আজারবাইজানের বাকু থেকে আশিস গুপ্তর বিশেষ প্রতিবেদন: জলবায়ু সম্মেলনের শুরুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের নেতা জন ডি পোডেস্টা নির্মল বিকল্প জ্বালানিতে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা কতটা অসাড় শনিবারেই তা স্পষ্ট হয়ে যায় সে দেশের ভাবী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে। ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত বাকু সম্মেলনে আসা পরিবেশ আন্দোলন কর্মীদের হতাশ করে তুলেছে। তাঁরা মনে করছেন, এতদিনকার সব উদ্যোগ ও পরিশ্রম পণ্ড হতে চলেছে। ট্রাম্প তাঁর সরকারের জ্বালানিমন্ত্রী করেছেন সেদেশের জীবাশ্ম জ্বালানি ও প্রাকৃতিক গ্যাস শিল্পের উদ্যোগপতি ক্রিস রাইটকে। এই নিয়োগ পরিবেশকর্মীদের জন্য বড় ধাক্কা। জলবায়ু সম্মেলন চলাকালীন ট্রাম্পের এই নিয়োগ বিশ্বব্যাপী পরিবেশ আন্দোলনকর্মীদের দাবি ও চাহিদার বিপ্রতীপে মার্কিন প্রশাসনের মনোভাবেরই পরিচয়। এই আন্দোলনকে অতীতে ট্রাম্প ‘ধাপ্পাবাজি’ বলেছিলেন। বলেছিলেন, চিনের উসকানিতেই এসব হচ্ছে। তিনি জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের রাস্তা থেকে সরবেন না।
আরও পড়ুন-হকিতে মেয়েদের টানা পঞ্চম জয়
প্রথমবার নির্বাচিত হওয়ার পর ২০২০ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্যারিস চুক্তি থেকে বেরিয়েও এসেছিলেন। এখন আরও একবার পরিবেশ আন্দোলনের উপর পড়েছে তাঁর কালো ছায়া। দ্বিতীয় দফায় ট্রাম্পের উদয়ের কারণে পরিবেশ আন্দোলনের হাল যে এমন হতে পারে সম্ভবত তা আঁচ করেই রাষ্ট্রসংঘের শীর্ষ জলবায়ুকর্তা সাইমন স্টিয়েল এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক লড়াইয়ের নেতৃত্ব এখন চিনকেই দিতে হবে। ট্রাম্পের মোকাবিলায় শি জিনপিংয়ের চিনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, জলবায়ুর স্বার্থে চিন তার নিজস্ব লক্ষ্য স্থির করে এক শক্তিশালী নতুন অ্যাকশন প্ল্যান বা পরিকল্পনা পেশ করুক, যা উষ্ণায়ন প্রশমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। রাষ্ট্রসংঘের ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ’-এর নির্বাহী সচিব সাইমন স্টিয়েল নির্মল শক্তির প্রযুক্তি ব্যবহারে চিনের বিনিয়োগের প্রশংসা করে বলেছেন, বিশ্বের অন্যদের কাছে এই উদ্যোগ একটা উদাহরণ। সেই উদাহরণের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে আসছে তাদের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতাও। স্টিয়েল সেই সঙ্গে অবশ্য চিনকে এক সতর্কবার্তাও শুনিয়েছেন। বলেছেন গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে তাদের আরও জোরালো পদক্ষেপ করতে হবে। তারা যদি এক শক্তিশালী অ্যাকশন প্ল্যান বা জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) গ্রহণ করে তবে তা অন্য দেশের কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় বার্তা পাঠাবে। সাহসী নেতৃত্ব, অর্থায়ন, উন্নয়ন ও পরিবেশ স্থিতিশীলতা একে অপরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। স্টিয়েলের এই মন্তব্যের সময় বা ‘টাইমিং’ ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের কারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চিন-সহ বড় উন্নত দেশগুলির জলবায়ু মোকাবিলায় গতিশীল হওয়াও জরুরি। জিনপিংয়ের দেশ ইতিমধ্যেই ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বোচ্চ কার্বন নির্গমন ও ২০৬০ সালের মধ্যে শূন্য নির্গমন বা ‘জিরো এমিশন’ লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। যদিও বহু পরিবেশ আন্দোলনকর্মী মনে করেন, চিনের আরও উদ্যোগী হওয়া দরকার। তাদের উচিত ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশের নির্গমন কম করে ৩০ শতাংশ কমানোর ব্যবস্থা করা। ট্রাম্পের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবশ্যই এক্ষেত্রে চিনের প্রতিস্পর্ধী। অনেকের মতে, জলবায়ুর স্বার্থে সেই চিনকে ট্রাম্পের বিপ্রতীপে ব্যবহারের প্রচ্ছন্ন উদ্যোগ কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার মতো হতে পারে। যদিও বাকুর সম্মেলনের মঞ্চে এবিষয়ে অনেক প্রশ্নই এখনও উত্তরহীন।