প্রতিবেদন: লঙ্ঘিত হচ্ছে সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় স্বাধীনতা। সেইসঙ্গে চলছে অকারণ হেনস্থা। বিজেপিশাসিত অসমে খ্রিস্টানদের সংগঠন অসম ক্রিশ্চান ফোরাম (এসিএফ) এর বিরোধিতায় সরব। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, গত কয়েক বছর ধরে সংখ্যালঘু খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উপর ধারাবাহিক আক্রমণের ঘটনায় মানুষ উদ্বিগ্ন। এসিএফ মুখপাত্র অ্যালেন ব্রুকস এক বিবৃতিতে জানান, হিন্দুত্ববাদীদের প্ররোচনায় কিছু মানুষ বেছে বেছে খ্রিস্টানদের প্রতিষ্ঠান আক্রমণ করছেন। সংখ্যালঘু ধর্মাবলম্বীরা যে মূর্তি ও ছবিতে বিশ্বাসী, তা সরানোর দাবি তুলছেন। একেবারে খোলাখুলিভাবে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও ভিন্নমতকে জায়গা দেওয়ার মতো বিষয়কে খারিজ করে দেওয়া হচ্ছে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়।
আরও পড়ুন-চট্টগ্রাম-কাণ্ডে ধৃত ৯, হেনস্থা সংখ্যালঘুদেরই
এসিএফের তরফ থেকে আরও বলা হয়েছে, পুলিশ গির্জা ও ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে অসমের একাধিক জেলায় তদন্ত চালাচ্ছে। এর মধ্যে রাজ্যের মধ্য-দক্ষিণ জেলা কার্বি আংলং ও ডিমা হাসাও এবং পশ্চিম অসমের গোয়ালপাড়া ছাড়াও অন্যান্য জেলা রয়েছে। এসিএফ বলেছে, এর ফলে একটা ভয় ও হুমকির বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। এসিএফ বলেছে, এই ভয় ও হুমকির বাতাবরণের পিছনে রয়েছে ২০২৪ সালে পাশ হওয়া একটি আইন। এই আইনের নাম অসম হিলিং (প্রিভেনশন অব ইভিল) প্র্যাকটিসেস অ্যাক্ট। অর্থাৎ ‘নিরাময় (ঘৃণিত কর্ম নিষিদ্ধকরণ) আইন।’ খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা অসুস্থ, দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের জন্য যে প্রার্থনা করতেন, সেই প্রার্থনার ঐতিহ্যকে আঘাত করার লক্ষ্যেই বিজেপি শাসিত রাজ্যে এই আইন পাশ করা হয়েছে বলে মনে করছে খ্রিস্টান সংগঠনটি। তারা বলেছে, এটি সরাসরি তাদের সংবিধানগত অধিকারের ওপর একটি আঘাত। গত ফেব্রুয়ারিতে আইনটি অসমের বিধানসভায় পাশ করা হয়। বিজেপি সরকার তখন জানায়, এই প্রার্থনার উদ্দেশ্য আদিবাসী সম্প্রদায়কে ধর্মান্তরিত করা। আইনটিতে বলা হয়েছে, আইন লঙ্ঘন করলে অভিযুক্তর ১ থেকে ৩ বছর জেল, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা দুটিই হতে পারে। মধ্য অসমের গোলাঘাট জেলায় প্রাঞ্জল ভূঁইয়া নামের এক খ্রিস্টান গ্রামবাসীকে সম্প্রতি এই আইনের আওতায় গ্রেফতার করে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়। এসিএফ জানিয়েছে, বর্তমানে বিজেপিশাসিত অসমে খ্রিস্টানদের উপর বড় ধরনের আক্রমণ নেমে আসছে। সম্প্রতি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের এক নেতা ডিমা হাসাও-এর হাফলং-এ চার্চের বিরুদ্ধে আদিবাসী–অধ্যুষিত অঞ্চলে মাদক, চোরাচালান ও ব্যবসার অভিযোগ এনেছে। ডিমা হাসাও একটি আদিবাসী–অধ্যুষিত জেলা। এসিএফ বলেছে, এই ঘৃণ্য ও মিথ্যা অভিযোগ খ্রিস্টান সম্প্রদায়কে ব্যথিত করেছে। কিন্তু লজ্জার বিষয় হল, এই ঘটনার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।