প্রতিবেদন : দেওয়ালি (Diwali) এবং ছটপুজোর আবহে গভীর দুশ্চিন্তার ছাপ দিল্লির যমুনার জলে। দূষণের মাত্রা শেষপর্যন্ত ঠিক কোথায় গিয়ে পৌঁছবে,তা ভেবেই আশঙ্কিত হচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। যমুনা নদীর দূষণে তাজমহলের ভিত ক্ষতিগ্রস্ত হবে কিনা তা নিয়েও গভীর সংশয় দেখা দিয়েছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে । দিল্লির যমুনা নদীর দূষণ গত কয়েক বছরে আশঙ্কাজনক মাত্রায় পৌছালেও এর উপরে দূষণের সাদা ফেনার স্তর বিশেষভাবে ভাবাচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
আরও পড়ুন-থিমের লড়াই, কালীপুজোয় বারাসত বনাম মধ্যমগ্রাম
পরিবেশ বিজ্ঞান বলছে, অ্যামোনিয়া এবং ফসফেটের মিশ্রণে নদীর ওপর তৈরি হচ্ছে এই ফেনার মত আস্তরণ। যে যাই সাফাই গাক না কেন , যমুনার এই দূষণের জন্য কেন্দ্রকেই মূলত দায়ী করছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে পরিবেশবিদরা। প্রশ্ন উঠেছে, জাতীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ভূমিকা নিয়েও। দিল্লি সরকারেরও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার দিকে উঠেছে আঙুল।
২০১২- ১৩ সালের কেন্দ্রীয় পরিবেশ দফতরের রিপোর্ট বলছে , কেন্দ্রীয় সরকারের নমানি গঙ্গে কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে গঙ্গা ও যমুনার পরিষ্কার কর্মসূচি বা মিশন সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এই বিষয়ক কমিটির মতামতের উপর ভিত্তি করেই এই রিপোর্ট। অথচ ব্যয় হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। নিকাশি ও বর্জ্য শোধনাগার সহ শহরে সবুজ প্রকৃতি স্থাপনের অভিযান যথাযথভাবে অগ্রসর হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
১৯৯৩ সালে ভারত ও জাপানের মধ্যে একটি চুক্তি হয় যমুনা অ্যাকশন প্ল্যান নামে নদী পুনরুদ্ধার কর্মসূচি শুরু করার জন্য । কিন্তু তার তেমন কোন সুফলও আজ পর্যন্ত পাওয়া গেল না। এই মুহূর্তে যমুনা দূষণের সবচেয়ে আশঙ্কাজনক কারণ গুলি কী কী? প্রথম কথা, বিভিন্ন কারখানার বর্জ্য পদার্থ এবং রাসায়নিক লাগামহীনভাবে এখনও পড়ে চলেছে যমুনায়। এছাড়া শহরাঞ্চলের জঞ্জাল এবং প্লাস্টিকও যমুনায় ফেলা হচ্ছে অবাধে। আইন আছে বটে, কিন্তু তবুও এই আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বুক ফুলিয়ে চলছে যমুনা দূষণের কাজ। প্রশাসন নির্বিকার। লক্ষণীয়, ইতিমধ্যেই বিশ্বে দূষণতম শহরগুলির মধ্যে দিল্লি দৃষ্টি আকর্ষণ করছে গোটা দুনিয়ার। পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং উত্তর প্রদেশের কিছু অংশের ফসলের ওই গোড়া পোড়ানোর ফলে যে ধোঁয়া বাতাসে মিশছে তাতে দিল্লির আকাশ -বাতাস বিষাক্ত করার পক্ষে যথেষ্ট। সুপ্রিম কোর্ট এই নিয়ে ভর্ৎসনা করেছে কেন্দ্র, পাঞ্জাব ও হরিয়ানা সরকারকে। এই দূষণই আরও দূষিত করছে যমুনার জলকে। কিন্তু সবথেকে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এই ধোঁয়া যমুনার উপরে অ্যামোনিয়া ফসফেটের ফেনার ভেতরে ঢুকে গিয়ে তাকে আরও পুরু ও বিপজ্জনক করে তুলছে। সামনেই ছটপুজো। এই অবস্থাতেই মানুষকে দূষণের অভিশাপ বুকে নিয়েই ছটপুজো করতে হবে যমুনায়। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বা দিল্লি প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়ালি এবং ছটপুজো উপলক্ষে যমুনার জলকে কিছুটা হলেও অন্তত দূষণমুক্ত করার কোনও উদ্যোগ দেখানো হচ্ছে না এখনও। অথচ যুগযুগ ধরে এই গঙ্গা এবং যমুনা নদীকে কেন্দ্র করেই পালিত হচ্ছে লক্ষ লক্ষ মানুষের ধর্মাচরণ।