বিয়ে কোনও সাজা নয়

আমাদের দেশে দারিদ্র কমেছে, বেড়েছে শিক্ষার হার, এসেছে সামাজিক প্রথায় নানা পরিবর্তন। কিন্তু নারীর অবস্থান আজও বদলায়নি। সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাঙ্কের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী বিয়ের পর নাকি ভারতীয় মহিলাদের কর্মসংস্থানের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় উচ্চশিক্ষিত ১০ জন নারীর মধ্যে ৪ জনই স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেন। বিবাহ-জরিমানা দেন তাঁরা। তাহলে বিয়েই কি মেয়েদের কেরিয়ার ধ্বংসের জন্য দায়ী? পর্যালোচনায় শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

প্রায় ছ’ বছরের সম্পর্ক তিয়াসা আর রাজীবের। তিয়াসার সঙ্গে রাজীবের পরিচয় হয়েছিল একটা মডেল হান্ট প্রতিযোগিতায়। রাজীব ছিল সেই প্রতিযোগিতার আয়োজক সংস্থার উচ্চপদস্থ অধিকর্তা। তিয়াসার সঙ্গে পরিচয় হয়, সম্পর্ক একটু একটু করে বাড়তে থাকে। এরপর তিয়াসা মডেলিং থেকে অভিনয় জগতে চলে আসে। ওর ফোকাসটা প্রথমদিন থেকেই অভিনয়েই ছিল। কয়েকটি মেগা করে বেশ নামও হয় তাঁর। রাজীব সেটেলড ছিলই এখন তিয়াসাও পশার জমিয়েছে। কাজেই বিয়েটা সেরে ফলতে চায় রাজীব। শুভস্য শীঘ্রম। বিয়েটা দুই পরিবারের সম্মতিতেই হয়। যদিও রাজীবের মা একটু ঘরোয়া, সাধারণ মেয়েই চেয়েছিলেন। ছেলে কোনও মডেল, অভিনেত্রী বিয়ে করুক চাননি। কিন্তু অত নামডাক এখন তিয়াসার, ফলে তিনি আর না বলেন কী করে! রাজীবের ইচ্ছে ছিল বিয়ের পর তিয়াসা অভিনয়টা শখেই করুক। তিয়াসারও আপত্তি ছিল না তাতে। বিয়ের পর নিজে থেকেই অভিনয় কমিয়ে দিয়েছিল। টুকটাক মডেলিং করত। নিজের ইউটিউব চ্যানেল খুলল। কয়েক মাসেই বেশ ভাল সাবস্ক্রাইবার। ওই সংসারের রোজনামচা হল কনটেন্ট। স্বামী প্রতিষ্ঠিত, তিয়াসার ঘরে বসেই একটু হাতখরচের টাকা উঠে আসা— আর কী চাই! এরপর একবছরের মধ্যেই সন্তানসম্ভবা হল। ওরা তখন কোনও রিস্ক নেয়নি। কাজ ছেড়ে দিল তিয়াসা। ছেলে হওয়ার পর রাজীবের দায়িত্ব আরও বাড়ল। ও আরও বেশি করে কেরিয়ারে মন দিল। আর ছেলেকে দেখভাল করতে পাকাপাকিভাবে কেরিয়ার বিসর্জন দিল তিয়াসা। আসলে রাজীবের যা উপার্জন তার চাকরি তো না করলেই চলে। কাজেই অসুবিধে কোথায়।

