নয়াদিল্লি : তৃণমূল কংগ্রেসের দুই সাংসদ সহ ১২ সাংসদকে বহিষ্কারের ঘটনায় ক্ষোভ ঢেকে রাখল না তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্যসভায় দলের বর্ষীয়ান নেতা সুখেন্দুশেখর রায় কেন্দ্রের স্বৈরাচারী ও অগণতান্ত্রিক মনোভাবের সমালোচনা করে পরপর যুক্তি পেশ করে দেখান সংবিধান নিয়ে কীভাবে ছেলেখেলা করছে কেন্দ্রের সরকার। সুখেন্দুশেখরের যুক্তি
আরও পড়ুন-মোদি সরকারের একটাই নীতি, আধিপত্যবাদ
১. কোনও সাংসদের বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ থেকেও থাকে তাহলে তদন্ত কেন হবে না।
২. কমিটি নাকি তৈরি হয়েছিল। কমিটিতে কারা ছিলেন, তাদের কী মত, কেউ জানেন না।
৩. যাঁর বা যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, কেন আত্মপক্ষ সমর্থনে তাঁদের বক্তব্য শোনা হলো না? সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছে বিজেপি সরকার।
আরও পড়ুন-হাওড়ায় চালু হচ্ছে চেয়ারম্যান অন কল
৪. যাঁদের সাসপেন্ড করা হয়েছে, তাঁদের একজনেরও বক্তব্য শুনতে চাওয়া হয়নি। এটা অগণতান্ত্রিক, বেআইনি ও অসাংবিধানিক।
৫. সংসদ চলায় বাধা দেওয়ার যুক্তি ক্রমশ ছেঁদো হয়ে গিয়েছে। যারা একসময় দিনের পর দিন সংসদ বয়কট করত, সংসদ চলতে দিত না, তাদের মুখে এই অভিযোগ শোভা পায় না। যদিও তৃণমূল কংগ্রেস সংসদের কাজে বাধা তৈরি করতে চায় না।
৬. এক্ষেত্রে সুখেন্দুশেখর ২০১৪ সালের ২৪ ডিসেম্বরের লোকসভার তৎকালীন বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজের বক্তব্য তুলে ধরেন। সুষমা সে সময় সংসদ অচল করার প্রসঙ্গে বলেছিলেন, সংসদ অচল করে কাজ করতে না দেওয়াটাও বিরোধীদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আর একটা রূপ।
আরও পড়ুন-নিউটাউনে এবার স্মার্ট ফুটপাথ
৭. সুখেন্দুশেখর ২০১২ সালের ২০ অগাস্ট তৎকালীন রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলির বক্তব্যও তুলে ধরেন। সে সময় সংসদ অচল করার বিষয় নিয়ে জেটলি বলেছিলেন, সংসদ চলতে না দেওয়াও বিরোধী রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
৮. প্রশ্ন হল, গণতন্ত্রের পীঠস্থানে যদি বিচার না পাওয়া যায়, তাহলে কোথায় পাওয়া যাবে, কফি হাউসে না রাস্তায়?
৯. শান্তা ছেত্রী বিরোধিতা করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। সেদিন অসুস্থ শান্তা ছেত্রীকে সাসপেন্ড করা হয়। গণতন্ত্রের পরিহাস, শীতকালীন অধিবেশনে এসে ফের সাসপেনশন! দোলা সেন শ্রমিক নেত্রী। শ্রমিকদের হয়ে কথা বলেন। তিনি তো প্রতিবাদ করবেনই।
১০. কেন এই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ নেই? কেন সেই সময় রাজ্যসভা টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল? জানাতে হবে সংসদকে।
আরও পড়ুন-বিরাট এলে কী হবে, আমি জানি না, মুম্বই টেস্ট নিয়ে উদাসীন অধিনায়ক
১১. তৃণমূল কংগ্রেস সংসদের কাজে বাধা তৈরির পক্ষে নয়। কিন্তু সরকারকে মনে রাখতে হবে, শুধু তাঁরাই মানুষের ভোটে নির্বাচিত নন, বিরোধীরা ভোটে জিতে এসেছেন। বিগত কয়েক বছর ধরে অগণতান্ত্রিক বিজেপি সরকার সংবিধানের ২৬৭ ধারা রাজ্যসভায় প্রয়োগ করছে না।
১২. রাজ্যসভার ২৬৭ ধারাতেই বলা আছে প্রয়োজনে সভার সব কাজ বন্ধ রেখে একটি বিষয়ের উপর আলোচনা করা যেতে পারে, যে বিষয় গোটা দেশকে ভাবাচ্ছে। অন্যদিকে লোকসভার ক্ষেত্রে সভা মুলতবি রেখে কোনও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।
১৩. ইউএপিএ থেকে শুরু করে দেশে একের পর এক কালা কানুন যথেচ্ছভাবে প্রয়োগ করছে সরকার। এটাই এখন দেশের গণতন্ত্র। এই ধারা চলতে থাকলে দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের দফারফা হবে। প্রতিবাদে গর্জে উঠতে হবে সকলকে। সংসদের বুকেই গণতন্ত্রকে হত্যা করছে বিজেপি।