প্রতিবেদন : আদিবাসীদের সার্বিক উন্নয়নে বদ্ধপরিকর রাজ্য সরকার। সে কারণেই বাম আমলের তুলনায় তাঁর মা মাটি মানুষের সরকার আদিবাসী উন্নয়নে ১০০ শতাংশ বাজেট বাড়িয়েছে। আগামী দিনেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, বাম আমলে আদিবাসীদের জন্য বরাদ্দের পরিমাণ ছিল মাত্র ১৬০ কোটি। তাদের জন্য আলাদা কোনও দফতরও ছিল না। সেখানে বর্তমানে দেড় হাজার কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ করা হয় বলে তিনি জানান। শুক্রবার উত্তরবঙ্গ সফর শেষে রাজারহাটের আদিবাসী ভবনে বিরসা মুন্ডার ১৫০ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই তিনি বলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারের হাত ধরেই এরাজ্যের আদিবাসীরা অরণ্যের অধিকার ফিরে পেয়েছে। যে অধিকারের জন্য ইংরেজ শাসকের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিলেন বিরসা মুন্ডা। আদিবাসী সমাজের কল্যাণে রাজ্য সরকারের গৃহীত প্রকল্প ও পদক্ষেপের কথা মুখ্যমন্ত্রী ওই অনুষ্ঠানে বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন-যোগীরাজ্যে হাসপাতালে ভয়াবহ আগুন, মৃত ১০ সদ্যোজাত
তিরন্দাজি অ্যাকাডেমির সাফল্যের কথা তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গর্ব করে বলতে পারি, আগামিদিনে এরা অলিম্পিক জিতবে। ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস জানান, মুখ্যমন্ত্রী যে স্বপ্নের অ্যাকাডেমি তৈরি করেছেন, তাতে আমাদের একজন কৃতী ছাত্র জুয়েল সরকার ইন্ডিয়া টিমে রয়েছে। ট্রায়ালে প্রথম হয়েছে। স্কুল গেমসে ৩৩ জনের বাংলা টিম ২৩ জন ঝাড়গ্রাম অ্যাকাডেমি থেকে নির্বাচিত হয়েছে। অরূপ বিশ্বাস যখন একথা বলছিলেন, তখন মঞ্চের সামনেই ছিল ঝাড়গ্রামের কৃতী খুদে খেলোয়াড়রা। তাদের উদ্দেশ করেই বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, স্যালুট টু দেম। এদের যেন কোনও অসুবিধা না হয়। কোনও পরিকাঠামোর অভাব যেন না হয়। আমি চাই আগামী দিন এরাই অলিম্পিক জয় করবে। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা ছৌ অ্যাকাডেমি তৈরি করেছি, আদিবাসী পড়ুয়াদের জন্য ৩১০টি হস্টেল বানানো হয়েছে। আগে আদিবাসী উন্নয়নের জন্য কোনও দফতর ছিল না। এখন আদিবাসী উন্নয়নে বরাদ্দ বেড়েছে। সাঁওতালি ভাষাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, সারনা সারি ধর্মকে কেন্দ্রীয় সরকার স্বীকৃতি দিক।
আদিবাসীদের জমির পাট্টা দেওয়া, বনজ সম্পদের উপর আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাঁর সরকারই মাওবাদী অধ্যুষিত জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়েছেন, জঙ্গলের অধিকার জঙ্গলের অধিবাসীদের থাকা উচিত। বিরসা মুন্ডা যেগুলো বলতেন আমরা এখন সেগুলো করেছি। বিরসা মুন্ডার আন্দোলন দেখে আজকের প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হয়। জঙ্গল আগে ছিল রক্তাক্ত, ক্ষুধার্ত, শোষিত। আমরা এখন জঙ্গলে শান্তি ফিরিয়ে দিয়েছি। এদিন আদিবাসী সম্প্রদায়ের হাতে মুখ্যমন্ত্রী যেমন ধামসা, মাদল তুলে দেন তেমনই ক্রীড়াক্ষেত্রে তাঁদের অসামান্য কৃতিত্বের কথা উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে তিনি ঘোষণা করেন, কলকাতার পাশাপাশি রাজ্য জুড়ে সপ্তাহব্যাপী বিরসা মুন্ডার জন্মের সার্ধশতবর্ষ উৎসব পালিত হবে। এদিন থেকে শুরু হওয়া অনুষ্ঠান চলবে আগামী ২১ নভেম্বর পর্যন্ত।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
আগামী প্রজন্মের কাছে বিরসা মুন্ডার অবদানের কথা তুলে ধরতেই রাজ্যের তরফে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামের লড়াইয়ে উজ্জ্বল নাম বিরসা মুন্ডা।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তাঁর আপসহীন সংগ্রামের জন্যই তিনি বিরসা ভগবান নামে পরিচিত। মানুষ যাতে অনুপ্রাণিত হন, সেদিকে প্রথম থেকেই জোর দিয়েছে আমাদের সরকার।