আরও পড়ুন-বিপর্যয়ের জের, গম্ভীর-রোহিতের সঙ্গে ম্যারাথন বৈঠক বোর্ডের

সম্প্রতি একটা খবর অনেকেরই নজরে এসে থাকবে। ১৯৮৮ সালে শুধুমাত্র বিয়ে করার জন্য চাকরি চলে যায় সেলিনা জনের। সেলিনা কাজ করতেন মিলিটারি নার্সিং সার্ভিসে। এর প্রতিবাদে তিনি মামলা করেন এলাহাবাদ হাইকোর্টে। এরপরে সেই মামলা ঘুরে ফিরে যায় সুপ্রিম কোর্টে। টানা ২৬ বছর আইনি লড়াইয়ের পর সেই মামলাতেই চলতি বছরের শুরুর দিকে ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, এমন ধরনের পিতৃতান্ত্রিক নিয়ম মানুষের মর্যাদাবোধের পরিপন্থী ও বিভেদহীন সমাজের বিরোধী। ২৬ বছরের আইনি লড়াইয়ে পর বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত কেন্দ্রকে নির্দেশ দেন সেলিনা জন নামের ওই প্রাক্তন নার্সকে ৬০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে সংস্থাকে। ঐতিহাসিক রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলে যে বিয়ের কারণ দেখিয়ে কোনও মহিলাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা যাবে না।
দুটো ঘটনার মধ্যে একটি কাল্পনিক আর একটা সত্য। এই প্রসঙ্গটা উঠল কারণ এটাই যে, বিয়ের বিনিময় চাকরি— নারীজীবনে এটা কোনও শর্ত হতে পারে না। নারীত্বের নামে, স্ত্রীত্বের, মাতৃত্বের নামে মহিলাদের ওপর যুগ যুগ ধরে হয়ে আসা বিভিন্ন অন্যায় এমন কতশত রয়েছে। সেলিনা জনের মামলায় সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্যে ‘পিতৃতান্ত্রিক নিয়ম’ এই শব্দদুটো খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে এই পিতৃতান্ত্রিকতার বলিই প্রায় বেশিরভাগ নারী। কেউ স্বেচ্ছায়, কেউ-বা অনিচ্ছায়। তিয়াসাকেই কেন বিয়ের পর থেকে একটু একটু করে নিজের কেরিয়ার থেকে সরে আসতে হল! কেন ছেলে মানুষ করতে শুধু তাঁকেই একমাত্র প্রয়োজন, তাঁর স্বামীকে নয় এটা মনে হল। বাবা এবং মা দু’জনেই যখন সন্তানের জন্ম দিয়েছে তখন একইসঙ্গে কেয়ারগিভার হতে এবং একইসঙ্গে তাকে মানুষ করতে এবং পাশাপাশি একইরকম ভাবে কেরিয়ার গড়তে অঙ্গিকারবদ্ধ হল না? কেন অলিখিতভাবে আর পাঁচটা পরিবার, স্বামী, শাশুড়ির মতো তিয়াসাও ভেবে নিল বিয়ের পর স্বামী, শাশুড়ি এবং সন্তানের কেয়ারগিভিংয়ের দায় শুধু তাঁরই।

