প্রতিবেদন : ঘূর্ণিঝড় ডানার প্রকোপ এ-রাজ্যে তেমন না পড়লেও ঝোড়ো হাওয়া এবং প্রবল বর্ষণে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া ও হুগলি থেকে শস্যহানির খবর মিলেছে। তিন জেলা মিলিয়ে প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল দুর্যোগের কারণে নষ্ট হয়েছে বলে কৃষি দফতরের প্রাথমিক সমীক্ষায় উঠে এসেছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র পূর্ব মেদিনীপুর জেলাতেই ২০ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।
আরও পড়ুন-মানুষের প্রবল উচ্ছ্বাসের মাঝে প্রচার, উৎসাহ প্রার্থীদের ঘিরে
রাজ্যের কৃষি দফতরের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, একটানা বৃষ্টিতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ২০ হাজার হেক্টর জমি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছিল। অনেক জায়গায় ধানগাছ নুয়ে পড়েছে। তার ওপর জল জমে যাওয়ায় ক্ষতির আশঙ্কা বেশি। এছাড়াও ৩ হাজার হেক্টর জমিতে থাকা ফুল, সবজি এবং পানচাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষয়ক্ষতির এই প্রাথমিক রিপোর্ট রাজ্য কৃষি দফতরকে পাঠানো হয়েছে। অনেক জায়গায় মাছের ভেড়ি এবং পুকুর ভেসে গিয়েছে। গ্রামীণ রাস্তাঘাট পুরোপুরি জলের তলায়। ধান ও মাছ দু-টোতেই ক্ষতির আশঙ্কা বেড়েছে। হুগলি জেলা জুড়ে প্রায় ১২০০ হেক্টর জমির সবজি আর ধানের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মূলত, জল জমে যাওয়ার কারণেই সবজি চাষে তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। হাওড়া জেলাতেও গ্রামীণ এলাকায় চাষবাসের প্রভূত ক্ষতি হয়েছে। পুজোর মুখে বন্যার জলে চাষের জমি নষ্ট হয়েছিল। সাম্প্রতিক দুর্যোগ শীতকালীন সবজি চাষেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বাগনান, দেউলটি-সহ ফুলচাষের জন্য বিখ্যাত এলাকাগুলিতেও জল জমে ফসল পচে গেছে। এর ফলে কালীপুজোতেও ফুলের দাম বাড়তে পারে। পাশাপাশি মরশুমি ফুলের চাষ শুরু করাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। উদয়নারায়ণপুরের আলু বিখ্যাত। কিন্তু এই বৃষ্টিতে যেভাবে মাটি ভিজে আছে, তাতে আলু বসানোই সম্ভব নয় বলে জানাচ্ছেন কৃষকেরা। ডানা তার ঝড়ের দাপট এ-রাজ্যে দেখায়নি ঠিকই। কিন্তু হাতে না মারলেও, ভাতে মেরে দিয়েছে।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
প্রবল বর্ষণ-সহ শুক্রবার সকাল ৭টা পর্যন্ত সেই ঝড়ের দাপট চলে। আবার এ-রাজ্যে সেই ঝড়ের দাপট সেভাবে দেখা না গেলেও গতকাল সারাদিন প্রবল বৃষ্টিতে ভিজেছে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলি। বিশেষ করে দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি এবং দুই মেদিনীপুর। এদিন অর্থাৎ শনিবার সকাল থেকে বৃষ্টি কিছুটা কমতেই এ-রাজ্যের কোথায় কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার হিসাব কষা শুরু হয়ে গেছে। মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন দুর্যোগের কারণে যেসব কৃষকের ফসল নষ্ট হয়েছে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। বাংলা শস্যবিমা যোজনায় নাম নথিভুক্তকরণের সময়সীমাও বাড়ানো হয়েছে।