প্রতিবেদন : দলীয় শৃঙ্খলায় আরও বেশি করে গুরুত্ব ও জোর দিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। শৃঙ্খলারক্ষার্থে তিনটি ক্ষেত্রে তিনটি কমিটি গড়ে দিলেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার কালীঘাটে নেত্রীর বাড়িতে জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক থেকে নেওয়া হল একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত। নেত্রীর নির্দেশ, সরকারের উন্নয়ন এবং বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে আরও সুসংহত প্রচার করতে হবে। আরও জোর দিতে হবে জনসংযোগে। মানুষের সাথে, মানুষের পাশে থেকে এবিষয়ে কাজ করবেন দলীয় নেতা-কর্মী, জনপ্রতিনিধিরা। এদিন বিকেল চারটেয় কালীঘাটে কর্মসমিতির বৈঠক শুরু হয়। প্রায় দু’ঘণ্টার কাছাকাছি এই বৈঠকে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি জানিয়েছেন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ছয় কেন্দ্রের উপনির্বাচনে মানুষের এই বিপুল রায়ের জন্য তাঁদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন নেত্রী। এছাড়াও যাঁরা ছেড়ে চলে গিয়েছেন, প্রয়াত হয়েছেন তাঁদেরও শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। জাতীয় কর্মসমিতিতে নতুন সদস্য হয়েছেন, অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মালা রায়, মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া ও জাভেদ খান।
তিনটি শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি হয়েছে সংসদ, বিধানসভা এবং দলে। সংসদের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটিতে রয়েছেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেরেক ও’ব্রায়েন, ডাঃ কাকলি ঘোষদস্তিদার, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নাদিমুল হক। বিধানসভা কেন্দ্রিক শৃঙ্খলারক্ষা কমিটিতে রয়েছেন, পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ফিরহাদ হাকিম এবং দেবাশিস কুমার ও মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটিতে রয়েছেন সুব্রত বক্সি, অরূপ বিশ্বাস, ফিরহাদ হাকিম, সুজিত বোস, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।
আরও পড়ুন: উদাসীন রেল, তার ছিঁড়ে তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে তেভাগা এক্সপ্রেস
দলীয় মুখপাত্র হলেন দিল্লির ক্ষেত্রে সাংসদ ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেরেক ও’ব্রায়েন, কাকলি ঘোষদস্তিদার, কীর্তি আজাদ, সুস্মিতা দেব এবং সাগরিকা ঘোষ। উত্তরবঙ্গের ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমে বলবেন শিলিগুড়ি কর্পোরেশনের মেয়র গৌতম দেব, সাংসদ প্রকাশচিক বড়াইক এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ। ঝাড়গ্রামের বিষয়ে বলবেন মন্ত্রী বীরবাহ হাঁসদা। চা-বাগান সংক্রান্ত ইস্যুতে বলবেন মন্ত্রী মলয় ঘটক। এছাড়াও বাংলার বিধানসভা সংক্রান্ত ইস্যুতে বলবেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, মানস ভুঁইয়া, মলয় ঘটক, ডাঃ শশী পাঁজা, রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ এবং সুমন কাঞ্জিলাল। শিল্প সংক্রান্ত বিষয়ে বলবেন, ডাঃ শশী পাঁজা এবং পার্থ ভৌমিক। গোটা বিষয়টি কো-অর্ডিনেট করবেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।
চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোনও বিষয়ে এই কমিটিগুলির কাছেই শোকজের উত্তর দিতে হবে। পরপর তিনটি শোকজের উত্তর না দিলে দল সেই ব্যক্তিকে সাসপেন্ড করবে।
এর বাইরে একগুচ্ছ কর্মসূচিও ঠিক করে দিয়েছেন নেত্রী। প্রথমেই জেলায় জেলায় তৃণমূল কংগ্রেসের ইতিহাস নিয়ে নব প্রজন্মকে অবহিত করার জন্য কর্মসূচি নিতে হবে। নেত্রীর সংগ্রাম, জীবন দর্শনের কথা তুলে ধরতে হবে তাদের কাছে। এছাড়াও মহিলাদের প্রতি নির্যাতনের জন্য রাজ্য বিধানসভায় যে অপরাজিতা বিল আনা হয়েছিল, তা এখনও পুরোপুরি আইনে পরিণত হয়নি। দল চায় অবিলম্বে এই আইন বলবৎ হোক। যে কারণে তৃণমূল মহিলা কংগ্রেস আগামী ৩০ নভেম্বর রাজ্য জুড়ে ব্লকে ব্লকে মিছিল করবে। পরদিন ১ ডিসেম্বর ওই একই ইস্যুতে হবে ধরনা ও মিটিং। এছাড়াও ১৫ জন সাংসদ আগামী ১০ ডিসেম্বরের পর রাষ্ট্রপতির কাছে সময় চেয়ে দেখা করে এবিষয়ে কথা বলবেন, স্মারকলিপি দেবেন। এর মধ্যে পাঁচজন থাকবেন মহিলা সাংসদ। চিঠি দেওয়া হবে রাজ্যপালকেও। এদিনে বৈঠকে এই বিষয়টিতে জোর দেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
এখনও পর্যন্ত তারিখ ঠিক না হলেও মানুষের সাথে মানুষের পাশে কর্মসূচি নিয়েছে দল। জনসংযোগ ও প্রচার কর্মসূচি করা হবে এই কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে। সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে দলীয় সংসদরা মূল্যবৃদ্ধি, সার, বেকারত্ব, আবাসের টাকা, ১০০ দিনের টাকা বন্ধ করা নিয়ে জোরালো আওয়াজ তুলবেন। কেন্দ্র যেভাবে রাজ্য থেকে জিএসটির টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছে অথচ রাজ্যের পাওনা দিচ্ছে না সে বিষয়ে জোরালো প্রতিবাদ ও আলোচনা চাওয়া হবে সংসদে। এছাড়াও উত্তর-পূর্বের মণিপুরে যেভাবে একের পর এক হত্যার ঘটনা ঘটছে সে বিষয়ে আলোকপাত করা হবে রাজ্যসভা ও লোকসভায়। সবমিলিয়ে এদিনের বৈঠক থেকে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়রা আগামী দিনে সাংসদ, বিধায়ক এবং দলের জনপ্রতিনিধি ও নেতৃত্বকে একটি রূপরেখা তৈরি করে দিয়েছেন, যা পথ দেখাবে গোটা দলকে।