আরও পড়ুন-সঞ্জুর ব্যাটে আফ্রিকান সাফারি ও জয়

অন্যদিকে, সেলিনা জনের ঘটনায় প্রশ্ন, একটা প্রতিষ্ঠানও কেন বিয়ের পর একটি মেয়েকে কাজের যোগ্য ভাবতে পারল না। কেন বিয়ের কারণেই চাকরি চলে গেছিল তাঁর। এর মূলে রয়েছে কঠিন পিতৃতান্ত্রিক মনোভাব। সেলিনা আইনি লড়াই লড়েছিলেন একটা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ফলে মামলায় জিতে ক্ষতিপূরণও পেয়েছিলেন। কিন্তু বিয়ের পর স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায়, পরিবারকে ভালবেসে বা পরিবারের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে জরিমানাস্বরূপ পাকা চাকরি ছেড়ে দেন এমন কত মেয়ে রয়েছে। বিশেষ করে মাতৃত্ব আসার পর সম্পূর্ণরূপে পর্দার আড়ালে চলে যান আচ্ছা আচ্ছা কেরিয়ারিস্ট মেয়ে থেকে সেলিব্রিটিও।
বলিউডের অভিনেত্রী অনুষ্কা শর্মা প্রথম সন্তান জন্মানোর পর স্বেচ্ছায় কেরিয়ার বিসর্জন দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় সন্তান জন্মের পর মোটামুটি কেরিয়ার থেকে অবসরই নিয়েছেন বলা চলে। তিনি তাঁর বাচ্চাদের দিকে আরও বেশি মনোযোগী হতে চান এটাই ছিল তাঁর বক্তব্য কিন্তু সেই সন্তানের বাবা বিরাট কোহলিকে তো এমনটা করতে হল না বা ভাবতে হল না! তিনি আরও বেশি করে কেরিয়ারে ডুবে গেলেন। স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় মেয়েরাই জরিমানা দেয় বিয়ের এবং মাতৃত্বের। এমন উদাহরণ ভূরি ভূরি।
বিশ্বব্যাঙ্কের সমীক্ষা অনুযায়ী বিয়ের পরে প্রায় ১৩% মহিলা চাকরি ছেড়ে দেন। যাকে বলা হচ্ছে ‘ম্যারেজ পেনাল্টি’ বা ‘বিবাহের জরিমানা’। বিয়ের পরে মহিলাদের কেরিয়ার গ্রাফ যতটা নিচে নামে বিপরীতে ঠিক ততটাই ওপরে ওঠে পুরুষের কেরিয়ার গ্রাফ। মেয়েদের কাছে যা ম্যারেজ পেনাল্টি পুরুষের কাছে সেটাই ‘ম্যারেজ প্রিমিয়াম’। বিয়ে নামক জীবনের এই সুন্দর পর্বটি যাকে নতুন জীবনের সূচনা বা নিউ বিগিনিং বলে ঢাকঢোল পিটিয়ে, লোকজন খাইয়ে সেলিব্রেট করেন দম্পতি, সেই বিয়ের পরেই বহু মেয়ের জীবনেই চাকরির মতো গুরুত্বপূর্ণ একটা পর্বের দি এন্ড বা ইতি হয়ে যায়। বিশ্ব ব্যাঙ্কের সমীক্ষাই বলছে এক- তৃতীয়াংশ মহিলা বিয়ের পর চাকরি থেকে অব্যাহতি নেন।

