প্রতিবেদন: কেন্দ্রের নির্লজ্জ বঞ্চনা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেখানো পথে বাংলায় শিল্পায়ণ কীভাবে এগিয়ে চলেছে অপ্রতিহত গতিতে, তার স্পষ্ট ছবি রাজ্যসভায় তুলে ধরলেন তৃণমূল সাংসদ সাকেত গোখেল। শুক্রবার রাজ্যসভার জিরো আওয়ারে সাকেত গোখেল রীতিমতো তথ্য এবং পরিসংখ্যান দিয়ে দেখিয়ে দিলেন, বাংলা মানেই বাণিজ্য। শিল্প এবং বাণিজ্যের এক বাস্তবসম্মত মেলবন্ধন কেমন করে সম্ভব হয়েছে জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে। একইসঙ্গে তুলে ধরলেন ১০০ দিনের শ্রমিকদের প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনার কথাও। উদ্বেগপ্রকাশ করলেন ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সংস্থায় কাজের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং কর্মসংস্কৃতি নিয়েও। তুলে ধরলেন কীভাবে দুর্ব্যবহার, বঞ্চনা এবং মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন কর্মীরা। এই প্রসঙ্গে দুটি ঘটনার কথা তুলে ধরেন তিনি। জুলাইতে এক বৃহৎ বহুজাতিক কোম্পানির ২৬ বছরের মহিলা কর্মীর মৃত্যু হয় আচমকাই। তাঁর মায়ের অভিযোগ, অতিরিক্ত কাজ করানোর ফলেই মৃত্যু হয়েছে মেয়ে। একই গত ফেব্রুয়ারিতে মুম্বাইয়ের এক সাংবাদিকের হৃদরোগে মৃত্যুকে ঘিরেও একই ধরনের প্রশ্ন ওঠে।
আরও পড়ুন-বিদ্যাধরীর উপর তৈরি হচ্ছে কংক্রিটের সেতু
বাংলায় সফল শিল্পায়ণের বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে রীতিমতো পরিসংখানও পেশ করলেন সাকেত। জানালেন, বাংলায় এই মুহূর্তে সক্রিয় সংস্থার সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ ৪৫ হাজার। অজস্র মানুষের রুজি রোজগারের পথ দেখাচ্ছে মূলত এইসব শিল্প এবং বাণিজ্যিক সংস্থা। শুধুমাত্র তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রেই কর্মরত রয়েছেন প্রায় ২ লক্ষ ৬০ হাজার মানুষ। কিন্তু সবচেয়ে বেদনাদায়ক বিষয়, মনরেগার প্রকল্পে ১০০ দিনের কাজে নিযুক্ত শ্রমিকরা তাঁদের ন্যায্য পাওনা পাচ্ছেন না। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দিনরাত পরিশ্রম করেও কেন্দ্রের নির্লজ্জ আচরণের শিকার হতে হচ্ছে তাঁদের। কেন্দ্রের পক্ষ থেকে তাঁদের প্রাপ্তির খাতা কার্যত শূন্য। বকেয়ার অঙ্ক ৮৩৭৭ কোটি টাকা। অথচ বাণিজ্যিক ক্ষেত্রের তুলনায় এই শ্রমিকদের কাছ থেকে আয়কর বাবদ অনেক বেশি অঙ্কের আয়কর আদায় করে কেন্দ্র। শ্রমিকদের এভাবে বঞ্চিত করে মোদির সরকার যে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করে চলেছে তা সাকেতের যুক্তিতেই স্পষ্ট।
এদিন তৃণমূলের আর এক সাংসদ সুস্মিতা দেবও রাজ্যসভায় তুলে ধরেন বাংলায় অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পোদ্যোগে মহিলাদের সফল ভূমিকার কথা। এমএসএমই-র মেরুদণ্ড হিসাবে কীভাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে চলেছেন মহিলারা, তাও ব্যাখ্যা করেন তিনি। তথ্য এবং পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি জানান, বাংলায় গত ১০ বছরে ৫৭ লক্ষ নতুন এমএসএমই মোট ১ কোটি ৩০ লক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে।
আরও পড়ুন-জঙ্গলমহলের সবুজদ্বীপে ইকো পার্ক নয়া রূপে
লক্ষণীয়, ফেব্রুয়ারির গোড়াতেই রাজ্যে আয়োজিত হবে বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট৷ এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের শিল্প সমৃদ্ধির বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে বিজেপি৷ ভোটের ময়দানে কলকে না মেলার পরে এবার বিজেপির চক্রান্ত হল রাজ্যের শিল্পমহল সম্পর্কে গোটা দেশের সামনে ভুল বার্তা তুলে ধরা৷ তাদের এই চক্রান্ত রুখতে এবার সংসদের ভিতরে ও বাইরে সরব হবেন তৃণমূল সাংসদরা৷ দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে এবার সংসদের দুটি কক্ষ লোকসভা ও রাজ্যসভা এবং তার বাইরে সর্বভারতীয় প্রেক্ষাপটে তুলে ধরা হবে তৃণমূল সরকারের কার্যকালে বাংলার শিল্প সমৃদ্ধির বাস্তবোচিত খতিয়ান৷ ‘বেঙ্গল মিনস বিজনেস’- এই স্লোগান যে আক্ষরিক অর্থেই বাস্তব, এবার তা প্রমাণ করা হবে যুক্তি দিয়ে। শুক্রবার এই প্রসঙ্গেই দলের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও ব্রায়েন৷ তাঁর দাবি, ২০১১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বাণিজ্য ও শিল্পে অসাধারণ অগ্রগতি করেছে৷ ব্যবসার অনেক ক্ষেত্রেই বাংলা আজ এক নম্বরে৷ এদিন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাগরিকা ঘোষ ট্যুইট করে রাজ্যের শিল্প সমৃদ্ধির সংক্ষিপ্ত খতিয়ান তুলে ধরে বিজেপিকে এক হাত নিয়েছেন৷ সাগরিকার দাবি, ২০২১ সালের স্কচ রিপোর্ট অনুযায়ী ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস সেক্টরে পশ্চিমবঙ্গ গোটা দেশের মধ্যে সেরা৷ বাংলায় ১ লক্ষ ৪৫ হাজার সংস্থা আছে, যারা ব্যবসা চালাচ্ছে পুরোদমে৷ দেশের মধ্যে চতুর্থ রাজ্য হল পশ্চিমবঙ্গ, যেখানে এত বেশি সংখ্যায় কোম্পানি তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছে৷