অধ্যাপক ড. রূপক কর্মকার: মুঘল, পর্তুগিজ, ফরাসি বা ব্রিটিশ প্রত্যেকের কাছে কোলকাতা বানিজ্যের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র নামে পরিচিত যুগ যুগ ধরে। প্রত্নতাত্ত্বিকেরা যদিও বিশ্বাস করেন যে কলকাতা ২ হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে সভ্যতার নিদর্শন বহন করে চলেছে, কিন্তু শহরের অলিগলিতে পা রাখলে মনে হয় আধুনিকতা যেন তার ছোঁয়ায় ছোঁয়ায়। ১৬৯০ সালে জব চার্নক, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন প্রশাসক, শহরে এসে স্থানীয় জমিদারদের কাছ থেকে তিনটি (সুতানটি, কলকাতা, গোবিন্দপুর) অঞ্চল কিনে নেন এবং সেটি ‘কোলকাতা’ নগরী নামকরণ হয়। তারপর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি শহরটিকে বানিজ্য নগরী হিসাবে গড়ে তুলতে থাকে।
আরও পড়ুন-প্রকৃতি সংরক্ষণে দক্ষিণ এশিয়ায় সবার পিছনে ভারত, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে মুখ পুড়ল কেন্দ্রের
১৭১৭ সালে মুঘল সম্রাট ফররুখ সিয়ার বার্ষিক ৩০০০ টাকার বিনিময়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বাণিজ্যের স্বাধীনতা প্রদান করার সাথে সাথে কলকাতার বিকাশে একটি বড় প্রেরণা দেয়। সেইসময় বিপুল সংখ্যক ভারতীয় বণিক শহরে এসে ভিড় জমান। ১৭৭২ সালে ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী শহর হিসেবে ঘোষণার পর কলকাতা শিল্পায়নের শহর হিসেবে পরিচিত হতে শুরু করে। এক কথায় বলা যায়, কলকাতা শহরের আবহাওয়া যেন কেমন এক অদ্ভুত ভাবে সকলকে আপন করে নিয়েছে। রিচার্ড ওয়েলেসলি, তৎকালীন কলকাতার গভর্নর জেনারেল যিনি স্থাপত্য প্রেমী, কলকাতাকে ‘প্রাসাদ-এর শহর’-এর রূপ দিয়েছিলেন। শিক্ষার প্রসার, পাশ্চাত্যায়নের মাধ্যম, বিস্তৃত ইতিহাস এবং সমৃদ্ধ ইতিহ্যের কারণে কলকাতা আজও ভারতের সংস্কৃতিক ও উৎসবের রাজধানী। বাঙালির শিল্প, সঙ্গীত, কবিতা, থিয়েটার, চলচ্চিত্র এক অন্যন মাত্রা পেয়েছে চিরকাল। কলকাতা তার পথপ্রদর্শক। ২০১১ সালে সম্মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর কলকাতা বিশ্ব মানচিত্রে এক অনন্যরুপ পেয়েছে। ধর্মঘট শূন্য, ২৪x৭ বিদ্যুৎ পরিষেবা এবং অবিচ্ছিন্ন জল সরবরাহ ব্যবসার উন্নতির এক অন্যতম প্রধান কারণ। অনেকের মতে বিশ্বাস করা হয় যে, কলকাতা শহরের প্রাচীন নাম এসেছে বাংলা শব্দ ‘কালীক্ষেত্র’ থেকে। যার অথ ‘দেবকালীর ভূমি’। যার সূত্র ধরে কলকাতার বুকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নিদর্শন দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের স্কাইওয়াক এবং কালীঘাট মন্দিরের স্কাইওয়াক (দ্রুত উদ্ধোধন হবে)।
আরও পড়ুন-দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে গুগলের হার, ২৪০ কোটি পাউন্ড জরিমানা
গঙ্গারঘাট সংস্করণ ও সৌন্দর্যায়ন, প্রাচীন স্থাপত্যের আধুনিকরণ দর্শকদের দৃষ্টি আকষণ করবে এটাই তো স্বাভাবিক। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এটাও প্রমান করেছে যে, উৎসব শুধু আনন্দ নয়, উৎসব কাজের অন্যতম উৎস। বিগত বছরগুলোর মতো এবছরও ইউনেস্কোর হেরিটেজ সম্মানপ্রাপ্ত বিশ্ববন্দিত দুর্গোৎসব বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মীরূপে আগমন করেছে। শুধু ২০২৪ সালে কমবেশি ১ লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে। রাজ্য জুড়ে এবং প্রায় ১৫০০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে, শুধু কলকাতায় ৪৫০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে। এটাই হয়তো কলকাতার গরিমা। বিশ্ব ভ্রমণের সঙ্গী হিসেবে কলকাতা সেরার মধ্যে থাকবে এটাই তো ভবিতব্য। রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় জলের তলদেশে মেট্রোরেল অথবা তথ্য প্রযুক্তি হাব অথবা প্রস্তাবিত সিলিকন ভ্যালি বিশ্ব বাণিজ্যের মানচিত্রে আবারও সেরার তকমা ছিনিয়ে আনবে এটা বলার সময় হয়তো এসেছে।