আরও পড়ুন-রাজ্যে দুই সংস্থার দুই প্রকল্প, চাকরি ১২ হাজারের বেশি

‘সাউথ এশিয়া ডেভলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদনের বিশ্লেষণ বলছে, ভারতীয় মেয়েদের কর্মনিযুক্তি ১৩ শতাংশ কমে যায় বিয়ের পরে, এমনকী সন্তান না জন্মালেও সেটা কমেই। পুরুষদের ক্ষেত্রে ঠিক বিপরীত ঘটে, বিয়ের পরে তাদের কর্মনিযুক্তি বাড়ে প্রায় ১৩ শতাংশ। সম্ভবত এর কারণ বিয়ের পরে অনেক পুরুষ নিয়মিত কাজের জগতে প্রবেশ করে। তাদের দায়িত্ব বাড়ে পরিবার প্রতিপালনের ক্ষেত্রে ফলে তাঁরা শুধু চাকরিই করেই ক্ষান্ত থাকেন না নিজের কেরিয়ার নিয়ে আরও বেশি সচেতন হয়ে ওঠেন। আরও বেটার পজিশনে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে বিয়ের জরিমানার সঙ্গে অনতিবিলম্বে যোগ হয় ‘মাতৃত্বের জরিমানা’ও। সন্তানের লালন-পালন করার জন্য কাজের ক্ষেত্র থেকে মেয়েরা বিদায় নেয়। একটি সমীক্ষা বলছে, দক্ষিণ এশিয়ায় মেয়েদের তিনজনের মধ্যে দু’জনই কাজের জগতে যোগ দিতে পারছে না। দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ দেশ মেয়েদের কর্মনিযুক্তির নিরিখে বিশ্বে শেষের সারিতে রয়েছে। সামগ্রিক ভাবে এই অঞ্চলে পুরুষদের কর্মনিযুক্তির হার ৭৭ শতাংশ, মেয়েদের ৩২ শতাংশ।
মাতৃত্বের মতো সুখকর ঘটনাও একটা সদ্য হওয়া মা বা নারীর সারাজীবনের বাধা হয়ে দাঁড়ায়। চাকরি না সন্তান কাকে নির্বাচন করবেন এমন এক দ্বৈত পরিস্থিতির সম্মুখীন হন তাঁরা। সন্তানের ২৪X৭ কেয়ারগিভার হতে গিয়ে আর্থিক স্বাবলম্বনের দায়িত্ব থেকে নিজেরাই অব্যাহতি নেন। অনেক মেয়ে বাধ্য হয়েও করেন। কারণ তাঁদের কাছে আর কোনও দ্বিতীয় অপশন থাকে না। মেয়েদের শ্রমশক্তির পুরোটাই নিয়োজিত হয় সংসার পরিচর্যার কাজে, পারিবারিক উৎপাদনের কাজে। যা আসলেই এক অবৈতনিক শ্রম। জীবনভর একজন মা, একজন স্ত্রী এই বেতনহীন শ্রমিক। বিশ্বব্যাঙ্কের সাম্প্রতিক হিসাব, মেয়েরা যদি পুরুষদের সমান হারে কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত হত, তা হলে দক্ষিণ এশিয়ার জিডিপি এবং মাথাপিছু আয় বেড়ে যেত ১৩ শতাংশ থেকে ৫১ শতাংশে।

আরও পড়ুন-মাদারিহাট থেকে মেদিনীপুর প্রার্থীদের ঘিরে জনজোয়ার

এবার আসি উচ্চশিক্ষিত নারীদের প্রশ্নে। উচ্চশিক্ষিত নারীদের চাকরি ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউয়ের গবেষণা বলছে, কোনও না কোনও কারণে উচ্চশিক্ষিত ১০ জন নারীর ৪ জন স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেন। এই সংখ্যা ৩৭ শতাংশ। আর উচ্চশিক্ষিত মায়েদের চাকরি ছেড়ে দেওয়ার হার আরও বেশি ৪৩ শতাংশ। এই নারীরা বয়স্ক মা-বাবা ও বড় হতে থাকা সন্তানের মধ্যে আটকা পড়েন। প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়েছেন বা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন, এমন শিক্ষিত নারীদের সবার একটি বিষয়ে মিল রয়েছে, তা হল পারিবারিক সচ্ছলতা। স্বামীর আয় যথেষ্ট নয়, এমন নারীরা চাকরি ছাড়েননি। চাকরি ছেড়ে দেওয়া ৩২ শতাংশ নারী জানিয়েছেন, তাঁদের স্বামীর উপার্জন একা সংসার চালানোর জন্য যথেষ্ট। বিষয়টা কী অদ্ভুত তাই না! এর থেকে বোঝা যায় মেয়েদের মধ্যেই পিতৃতন্ত্রের কাছে নতিস্বীকার করার বিষয়টা প্রোথিত রয়েছে। শিক্ষাজীবনে ব্যাপক সাফল্য পাওয়ার পর কেরিয়ার গঠনের দৌড়ে নারীর পিছিয়ে থাকার কারণ হিসেবে অনেকেই বিয়েকে দায়ী করেন। কারও কারও মতে, ‘Marriage is the speed breaker of life’।
কিন্তু এই কথাটা আসলে কতটা সত্যি? আপাতদৃষ্টিতে ‘বিয়ে’ নারী-পুরুষ উভয়ের কেরিয়ার গঠনের ক্ষেত্রে অন্তরায় মনে হলেও আসলে মূল সমস্যা অন্য জায়গায়। কেরিয়ার গড়ার জন্য বিয়েকে প্রতিবন্ধক ভাবা হলেও আসল প্রতিবন্ধকতা রয়েছে মানুষের মনে, লিঙ্গ বৈষম্যে, পারস্পরিক বোঝাপড়ায়, দায়বদ্ধতায়, দায়িত্বশীল মনোভাবে। বিয়ে নয় বরং বিয়ের পর নারীর উপর অর্পিত হওয়া দায়িত্ব ও কাজের চাপ নারীর কেরিয়ার গঠনে প্রতিবন্ধক। আর সেই চাপটা এখনও বেশিরভাগ মেয়ে একাই নেন। পুরুষটি মনে করেন শুধু রোজগার করে আসাটাই তাঁর একমাত্র দায়িত্ব। বাদবাকি সব দায় এবং দায়িত্ব পরিবারের মহিলাটির। সে যদি চাকরিও করে তাহলেও সেই দায়িত্ব সমান ভাগ হয় না।
সাত-আটের দশক থেকেই দক্ষিণ এশিয়ার নানা দেশে দারিদ্র কমেছে, শিক্ষার হার বেড়েছে, সামাজিক নানা প্রথায় পরিবর্তন এসেছে। অথচ মেয়েদের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করার অভ্যেস দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে এখনও প্রবল। অনেকেই আমরা এটা ভেবেছি যে, মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার হার বাড়লে, তাঁরা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হলে, তাঁদের কর্মনিযুক্তি বাড়বে, অনেক বেশি সংখ্যক মহিলা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হবে, সামর্থ্য এবং সক্ষমতাও আসবে, সমাজে লিঙ্গবৈষম্য দূর হবে, পিতৃতান্ত্রিকতার শিকল থেকে মুক্ত হবে নারীসমাজ কিন্তু তা হয়নি। শিক্ষিত মেয়েদেরও জীবন নিয়ন্ত্রণের অধিকারও সেই পিতৃতন্ত্রের হাতেই, নিজেদের রোজগারের উপরে বহু মেয়েরই অধিকার থাকছে না।

