গত সপ্তাহেই একইদিনে মুক্তি পেয়েছে দু-দুটো ব্লকবাস্টার্স মুভি। ‘সিংহম এগেইন’ আর ‘ভুলভুলাইয়া ৩’। দুটো ছবি নিয়েই দর্শকদের উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে। কে দৌড়বে আগে কে একটু পিছিয়ে। কে সুপারহিট আর কার বক্স অফিস কালেকশন মুখ থুবড়ে পড়বে। চাপা টেনশনে দু-তরফ থাকলেও প্রথম ধাপে বাজি মেরেছিল সেই মঞ্জুলিকাই। কারণ বক্স অফিসের হিসেব বলছে, শুধু অগ্রিম বুকিংয়েই কার্তিক আরিয়ান, বিদ্যা বালান, মাধুরী দীক্ষিত ও তৃপ্তি দিমরি অভিনীত এই ছবি এক কোটি টাকার ব্যবসা করে ফেলেছে। অন্যদিকে, অজয় দেবগণের ‘সিংহম এগেইন’ অগ্রিম বুকিংয়ে ব্যবসা করেছিল মাত্র ২৩ লক্ষ। কাজেই শুরুর চিত্র অনুযায়ী এগিয়ে থেকেছে ‘ভুলভুলাইয়া ৩’ (Bhool Bhulaiyaa 3)। আর মুক্তি পাবার পর দুটো ছবির মধ্যেই চলেছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। বাজিরাও সিংহম আর মঞ্জুলিকার টক্করে মঞ্জুলিকাই একনম্বরে। এই ছবি মাত্র তিনদিনের মাথায় পেরিয়ে গেল ১০০ কোটির ঘর। কার্তিক আরিয়ানের ফিল্মি কেরিয়ারে এখনও পর্যন্ত বিগেস্ট ওপেনিং ছিল এই ছবি। এবার ১০০ কোটির ঘরে ঢোকার নিরিখেও কার্তিকের কেরিয়ারে যুক্ত হল এই ছবি। ‘ভুলভুলাইয়া ৩’ এবং ‘সিংহম এগেন’ দু’টি ফ্রাঞ্চাইজিই বক্স অফিসে হিট হলেও এই দু’টি ছবিকে ইতিমধ্যেই নিষিদ্ধ করেছে সৌদি আরব প্রশাসন। কারণ, তাঁদের মতে দুই ছবির বিষয়বস্তুই ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করতে পারে। তাই সৌদিতে মুক্তি পাবে না কার্তিক আরিয়ান ও অজয় দেবগণের ছবি।
‘ভুলভুলাইয়া ৩’-এর এমন বাজারের কারণ কী?
আসলে কার্তিক আরিয়ান শুধু নয় এই ছবির অন্যতম মুখ্য আকর্ষণ হলেন বিদ্যা বালান। প্রায় ১৭ বছর পর কামব্যাক করলেন বিদ্যা। এবং কামব্যাক করেই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন তিনি। মঞ্জুলিকার চরিত্রের জন্য অনেকটা ওজন কমাতে হয়েছে তাঁকে।
‘আমি যে তোমার, শুধু যে তোমার!’ গা ছমছমে মহলে নূপুরের শব্দ। কানে ভেসে আসা মঞ্জুলিকার সেই গান আর নাচের দৃশ্য দর্শক তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেছেন। ছবিতে তাঁর অভিনয় যথেষ্ট প্রশংসিত হয়েছে। ছবির ট্রেলারেই গায়ে কাঁটা ধরিয়েছিলেন বিদ্যা। ছবিতেও তাঁর ব্যতিক্রম হয়নি। তবে এবার ‘ভুলভুলাইয়া ৩’-এর চমক হল মঞ্জুলিকা নাম্বার টু। বিদ্যার সঙ্গে আরও একজন মঞ্জুলিকা রূপে ধরা দিলেন। তিনি হলেন মাধুরী দীক্ষিত। যাকে বলে ডবল ধমাকা।
২০০৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত পরিচালক প্রিয়দর্শনের ‘ভুলভুলাইয়া’ সাড়া ফেলে দিয়েছিল। সাইকোলজিক্যাল হরর কমেডি ঘরানায় নতুন স্রোত এনেছিল এই ছবি। এমন ঘরানার ছবি দেখতে দর্শক তখনও অভ্যস্ত নয়। ঠিক সেই সময় এমন একটা ছবি দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধের মতো বসিয়ে রেখেছিল প্রেক্ষাগৃহে। অক্ষয়কুমার আর বিদ্যা বালানের অভিনয় মনে রেখেছে দর্শক। এরপর সেই জনপ্রিয়তার কারণে ২০২২-এ মুক্তি পায় এই ছবির সিক্যুইল ‘ভুলভুলাইয়া ২’। যেখানে অক্ষয়কুমারের জুতোয় পা গলিয়েছিলেন কার্তিক আরিয়ান। বেশ ভাল অভিনয় করেছেন কার্তিক। তার সঙ্গে সহ-অভিনেত্রী হিসেবে ছিলেন কিয়ারা আদবানি। এই ছবির মঞ্জুলিকা তাব্বু। কিন্তু বিদ্যার মঞ্জুলিকার মায়া যেন ছেড়েও ছাড়া যাচ্ছিল না।
