বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতনের তীব্র নিন্দা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । একদই সঙ্গে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির প্রভাবে এপার বাংলাতেও যাতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সৌভ্রাতৃত্বের পরিবেশ নষ্ট না হয় তা নিশ্চিত করতে রাজ্যবাসীকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সোমবার বিধানসভায় বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত বিবৃতি দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কোন সম্প্রদায় নয় দাঙ্গা করে সমাজবিরোধীরা। এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক উস্কানিরও অভিযোগ তোলেন তিনি। বলেন, কোনও একটি রাজনৈতিক দল ভুয়ো ভিডিও ছড়িয়ে আগুন লাগানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে যাঁরা রাজনীতি করতে চাইছেন, তাঁরা রাজ্যের ক্ষতি করছেন, ক্ষতি করছেন ওপার বাংলারও। তবে তাঁর ভাষণে নির্দিষ্ট কোনও রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নাম করেননি । এ ব্যাপারে কয়েকটি গণমাধ্যমের ভূমিকারও সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী।বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মানুষ যেভাবে এক সুরে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন, তাঁর প্রশংসা করেন মুখ্যমন্ত্রী। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির জেরে এপার বাংলাতেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সৌভ্রাতৃত্বের পরিবেশ যাতে অক্ষুন্ন থাকে, তা সুনিশ্চিত করার জন্য রাজ্যের মানুষের কাছে আহ্বান জানান ।
মুখ্যমন্ত্রী আজ তাঁর বক্তব্যে বাংলা দখল নিয়ে পাল্টা হুঁশিয়ারিও দেন। দিন কয়েক আগে বাংলা-বিহার ওড়িশা দখলের ডাক দিয়েছিলেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভি। বাংলাদেশের প্রাক্তন সেনা কর্মীরাও চার দিনের মধ্যে কলকাতা দখলের হুমকি দেন। অন্যদিকে কলকাতা এবং আগরতলার পাশাপাশি সেভেন সিস্টার্স দখল করার হুমকি দেন বাংলাদেশ তিসরাই ইনসাফ পার্টির নেতা মিনাজ প্রধান। এ প্রসঙ্গে তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী। কেউ যদি কলকাতা বা বাংলা দখল করতে আসে, তাহলে এদেশের মানুষ মোটেও চুপচাপ বসে ললিপপ খাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিধানসভায় তিনি বলেন, কেউ কলকাতা দখলের কথা বলছেন। কেউ কেউ আবার পশ্চিমবঙ্গ, বিহার এবং ওড়িশা ফেরত চাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। সেই ক্ষমতা নেই আপনাদের। আপনারা বলবেন, দখল করবেন, আর আমরা বসে ললিপপ খাব, সেটা ভাববেন না। আমরা সচেতন, আমরা সক্রিয়। আমরা ধৈর্যের পরীক্ষা দিই। রবীন্দ্রনাথই আমাদের তা শিখিয়ে গিয়েছেন। আমরা অখন্ড ভারতবর্ষ। বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নেই। আমরা যেন অন্য কোনও উস্কানিতে পা না দিই।” মুখ্যমন্ত্রীর আরও বলেন, বাংলাদেশ থেকে অনেকেই এখানে আসতে চাইছেন। গরিব মানুষ আসতে পারছেন না। কিন্তু সেটা দেখছে বিএসএফ। আমরা এই নিয়ে মন্তব্য করব না। সীমান্ত আমাদের দেখার বিষয় নয়। মমতা স্পষ্ট করে দেন, ওপার বাংলা থেকে আসা নিপীড়িত মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি মেনে চলবেন।
সকলের উদ্দশে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, কেউ কোনও প্ররোচনামূলক কথা বলবেন না। পরিস্থিতি খারাপ হয়, এমন কোনও মন্তব্য না করার আবেদন জানান তিনি। বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি বাংলাদেশ সফরে গিয়েছেন। এই সফরের কথা উল্লেখ করে বিদেশ সচিবের দৌত্য সফল হবে বলে আশাপ্রকাশ করেন মমতা। তিনি বলেন, আসুন আমরা দেখিয়ে দিই, এপার বাংলা দেখিয়ে দিক জাতীয়তাবোধ, মমত্ববোধ, স্নেহবোধ। কেউ বিচ্ছিন্ন করতে এলে, প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। আর যারা বলছে দখল করবে, তাদের বলব সুস্থ থাকুন, ভাল থাকুন।”