আরও পড়ুন-টানা ৩ দিন ৩৭০ ইস্যুতে উত্তপ্ত কাশ্মীর বিধানসভা! বের করে দেওয়া হল বিজেপি বিধায়কদের

সমাজের এই চিত্র বদলানোর জন্য মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষার ব্যাপক প্রসার জরুরি আর জরুরি হল লিঙ্গসাম্য। বিশ্বব্যাঙ্ক সেই কথাই বলেছে। এই বৃহৎ লক্ষ্যে এগনোর কথাও বারবার উঠে এসছে। সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে সমাজের তৃণমূলস্তর থেকে মেয়েদের তৈরি করতে হবে। যাতে শ্রমজীবী, কৃষিজীবী মেয়েরাও অনেক সহজে রোজগার করতে পারেন। কাজের সম্মানজনক শর্ত, নিরাপদ যানবাহন ও কর্মক্ষেত্র, যথেষ্ট শৌচালয়, সন্তানের জন্য ক্রেশ, এমন নানা ব্যবস্থা করার কথা আইনে রয়েছে সেগুলোকে কার্যক্ষেত্রে রূপায়িত করাতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে কর্মরত মেয়েদের জন্য সুস্থ, সবল কাজের পরিবেশ গড়ে তুলতে নানা ধরনের পরিষেবার কথা ভাবতে হবে। সর্বোপরি পরিবারকে এগিয়ে আসতে হবে। যাতে একটি মেয়ে পরিবারের ছেলেটির মতো করেই কেরিয়ার কম্প্রোমাইজ না করেই নিজের জীবনের যাবতীয় দায়দায়িত্ব পালন করতে পারে। বিবাহের জরিমানার বিরুদ্ধে লড়াইটা কিন্তু শুধু নারীদের জন্য নয়, ভারতের ভবিষ্যৎকে উজ্জ্বল করাটাও এই লড়াইয়ের উদ্দেশ্য।

Latest article