হাওড়ার অস্মিতা সেনাপতি। সাখাওয়াত মেমোরিয়াল সরকারি উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। যোগাসনের মধ্যে দিয়ে নিজেকে মেলে ধরেছেন। পাশাপাশি করেন আবৃত্তি, গান, তবলার চর্চা। পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী
এই মুহূর্তে বাংলার যোগাসনে উল্লেখযোগ্য নাম অস্মিতা সেনাপতি। কলকাতার সাখাওয়াত মেমোরিয়াল সরকারি উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এই ছাত্রী থাকেন হাওড়ায়। মাত্র চার বছর বয়স থেকে তাঁর যোগাসনচর্চার শুরু। বাড়ির কাছেই সাঁতরাগাছি ‘ভাই ভাই’ সংঘ ক্লাব। সেখানে হত যোগাসন ক্লাস। বাবা বিভূতি সেনাপতির হাত ধরে ভর্তি হয়েছিলেন। শুরু থেকেই তিনি নজরে পড়েন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। অল্প বয়সেই নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে লাভ করেছেন বিশেষ পরিচিতি।
আরও পড়ুন-Debesh Chattopadhyay: আমি অভিনেতাদের কোনও ইনস্ট্রাকশন দিই না
অস্মিতা বিভিন্ন সময় যোগাসনের শিক্ষা নিয়েছেন গীতা মণ্ডল, স্বাগতা রায়, বন্দনা ভৌমিক, অলক জানার কাছে।
বহু যোগাসন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন অস্মিতা। পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। তাঁর কথায়, আজ পর্যন্ত অনেক পুরস্কার ও শংসাপত্র পেয়েছি। তবে প্রথম পুরস্কারের গুরুত্বই আলাদা। তখন আমি খুব ছোট। হাওড়ার জগাছা শক্তি সংঘের যোগাসন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলাম। প্রথমবার কোনও প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েই হয়েছিলাম প্রথম। তারপর আমার উৎসাহ অনেক বেড়ে গিয়েছিল। সেই পুরস্কারটি আজও আমার ঘরে সাজানো রয়েছে।
আরও পড়ুন-KMC Election: প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পরেই প্রচারে নেমে পড়ল তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীরা
আন্তর্জাতিক, জাতীয়, আঞ্চলিক— বহু গুরুত্বপূর্ণ যোগাসন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন অস্মিতা। পেয়েছেন সাফল্য। ২০১৬ সালে ৬৫তম সার্ক ইন্টিগ্রেশন শিশুমেলার যোগাসন প্রতিযোগিতায় লাভ করেন দ্বিতীয় স্থান। ২০১৭ সালে জেলাস্তরে প্রথম স্থান অর্জন করেন, রাজ্যস্তরে অর্জন করেন দ্বিতীয় স্থান। তবে প্রতিবেশী রাজ্য অসমে জাতীয়স্তরের যোগাসন প্রতিযোগিতায় চতুর্থ স্থান অর্জন করেন। ২০১৮ সালে জাতীয় স্তরের যোগাসন প্রতিযোগিতার আসর বসেছিল রাঁচিতে। অংশ নিয়েছিলেন অস্মিতা। লাভ করেছিলেন দ্বিতীয় স্থান। পরের বছর, ২০১৯ সালে পুদুচেরিতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক স্তরের যোগাসন প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। ওই বছরই ইন্টার স্কুল কলেজ যোগা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন অস্মিতা। পেয়ে যান প্রথম পুরস্কার।
আরও পড়ুন-বিজেপি-সিপিএমে ভাঙন টিটাগড়ে
এই সময় বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয় যোগাসনকে। আয়োজিত হয় প্রতিযোগিতা। অস্মিতা অংশগ্রহণ করেন সেখানেও। বিদ্যালয় থেকে অষ্টম, নবম, দশম— অল বেঙ্গল ইন্টার গভর্নমেন্ট স্কুল স্পোর্টস মিটে প্রথম, তৃতীয় ও দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। আবার ২০২০ সালে মুর্শিদাবাদে ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট কাউন্সিল ফর স্কুল গেমস অ্যান্ড স্পোর্টস আয়োজিত যোগাসন প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন। এইভাবে তিনি পেতে থাকেন একটার পর একটা সাফল্য। যোগাসন জগতের অনেকের ধারণা, আগামী দিনে অস্মিতার জন্য আরও অনেক সাফল্য অপেক্ষা করছে।
আরও পড়ুন-বিজেপি-সিপিএমে ভাঙন টিটাগড়ে
যোগাসন প্রদর্শনী ও যোগাসন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার পাশাপাশি অস্মিতা যোগা-নৃত্য পরিবেশন করেছেন বিভিন্ন মঞ্চে। পেয়েছেন শংসাপত্র এবং মানুষের ভালোবাসা। অনেককেই তিনি যোগাসন চর্চার ব্যাপারে উৎসাহ দেন।
