ্যের দু’লক্ষেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে খবর। ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার বাসিন্দা। দুপুরে ভিডিও কনফারেন্স করে জেলাগুলির প্রশাসনের কাছ থেকে ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক রিপোর্ট নেন মুখ্যমন্ত্রী। শস্য ও সম্পত্তিহানির বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করতে বলেন। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকার সবরকম আশ্বাস দেন। তারপরেই নবান্ন ছাড়েন। ততক্ষণে দুর্যোগের মেঘ অনেকটাই ফিকে হতে শুরু করেছে। ধরে এসেছে ভারী বৃষ্টি।

Latest article