আরও পড়ুন-অভিষেকের জন্মদিনে শপথ ডায়মন্ড হারবারের
এবার ‘ভুলভুলাইয়া ৩’-তে (Bhool Bhulaiyaa 3) পরিচালক অনীশ বাজমির হাত ধরে ফিরলেন ‘রুহ বাবা’ কার্তিক আরিয়ান আর পুরনো মঞ্জুলিকা। সঙ্গে আবার আনকোরা এক নতুন মঞ্জুলিকাও থুড়ি অঞ্জুলিকা। দুই বোন মঞ্জুলিকা-অঞ্জুলিকা। মঞ্জুলিকা-অঞ্জুলিকা একাধারে যোদ্ধা ও দুরন্ত নৃত্যশিল্পী। কিন্তু তবুও রাজ সিংহাসন দখলের লড়াইয়ে জিতে যান তাদের ভাই রাজকুমার দেবেন্দ্র। ব্যস, জ্বলে ওঠে হিংসার আগুন। শুরু ক্ষমতা এবং প্রতিশোধের লড়াই। ছবিতে রয়েছে ভয়ের ছবির সেই পুরনো ফর্মুলা পুনর্জন্ম বৃত্তান্ত। এদিকে, রুহ বাবা বা রুহান এক ধড়িবাজ ওঝা। ভূত ভাগানো যার কাজ। সে কলকাতার এক ভুতুড়ে বাড়িতে আসে ভূত ভাগাতে। আর সেখানেই বাধে যত গোলমাল। ওখানে তার সাক্ষাৎ হয় দুই প্রতিশোধস্পৃহ পেত্নির সঙ্গে। যারা দুজনেই নিজেদের মঞ্জুলিকা বলে দাবি করে। কী করবে এবার রুহান! দুই মঞ্জুলিকার রহস্য সমাধান করতে গিয়ে দুই অতৃপ্ত আত্মার প্রতিশোধমনস্কতার পিছনে লুকিয়ে থাকা এক বড় রহস্যের পর্দা ফাঁস করবে কি সে? কী ঘটেছিল অতীতে। ছবির শেষে রয়েছে এক চমকপ্রদ ট্যুইস্ট। সেটা যাঁরা এখনও ‘ভুলভুলাইয়া ৩’ দেখে উঠতে পারেননি তাঁদের জন্য।
‘ভুলভুলাইয়া ৩’-এ (Bhool Bhulaiyaa 3) কার্তিক আরিয়ান, বিদ্যা বালান, মাধুরী দীক্ষিত ছাড়াও রয়েছেন তৃপ্তি দিমরি, রাজপাল যাদব, সঞ্জয় মিশ্র, বিজয়া রাজ, অশ্বিনী কালেসেকর প্রমুখ। উল্লেখ্য হল, এই ছবিতে অভিনয় করেছেন টলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক। কার্তিক আরিয়ান আর তৃপ্তি দিমরি এই ছবিতে প্রথমবার জুটি বাঁধলেন।
ইউটিউবে বিদ্যা-মাধুরীর ‘আমি যে তোমার’ গানটি ছুঁয়ে ফেলেছে ২৬ মিলিয়নের বেশি ভিউয়ার সংখ্যা। আইকনিক এই গানে মাধুরীর সঙ্গে অসাধারণ সঙ্গত দিয়েছেন বিদ্যা। ছবিতে আর একজনের কথা না বললেই নয় তিনি বাংলার অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক। এই প্রথমবার কার্তিক আরিয়ান কাজ করলেন তাঁর সঙ্গে। সেই প্রসঙ্গে কার্তিক জানান, দারুণ মজা করে কাজ করেছেন৷ বড় বড় দৃশ্য খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতেন৷ সংলাপ না থাকলেও শুধুমাত্র চোখ দিয়েই দারুণ কমেডি করেছেন ছবিতে অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক৷
অনীশ বাজমি পরিচালিত এই ছবির কাহিনিকার আকাশ কৌশিক। দারুণ সিনেমাটোগ্রাফি করেছেন মনু আনন্দ। ছবিতে সঙ্গীত করেছেন সন্দীপ শিরোদকর। গান গেয়েছেন সচেত-পরম্পরা, তানিষ্ক বাগচী, আমাল মল্লিক প্রমুখ। প্রযোজনায় টি-সিরিজ এবং সিনে ১ স্টুডিও।