শুধুমাত্র পড়াশোনা এবং যোগাসন চর্চার মধ্যেই নিজেকে আটকে রাখেননি অস্মিতা। দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে আবৃত্তি শিখছেন ‘ছোটর দাবি’ প্রতিষ্ঠানে। পাশাপাশি শিখছেন গান এবং তবলা। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, জীবনানন্দ সভাঘরে আয়োজিত বিভিন্ন কবিতার অনুষ্ঠানে ও হাওড়া জেলা বইমেলায় তিনি সুনামের সঙ্গে পরিবেশন করেছেন আবৃত্তি। পেয়েছেন স্মারক সম্মাননা ও শংসাপত্র। অংশগ্রহণ করেছেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ আয়োজিত অনুষ্ঠানেও।
আরও পড়ুন-Indian Constitution Day: ২৬ নভেম্বর, ভারতীয় সংবিধান দিবস
তাঁর পরিবেশিত বেশ কয়েকটি আবৃত্তির ভিডিও রীতিমতো জনপ্রিয় হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। বহু মানুষ ইউটিউবে অনুষ্ঠানগুলো দেখেছেন এবং প্রশংসা করেছেন। আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেও অস্মিতা পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। বালিটিকুরি ‘তরুণ দল’ ক্লাবের রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতায় বহুজনের মধ্যে পেয়েছেন প্রথম স্থান। পাশাপাশি কলকাতার শ্রীঅরবিন্দ ভবনের আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় পরপর দু-বছর দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জন করেন। পার্ক সার্কাস শরৎ মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউট-এর আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় লাভ করেন তৃতীয় পুরস্কার।
আচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বসুর ১২৫তম জন্মবর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ একটি বক্তৃতা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল। কলকাতা জেলাস্তরের সেই প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেন অস্মিতা। পাশাপাশি তিনি জাতীয় স্তরের বিজ্ঞান শিক্ষকদের একটি সংগঠনের রাজ্যস্তরের বক্তৃতা প্রতিযোগিতাতেও প্রথম স্থান লাভ করেন।
আরও পড়ুন-আয় খুকু আয়…
এ ছাড়াও বিভিন্ন কুইজ প্রতিযোগিতায় একক এবং দলগতভাবে অংশ নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় স্থান লাভ করেন। প্রতিটি পুরস্কার শোভা পাচ্ছে তাঁর আলমারি, শোকেসে।
বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অস্মিতা অংশগ্রহণ করেছেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রেড রোডের প্যারেডে। ২০১৯ এবং ২০২০ সালে। অভিবাদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এটা তাঁর জীবনের স্মরণীয় ঘটনা। ২০২১ সালেও রেড রোডে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড প্রচারিত ট্যাবলোয় অংশ নিয়েছেন। এর পাশাপাশি বিদ্যালয় থেকে বাস্কেটবলের প্রতিযোগিতাতেও অংশগ্রহণ করেছেন।
বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে অনুষ্ঠান পরিবেশন করেছেন অস্মিতা। কখনও যোগাসনের, কখনও আবৃত্তির। পাশাপাশি সাহিত্যচর্চা করেন। তাঁর কিছু লেখা ছাপা হয়েছে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। এইভাবেই কম বয়সেই নিজেকে বিভিন্নভাবে মেলে ধরেছেন অস্মিতা। বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর ছবি ও সাক্ষাৎকার।
ছাত্রী হিসেবে অস্মিতা যথেষ্ট কৃতী। বিদ্যালয়ের প্রতিটি পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হন সাফল্যের সঙ্গে। ২০২২-এ দেবেন মাধ্যমিক। জোরকদমে চলছে তার প্রস্তুতি।
আরও পড়ুন-BJP : আর নয় বিজেপি
অস্মিতা বলেন, আমার বাবা, মা, দিদি আমাকে সব ব্যাপারে উৎসাহ দেন। বাবা চাকরির পাশাপাশি শ্রুতিনাটক ও যোগাসন চর্চা করেন। দিদি শেখেন গান। প্রতিবছর ভাইফোঁটার দিন দিদি আমাকে ‘বোনফোঁটা’ দেন। সারা বছর এই মুহূর্তের অপেক্ষায় থাকি। শিক্ষক-শিক্ষিকা হিসেবে আমি পেয়েছি বহু গুণী মানুষকে। আমার বিদ্যালয় সাখাওয়াত মেমোরিয়াল সরকারি উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়া নাগ মহাপাত্র আমাকে খুবই স্নেহ করেন। বিভিন্ন কাজে আমি তাঁর উৎসাহ এবং সুপরামর্শ পেয়েছি। এঁদের প্রত্যেকের আশীর্বাদকে সঙ্গে নিয়েই আমি আগামী দিনে এগিয়ে যেতে চাই।